ব্যুরো রিপোর্ট, শান্তিনিকেতন : বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী যেন খেয়ালখুশির রাজা। বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাঁর জমিদারি। একের পর এক স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তে শিক্ষক, পড়ুয়া থেকে রাজ্যবাসী সবাই বিরক্ত, ক্রুদ্ধ। তিনি অবিচল। ভিডিও ক্যামেরার সামনেও কুরুচিকর মন্তব্য করতে ছাড়ছেন না। যা নিয়ে শিক্ষামহল তোলপাড়। এমনকী পড়ুয়ারা দাবিদাওয়া নিয়ে দেখা করতে চাইলে নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে ঘাড়ধাক্কা দেওয়াচ্ছেন। ক্যাম্পাস খোলা, রেজাল্ট বের করা, স্কলারশিপ চালু ইত্যাদি বারো দফা দাবিতে শুক্রবার সকালে সেন্ট্রাল অফিসের সামনে উপাচার্যের সঙ্গে পড়ুয়ারা কথা বলতে গেলে উপাচার্য কথা না বলে কার্যালয়ে ঢুকে যান।
আরও পড়ুন-ইতিহাস থেকে আর এক ধাপ দূরে রাফাল
এরপর মাইক নিয়ে বলাকা গেট দিয়ে ছাত্রছাত্রী ঐক্যের পড়ুয়ারা ঢুকতে গেল নিরাপত্তারক্ষীরা বলপ্রয়োগ করে। অনেকেই আহত হন, পড়ে গিয়ে হাত–পা ছড়ে যায়। ছাত্রছাত্রী ঐক্যের সোমনাথ সৌ বলেন, ‘‘আমরা আগেই দাবিদাওয়া উপাচার্যকে মেল করি। তিনি কান দেননি। উপাচার্য তিন বছরে যা ইচ্ছে করছেন। উনি এখান থেকে চলে যান। শান্তিনিকেতন পাগলাগারদ নয়। যেখানে পাগলাগারদ আছে, সেখানেই ওঁর যাওয়া উচিত।’’ শান্তিনিকেতনে সাধারণতন্ত্র দিবসের এক অনুষ্ঠানে উপাচার্যের বিতর্কিত মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। সেই ভিডিওর সত্যতা জাগোবাংলা যাচাই করেনি। তাতে অধ্যাপকদের একাংশকেও তীব্র কটাক্ষ করেছেন তিনি। সম্ভব হলে সেই সব অধ্যাপক যেন ‘পড়াতে না পারেন’ তার ব্যবস্থা করতে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
আরও পড়ুন-আর্জেন্টিনার জয়, ড্র ব্রাজিলের
উত্তরাখণ্ডের রামগড়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি বাড়ি আছে। সেই বাড়ির আশপাশে ৪৬ একর জমি উত্তরাখণ্ড সরকার বিশ্বভারতীকে দিয়েছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরির জন্য। সে প্রসঙ্গ টেনে উপাচার্য বলেন, ‘‘ভারতে প্রথম কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস তৈরি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেক সমালোচনা হচ্ছে। আমি ও কেন্দ্রীয় সরকার নাকি বিশ্বভারতীকে এখান থেকে নিয়ে চলে যাচ্ছি৷ আমি জানতাম বিশ্বভারতীর শিক্ষকরা বুদ্ধিমান, কিন্তু যে সব শিক্ষক এই ধরনের কথা বলেন, তাঁদের কী বলব? যদি সুযোগ হয়, এই ধরনের শিক্ষকরা যাতে এখানে পড়াতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা আমি করতাম৷ কিন্তু সেই সুযোগ নেই।’’এরপরই উপাচার্য আবারও অশালীন মন্তব্য করেন। বলেন, ‘‘যেমন এখানে বিশ্বভারতী এখন পশ্চিমবঙ্গ ভারতী বা বোলপুর ভারতী হয়ে গিয়েছে। আমি রামগড় ক্যাম্পাসকে উত্তরাখণ্ড বিশ্ববিদ্যালয় হতে দেব না।’’
ঠাকুর পরিবারের সদস্য প্রবীণ আশ্রমিক সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, ‘‘উপাচার্য বিশ্বভারতীর মানের উন্নতির ক্ষেত্রে কী পদক্ষেপ করেছেন? শুধু সমালোচনা করলে চলে না। উনি ছাড়া আর সকলেই খারাপ, এই বিষয়ে আমার আর কী বলার থাকতে পারে!’’বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও উপাচার্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা, একটা পাগল উপাচার্য। উনি চলে গেলে শুধু বিশ্বভারতী নয়, গোটা দেশ বাঁচবে।’’