প্রজাপতি
নারী পুরুষের প্রেম, কাম, আসক্তির বিচিত্র চিত্রকর সমরেশ বসু। তাঁর উত্তরবঙ্গ, সওদাগর, শ্রীমতী কাফে থেকে শুরু করে বিবর পর্যন্ত সেই প্রবণতা স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়েছে। নিজের সময়, মানসিকতা, নিজস্ব সাহসী ভাষা, ভঙ্গি, স্পষ্টবাদিতায় সমৃদ্ধ তাঁর রচিত বিপুল সাহিত্যভাণ্ডার।
সালটা ১৯৬৭। এক বাংলা পত্রিকার পুজো সংখ্যায় প্রকাশিত হয় বিশিষ্ট সাহিত্যিক সমরেশ বসুর উপন্যাস ‘প্রজাপতি’। বছর ঘুরতেই এই বইটি অশ্লীলতার দায়ে জড়িয়ে পড়ে। এক তরুণ আইনজীবী মামলা করলেন। বন্দি হল ‘প্রজাপতি’। তার প্রায় ১৭ বছর পর নিষিদ্ধ তকমা থেকে মুক্তি পেল ‘প্রজাপতি’।
আরও পড়ুন-বিশ্বকাপ ২০২৩, শাহরুখ আইসিসির ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার
এই প্রজাপতির গল্প একেবারে অন্যরকম। সতেরো বছরের আইনবন্দি দশা থেকে মুক্তি পেয়েছে সে। এই ‘প্রজাপতি’ অভিজ্ঞতায় প্রাজ্ঞ। তার ধার এবং ভার দুই-ই বেড়েছে। আর কেউ এই উপন্যাসটি নিয়ে ছবি করার কথা ভেবেছেন কি না জানা নেই। ১৯৮৬-তে যখন উপন্যাসটি ছাড়পত্র পেল তখন পরিচালক সুব্রত সেন কলেজছাত্র। এমন একটা গল্প নিয়ে ছবি করার স্বপ্নটাও তখন ছিল দুরঅস্ত্। ২০০৬ সালে ‘বিবর’ ছবিটি করার সময় ‘প্রজাপতি’ নিয়েও সিনেমা তৈরির ভাবনা আসে তাঁর মাথায়। প্রসঙ্গত পরিচালক বললেন, ‘বিবর’ করার সময় যখন ‘প্রজাপতি’ নিয়ে ছবি করার কথা ভাবলাম তখন মনে হয়েছিল এই উপন্যাসটি নিয়ে ছবি করাটা অনেক শক্ত। এখনও আমি মানসিকভাবে প্রস্তুত নই। সেই জন্য তখন ‘বিবর’ নিয়েই কাজ শুরু করি। তার অনেক পরে ‘প্রজাপতি’।
আরও পড়ুন-‘হৃদয় পুড়ে যাচ্ছে, হৃদয় কাঁদছে’, ২১ জুলাইয়ের সভাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে মণিপুর নিয়ে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
মফসসলের প্রেক্ষাপটে তৈরি এই ছবির মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন অভিনেতা সুব্রত দত্ত। ‘স্বপ্নের ফেরিওয়ালা’তে সুব্রত দত্তকে প্রথম মুখ্যচরিত্রে নিয়ে আসেন পরিচালক সুব্রত সেন। এরপর একসঙ্গে চারটে ছবি করেছেন তাঁরা। দুই সুব্রতর জুটি বেশ সফল। কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-সহ আরও সাত-আটটি ফেস্টিভ্যাল ঘুরে তারপর মুক্তি পেতে চলেছে সুব্রত সেনের এই ছবি, যা ইতিমধ্যেই বেশ প্রশংসিত।
‘প্রজাপতি’কে প্রেক্ষাপট বদলে নিজস্ব আঙ্গিকে আজকের সময়ের সঙ্গে মিলিয়েছেন পরিচালক। এখনকার সময়ের প্রতিফলনে এই ছবি।
আরও পড়ুন-কাল থেকে বাড়বে বৃষ্টি?
