প্রতিবেদন : এই বাংলার বিরোধীদের নির্লজ্জতা চরম সীমায় পৌঁছেছে। অতীতে নিজেদের কৃতকর্ম এরা ভুলে যায়। বর্তমান সরকার কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করলে তাকে সাধুবাদ জানানোর রাজনৈতিক হিম্মতও নেই।
শুক্রবার। দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে তিনজন মহিলাকে দণ্ডি কেটে জেলা তৃণমূল পার্টি অফিসে প্রবেশ করতে দেখা যায়। তাঁরা ২৪ ঘণ্টা আগেই বিজেপিতে যোগ দিয়ে আবার তৃণমূলে ফিরে আসেন। ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে কড়া ভাষায় ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অন্যায় ঘটনা। কিন্তু বিচ্ছিন্ন বিষয়। এই বিষয় যাতে ভবিষ্যতে না তৈরি হয় তার জন্য দক্ষিণ দিনাজপুর তৃণমূল মহিলা কংগ্রেসের (Trinamool Congress) জেলা সভানেত্রীর পদ থেকে প্রদীপ্তা চক্রবর্তীকে সরিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্নেহলতা হেমব্রমকে। অর্থাৎ শুধু কড়া ভাষায় বিষয়টির নিন্দা করাই নয়, কড়া ব্যবস্থা নেওয়া। যদিও যাঁরা দণ্ডি কাটছিলেন তাঁদের পিছনে তৃণমূলের কোনওরকম প্ররোচনার চিহ্ন ছিল না। ভিডিওতে দেখা গিয়েছে তিনজনই ফাঁকা রাস্তায় নিজেরাই দণ্ডি কাটছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও তৃণমূল কংগ্রেস জেলা মহিলা সভানেত্রীকে এতটুকু রেয়াত করেনি।
প্রশ্ন ঠিক এইখানেই। বিরোধী দলনেতা এবং বাংলার পরিচিত গদ্দার একটি ট্যুইট করেছেন। সেখানে এই ঘটনার নিন্দা করা হয়েছে। কিন্তু এমন নির্লজ্জ, বেহায়া বিরোধী দলনেতা কম দেখা গিয়েছে। কয়েক মাস আগেই লালগড়ে শহিদ দিবসের শেষে প্রকাশ্যে ক্যামেরায় বলেছিলেন, বীরবাহা আমার পায়ের জুতার তলায় থাকে। তাঁর মন্তব্য তাঁর সাংস্কৃতিক পরিচয় বলে দেয়। কিন্তু একবারের জন্য ক্ষমা চাননি। দলের কেউ এতটুকু দুঃখপ্রকাশ করেনি। শুধু বীরবাহা কেন, কুকথায় বিজেপি পারলে মহাভারত লিখে ফেলে। দলের প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মা দুর্গার বংশ পরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলতে তুলতে শেষে প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন, মা দুর্গার বাপের নাম কী? দিলীপও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ক্ষম-টমা-দুঃখপ্রকাশ তার সংবিধানে নেই। শুধু কি তাই? ৭২ ঘণ্টা আগে বাংলা থেকে কেটে পড়া কৈলাস বিজয়বর্গীয় কী বললেন? বললেন, মেয়েরা যে পোশাক পরে বাইরে বের হয় তা অশালীন। মেয়েরা দেবী কিন্তু পোশাক দেখে দেবী বলতে ইচ্ছে যায় না। সব এক এক জন শূর্পণখা। গোটা দেশ জুড়ে ভিডিও দেখানো হল। কিন্তু কৈলাসেরও কিছু হল না। নির্লজ্জ বিজেপিও একবারের জন্য বলল না, এই মন্তব্য দলের মন্তব্য নয়। এটাই আসলে বিজেপির সংস্কৃতি।
আরও পড়ুন-বাসের উইন্ডস্ক্রিনে রুট লেখা বোর্ড নিয়ে নয়া নির্দেশিকা জারি করল কলকাতা ট্রাফিক পুলিশ
কটূকথা বলতে পিছপা হয়নি বামেরা। বর্ষীয়ান বাম নেতাদের এখন শরীরের মধ্যে নীতি-নৈতিকতা কিলবিল করছে। উদাহরণ দিতে হলে হাতের সামনে ডজন খানেক সাজানো রয়েছে। বলছি শুধু দুটি ঘটনার কথা। ১৯৯০ সাল। বানতলায় ৩ স্বাস্থ্যকর্মী এবং ইউনিসেফের এক মহিলাকর্মীকে গণধর্ষণ করে বাম দুষ্কৃতীরা। দু’জনের মৃত্যুও হয়। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, ওরকম তো কতোই হয়! তাকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন প্রয়াত সাংসদ অনিল বসু। তৎকালীন বিরোধী নেত্রী ফেলানী খাতুনের ধর্ষণ নিয়ে আন্দোলন করছিলেন। অনিল বসু বলেছিলেন, মমতাকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে কালীঘাটে পাঠানো উচিত।
এরা বলেন, এরা সমালোচনা করেন, এরা ট্যুইট করেন। কিন্তু একজনও এসব ঘটনার পর ক্ষমা চাওয়া তো দূরের কথা দুঃখপ্রকাশ করেনি। তৃণমূল কংগ্রেস সম্ভবত এইসব রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম। কোনও নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে শুধু যে ভুল স্বীকার করা হয় তাই নয়, বালুরঘাটের ঘটনার পর নিন্দা করে জেলার তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress) সভানেত্রীকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মাথায় রাথতে হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পিছিয়ে পড়া জনজাতিকে অধিকার দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি কাজ করেছে। জঙ্গলকন্যা, আদিবাসী, সাঁওতাল প্রত্যেক জনজাতি শিক্ষাবিস্তার থেকে সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য পদক্ষেপ করেছে। তাদের প্রতিনিধিকে রাজ্য মন্ত্রিসভায় স্থানও দিয়েছেন। ফলে আর যাই হোক নির্লজ্জ বিরোধীরা তর্জনী তাক করার আগে দেখুন তাদের দিকে হাতের তিনটে আঙুল তাক করে রয়েছে। দিনে কালো চশমা পরে থাকলে কী দিন রাত হয়ে যাবে?