একটি ছোট উপন্যাস ও দুটি রহস্য গল্প। দুই মলাটবন্দি। কালি কলম মনন থেকে প্রকাশিত হয়েছে অনীশ ঘোষের বই ‘খুদে গোয়েন্দা ও ভূতেদের কীর্তি’। ভূমিকায় শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। বইটি যাতে ছোটদের কাছে সমাদৃত হয়, শুভকামনা জানিয়েছেন। ‘পোড়ো বাড়ির জোড়া ভূত’ একটি রহস্য উপন্যাস। তিন সাহসী বন্ধু— রিন্টু, সোনাই আর বাপ্পাকে নিয়ে দানা বেঁধেছে কাহিনি। এর আগেও তারা কয়েকটি রহস্যভেদ করে স্কুল এবং পাড়ায় অনেকের বাহবা আদায় করেছে। আবারও রহস্যের নেশায় বেরিয়ে পড়েছে। ট্রেনে এবং বাসে। তাদের সফরসঙ্গী সাধারণ পাঠকরাও। যারা রহস্য ভালবাসে। কাহিনি যত এগিয়েছে, নতুন নতুন চরিত্র ভিড় করেছে। রহস্য লুকিয়ে রয়েছে গ্রামের একটি পোড়ো বাড়ির মধ্যে। পোড়ো বাড়িটির বর্ণনা দিয়েছেন লেখক— ‘বড় বড় আগাছা আর ঝোপঝাড়ে ভরা অনেকটাই বিস্তৃত একটা নির্জন মাঠের একেবারে শেষ প্রান্তে প্রকাণ্ড বাড়িটা— জীর্ণ, প্রায় ভেঙে পড়া দশা। পলেস্তরা খসা কালচে ইট বেরিয়ে আছে সর্বত্র।’ সেখানে কি ভূত আছে? নাকি অন্য কিছু? কীভাবে উন্মোচিত হবে রহস্য? জানার জন্য পড়তে হবে বইটি। এটুকু বলা যায়, কাহিনির মধ্যে রয়েছে অদ্ভুত টান। বাঁক নিয়েছে নানা সময়। ভাষা প্রাঞ্জল। ফলে পড়তে ভাল লাগে। রিন্টু, সোনাই, বাপ্পার নতুন অভিযানের অপেক্ষায় রইলাম। এর পাশাপাশি ‘মামাইয়ের গোয়েন্দাগিরি’ এবং ‘পাহাড়টিলায় আতঙ্ক’ গল্প দুটিও চমৎকার লাগল। মূলত ছোটদের জন্য লেখা। তবে বড়দেরও ভাল লাগবে। ৬৪ পৃষ্ঠার বই। প্রচ্ছদশিল্পী শংকর বসাক। দাম ১৮০ টাকা।
আরও পড়ুন-রবি-সোমে রাজ্য জুড়ে বৃষ্টির পরই নামবে পারদ
ভাস্কর রায়ের বই ‘পথের ছড়া’। প্রকাশিত হয়েছে নন্দী বুক্স থেকে। বইটি দ্বিভাষিক। বাংলার পাশাপাশি আছে ইংরেজি ছড়া। প্রতিটি ছড়াই আকারে ছোট। মাত্র কয়েক পঙক্তির। কিন্তু তার মধ্যে লেগে রয়েছে আনন্দের গুঁড়ো। উঁকি দিয়ে যায় হারিয়ে যাওয়া শৈশব, ফেলে আসা কিশোরবেলা। আমাদের চেনা জানা জগৎ নতুন রূপে চোখের সামনে ধরা দেয়। মনের মধ্যে জন্ম নেয় ভাললাগা। ‘লাল রসগোল্লা’ ছড়ায় কবি লেখেন, ‘না পুরুত না পাদ্রী/ চাই না তো মোল্লা/ পাতে যদি পড়ে দুটো/ লাল রসগোল্লা।’ চার পঙক্তির ছড়াটির মধ্যে দিয়ে মজার ছলে গভীর কথা বলা হয়েছে। ছোটরা ছোটদের মতো বুঝবে। তারা যে আনন্দ পাবে, সে আর নতুন কী! ‘ফিঙে’ ছড়ায় কবি লেখেন, ‘আমার নাম ফিঙে/ খাই আলু-পোস্ত ঝিঙে/ ছোট্ট একটা পাখি/ তোমার বাসার পাশে থাকি।’ পড়তে পড়তে প্রাণে ওঠে খুশির তুফান। মন ছুটে যায় অন্য জগতে। সেখানে নেই কোনও জটিলতা, স্বার্থপরতা। গাছের পাতায়, ফুলের পাপড়িতে লেগে রয়েছে সারল্য। ‘পদ্মা ইলিশ মাছ’ ছড়ায় কবি লিখেছেন, ‘যেন উপচে পড়ে হাজারে/ এত লোক কেন যে বাজারে/ এসেছে কি পাহাড়-প্রমাণ হাতি?/ দাদুর হাত ধরেছে নাতি।/ সোরগোলে বান ডেকেছে আজ/ ঝলকায় পদ্মা ইলিশ মাছ।’ চেনা দৃশ্য। তবু বারবার দেখতে ভাল লাগে। পড়তে ভাল লাগে। ইলিশকে সামনে রেখে দাদু-নাতির মিষ্টি সম্পর্কের ছবিও সুন্দরভাবে আঁকা হয়েছে। প্রতিটি ছড়ার সঙ্গে রয়েছে শংকর বসাকের আন্তরিক অলংকরণ। প্রচ্ছদশিল্পীও তিনিই। বইটি যেন শীতের নলেন গুড়ের লাল রসগোল্লা, হাতে পেলে ছোটরা বাকি সবকিছু ফেলে হমলে পড়বে! দাম ১৯৯ টাকা।