নয়াদিল্লি : আজ দিল্লির জাহাঙ্গিরপুরীর ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতিনিধি দল। তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এই জরুরি সফর। বিজেপির মদতে যেভাবে খোদ রাজধানীতে গরিব মানুষদের জীবন- জীবিকায় আঘাত হানা হচ্ছে এবং ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে সাধারণ মানুষকে হেনস্তা করা হচ্ছে তার প্রকৃত ছবি দেশের সামনে তুলে ধরতেই বিপন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে ঘটনার রিপোর্ট নেবেন তৃণমূল প্রতিনিধিরা।
আরও পড়ুন-দিল্লিতে ওমিক্রনের ৯ উপ-প্রজাতির হদিশ!
এদিকে বৃহস্পতিবার জাহাঙ্গিরপুরীর উচ্ছেদ প্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ বহাল রাখল সুপ্রিম কোর্ট। সর্বোচ্চ আদালতের এই নির্দেশে মুখ পুড়েছে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের। অন্যদিকে, বুধবার উচ্ছেদের নির্দেশ জারির পরেও যেভাবে কয়েক ঘণ্টা বুলডোজার দিয়ে ভাঙচুর চালিয়ে গিয়েছে বিজেপি পরিচালিত পুরসভা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের নিয়ন্ত্রণে থাকা দিল্লি পুলিশ, তাকে ‘গুরুতর বিষয়’ বলে মন্তব্য করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। দুই সপ্তাহ পরে মামলাটির পরবর্তী শুনানি হবে। এর মধ্যে উত্তর দিল্লি মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে উচ্ছেদের নির্দেশ সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র এবং লিখিত বক্তব্য আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এল নাগেশ্বর রাও এবং বি আর গাভাই-এর বেঞ্চে বৃহস্পতিবার মামলার শুনানি হয়।
আরও পড়ুন-মানবাধিকারের নামেই গাত্রদাহ? শাহের মন্তব্যে নিন্দা
শুক্রবার দেশের রাজধানীতে গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার তথ্যানুসন্ধান এবং জাহাঙ্গিরপুরীতে বুলডোজার নামিয়ে বেনজির ভাঙচুর ও উচ্ছেদ সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট নিতে সংসদীয় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। এই প্রতিনিধি দলে থাকবেন সাংসদ ও তৃণমূল কংগ্রেসের জাতীয় মুখপাত্র ডাঃ কাকলি ঘোষদস্তিদার, সাংসদ শতাব্দী রায়, সাংসদ সাজদা আহমেদ, সাংসদ অপরূপা পোদ্দার, সাংসদ মালা রায় ও প্রাক্তন সাংসদ অর্পিতা ঘোষ। জাহাঙ্গিরপুরীর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে দলের উচ্চতর নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা শুক্রবার দুপুর দুটো নাগাদ তাঁদের যাওয়ার কথা। তৃণমূল সহ বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন এবং কার্যালয় থেকে অনতিদূরে কীভাবে বিনা নোটিশে গরিব মানুষের ঘরবাড়ি দোকানপাট ভেঙে উচ্ছেদ করা হল? প্রসঙ্গত, এর আগে উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর ও হাথরাসের মতো ঘটনাতেও প্রকৃত পরিস্থিতি জানতে বহু বাধা উপেক্ষা করে গিয়েছিল তৃণমূল প্রতিনিধি দল।
আরও পড়ুন-মারিউপোল স্বাধীন ঘোষণা পুতিনের, ওখান থেকে একটা মাছিও যেন গলতে না পারে, রুশ সেনাকে নির্দেশ
উল্লেখ্য, বুধবার সকালে বিজেপি পরিচালিত নগরনিগমের ৯টি বুলডোজার নিয়ে দিল্লি পুলিশের সাহায্যে জাহাঙ্গিরপুরীর সি ব্লকে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। এই উচ্ছেদ অভিযানের বিরুদ্ধে আদালতে জরুরি ভিত্তিতে আবেদন জানায় জমিয়ত-উলেমা-ই -হিন্দ নামের সংগঠন। আবেদনের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী দুষ্যন্ত দাভে’র বক্তব্য শোনার পর প্রধান বিচারপতি এন ভি রমান্না তৎক্ষণাৎ উচ্ছেদ বন্ধের নির্দেশ দেন। বেলা ১১টা নাগাদ শীর্ষ আদালতের উচ্ছেদ বন্ধের নির্দেশ মিউনিসিপ্যাল কর্তৃপক্ষকে জানানো সত্ত্বেও উচ্ছেদ চলতে থাকে। তখন আবার প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হন আইনজীবীরা। উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়নি শুনে বিস্মিত প্রধান বিচারপতি আদালতের রেজিস্টারকে নির্দেশ দেন দ্রুত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন ও দিল্লি পুলিশকে নির্দেশের কপি পাঠানোর জন্য। তারপর চাপে পড়ে অভিযান বন্ধ রাখে নগরনিগম।
আরও পড়ুন-পর্যটনে আগ্রহ প্রকাশ কেনিয়ার
বৃহস্পতিবার শুনানির সময় আইনজীবীরা সেই ঘটনার কথা উল্লেখ করেন। তা শুনে বিচারপতি নাগেশ্বর রাও বলেন, আমাদের সিদ্ধান্তের পরেও উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি গুরুতর। এটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করব। আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে শীর্ষ আদালতে অভিযোগ করা হয়, বিজেপি নেতার প্ররোচনাতেই হিংসা-বিধ্বস্ত এলাকায় রাতারাতি বুলডোজার দিয়ে উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এই অভিযান কোনও নোটিশ ছাড়াই শুরু হয়েছিল সমাজের একটি বিশেষ অংশকে ‘টার্গেট’ করার লক্ষ্যে। আদালতে অভিযোগ ওঠে, সমাজের একটি বিশেষ অংশকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে।