প্রতিবেদন : তালিবান জঙ্গিগোষ্ঠী আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পর ভেঙে পড়েছে সেদেশের সমাজজীবন ও অর্থনীতি। প্রতি মুহূর্তে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবাধিকার। তালিবানের জমানায় ক্ষুধার্ত মানুষ একবেলাও পেট পুরে খেতে পাচ্ছে না। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, বেশিরভাগ মা-বাবাই খিদের জ্বালায় ছটফট করতে থাকা শিশুকে ঘুমের ওষুধ খাওয়াচ্ছেন। ক্ষুধার্ত শিশুরা যাতে খিদে ভুলে ঘুমিয়ে পড়ে। কেউ কেউ আবার কন্যাসন্তান বিক্রি করে দিচ্ছেন। অনেকেই আবার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে পাওয়া টাকা দিয়ে কোনওভাবে কয়েকদিন ক্ষুণ্ণিবৃত্তি করছেন।
আরও পড়ুন-ক্ষুব্ধ এলন মাস্ক
আবদুল ওয়াহিদ নামে হেরাটের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, তাঁর ঘরে বেশ কিছুদিন ধরে এক মুঠো অন্নও নেই। খিদের জ্বালায় কাঁদতে শুরু করছে ছেলেমেয়েরা। ছেলেমেয়েদের কান্না দূর করতে তিনি ওষুধের দোকান থেকে কিনে আনছেন কড়া ডোজের ওষুধ। সেই ওষুধ খেয়ে শিশুরা আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকছে। গোলাম নামে আর এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তাঁর ছয় সন্তান। তার মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির বয়স এক বছর। ওই শিশুটিকে অবশ্য তিনি ওষুধ খাওয়াতে পারেননি।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, শিশুদের এ ধরনের ওষুধ খাওয়ানো হলে তাদের লিভার, কিডনি ও শরীরে বিভিন্ন গুরুতর সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্থানীয় এক ওষুধের দোকানদার জানিয়েছেন, একটি পাউরুটির মূল্যে পাঁচটি এই ধরনের ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যায়। কান্দাহারের এক মহিলা জানিয়েছেন, তাঁরা রাতে শুকনো ফেলে দেওয়া পাউরুটি জলে ভিজিয়ে রাখছেন। সকালে সেটা কিছুটা নরম হলে তাঁরা খেয়ে নেন। এভাবেই দুর্বিষহ দিনযাপন চলছে তাঁদের।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-মিছিল
তালিবানরা আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরেই প্রায় সব বিদেশি সাহায্য আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হাজার হাজার মানুষ তাঁদের কাজ হারিয়েছেন। নিরুপায় মানুষ বাধ্য হয়ে নানা অনৈতিক কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। বহু মা-বাবা তাঁদের কন্যাসন্তানকে চড়া দামে বিক্রি করেছেন। এমনকী, অনেকেই বিক্রি করে দিয়েছেন শরীরের অঙ্গ। আরমান নামে এক যুবক জানিয়েছেন, তিন মাস আগে তিনি তাঁর একটি কিডনি বিক্রি করে দিয়েছেন। কিডনি বিক্রির টাকায় তিনি ঋণ শোধ করেছেন। বাকিটা তিনি সংসারের কাজে লাগিয়েছেন। জালালউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি তাঁর ৮ বছরের এক মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছেন। আফগানিস্তানের বেশিরভাগ এলাকাতেই শিশু থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই চরম অপুষ্টিতে ভুগছেন। হাসপাতালগুলিতে অসুস্থ মানুষের ভিড়। অপুষ্টি সহ নানা রোগে কাহিল দরিদ্র মানুষ। আন্তর্জাতিক মহল থেকে সাহায্যের প্রত্যাশী সাধারণ আফগান জনতা।