ছোট্ট এক শহরতলিকে কেন্দ্র করে গল্প সাজিয়েছেন পরিচালক। এই ছবির চিত্রনাট্যকার তিনি নিজেই। কারখানার শ্রমিক আন্দোলন, মুখোশধারী রাজনৈতিক নেতা, তাদের কুকীর্তি, অন্যায় মদতে মস্তানদের রমরমা। এর মধ্যেই নারী ও পুরুষের আশনাই এবং তাঁদের কাম, প্রেম, যৌনতা— সবটাই এই ছবির প্ল্যাটফর্ম। মস্তান সুখেনের চরিত্রের ভাল, খারাপ দুটো দিকই বেশ স্পষ্ট। এই সমাজ কীভাবে সুখেনদের জন্ম দেয়, কোন খাতে বয়ে চলে তাঁদের জীবন, সেই গল্পই বলবে এই ছবি। উপস্থাপনে মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন পরিচালক। এই ছবিতে আরও যাঁরা রয়েছেন তাঁরা হলেন ঋতব্রত মুখোপাধ্যায়, মুমতাজ সরকার, শ্রীতমা দে প্রমুখ। ছবির শ্যুটিং হয়েছে পুরুলিয়াতে। ছবির প্রচারে খুব বেশি চেষ্টা ছিল না পরিচালকের। দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাক এটাই তাঁর ইচ্ছে।
আরও পড়ুন-বিউটি পার্লার বন্ধ করা নিয়ে ফরমান তালিবান সরকারের, পথে নেমে প্রতিবাদ মহিলাদের
নীহারিকা (দ্য মিস্ট)
‘আমি দীপা। একটি মেয়ে যে নিজেকে খুঁজছি…, না নিজের সেক্সস্যুয়াল আইডেন্টিটি খুঁজছি। আমি কি সমকামী না আমি উভকামী? প্রতি মুহূর্তে নিজেকে এই প্রশ্ন। কারণ নিজের মামাকেও পছন্দ করি, আবার মেয়েদেরও ভাল লাগে’।
সভ্য সমাজে এমন অনেক মানুষ রয়েছেন যাঁরা এমনই নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে প্রতিনিয়ত এগোচ্ছেন। দীপাও তেমনই একটি মেয়ে। এবার প্রশ্ন কে এই দীপা? তিনি হলেন পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্যের নতুন ছবি ‘নীহারিকা’র নায়িকা। যে নিজের সঙ্গে লড়ছে প্রতিনিয়ত।
নীহারিকা (দ্য মিস্ট) ছবির গল্প অন্যদের চেয়ে সামান্য আলাদা। ছবির নায়িকা দীপার জীবনযন্ত্রণার শুরু ছোট বয়সেই৷ তারপর সেই অন্ধকার শৈশব পেরিয়ে সে বড় হয়। ছোটবেলায় গিরিডির শিমুলতলায় দীপাকে নিয়ে আসে ওর ছোট মামা। যে-বাড়িতে মামার সঙ্গে থাকে দীপা, সেই বাড়ির নাম ‘নীহারিকা’।
আরও পড়ুন-বিউটি পার্লার বন্ধ করা নিয়ে ফরমান তালিবান সরকারের, পথে নেমে প্রতিবাদ মহিলাদের
ছবিটির কাহিনি প্রসঙ্গে পরিচালক ইন্দ্রাশিস জানালেন, ‘এক অন্ধকার শৈশব পেরিয়ে যৌবনে যখন পা রাখে দীপা, তখন তাঁর জীবনে নতুন ভাবে আশা-আকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়। কিন্তু অস্তিত্বের সংকট কাটে না দীপার জীবনে। শহর থেকে অনেক দূরে প্রায় জনমানবহীন প্রান্তরে নতুন করে নিজেকে খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে যায় দীপা। কিন্তু কী ঘটবে এরপর! সেই কৌতূহল মেটাতে চাইলে প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটা দেখতে হবে।
সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভয়’ উপন্যাস থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ছবিটি তৈরি করেছেন পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য।
‘নীহারিকা’ ছবিতে মুখ্য চরিত্র অর্থাৎ দীপার ভূমিকায় রয়েছেন অভিনেত্রী অনুরাধা মুখোপাধ্যায়। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন শিলাজিৎ মজুমদার, অনিন্দ্য সেনগুপ্ত, মল্লিকা মজুমদার, প্রিয়ংকা গুহ, রাজেশ্বরী পাল, শশী গুহ, জুঁই বাগচী, অমিত চক্রবর্তী প্রমুখ। পরিচালনা ও চিত্রনাট্য ইদ্রাশিস আচার্য। সহযোগী চিত্রনাট্যকার সৌভিক দাশগুপ্ত, সর্বাশিস সরকার। ক্যামেরায় রয়েছেন শান্তনু দে। সংগীত পরিচালনায় জয় সরকার। গানে অবর্ণা রায় এবং শ্রাবণী রায়। অ্যাডিলেড ও হ্যানয় আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ছাড়াও এখনও পর্যন্ত আটটি চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিয়েছে ছবিটি। প্রতিটি চলচ্চিত্র উৎসবে প্রশংসিত হয়েছে ‘নীহারিকা’। ২৭তম কেরল আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সম্মানিত হয়েছে এই ছবি।
আরও পড়ুন-সংবিধান ভেঙে পড়েছে, কড়া নিন্দায় সুপ্রিম কোর্ট
পরিচালক প্রতিটি ঋতুর অনুভূতি ফুটিয়ে তোলার জন্য আলাদা আলাদা ঋতুতে শ্যুটিং করেছেন। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, শীত— এই ছবিতে সব ঋতুরই ছোঁয়া পাবে দর্শক। তাই ছবিটি শেষ হতে প্রায় দুবছর সময় লেগেছে। বিহারের শিমুলতলা, মধুপুর, গিরিডিতে শ্যুটিং হয়েছে এই ছবির।