প্রতিবেদন : বেঁচে থাকলে আজ ৯৬ তে পা দিতেন বাঙালির ম্যাটিনি আইডল। কিন্তু তাও আজও বাঙালি যুবারা প্রেমিকাকে বলে “তুমি আমায় বলো, উত্তম কুমার”। যে ছবির ডায়লগ এটি তাতে অবশ্য উত্তম কুমার ছিলেন না। তবু চিন্ময় রায়ের মুখে এই কথা সেই সময় বাঙালির যুব সমাজের ফ্যান্টাসিকে সামনে নিয়ে আসে। মজার কথা হল, সেই ফ্যান্টাসি আজও বাঙালির অন্তরে রয়ে গিয়েছে। সিক্স প্যাক, হাইলাইট করা চুল, বাংলা বলায় যতই আড়ষ্টতা থাক- এখনও বাঙালির যুবাদের রাইভাল উত্তম কুমার। মনে মনে তাঁরাও নিজেদের সুচিত্রা-সুপ্রিয়ার ‘উত্তম’ হতে চায়। তবে শুধু প্রেমিকা নয়, কাব্যের উপেক্ষিতা হয়েও অনেকে রয়ে গিয়েছেন উত্তম-প্রেমী হিসেবে। যাঁরা এখনও উত্তম কুমারের ছবিতে প্রতিদিন টাটকা মালা পরিয়ে দেন। আজ মহানায়কে ৯৬তম আবির্ভাব দিবস। তাঁর মতো কিংবদন্তির আবির্ভাবই হয়। জন্মদিন হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষের।
সাধারণ চাকুরিজীবী হিসাবে জীবন শুরু। সঙ্গে ছিল নিজেদের পাড়ার থিয়েটার গ্রুপে অভিনয়। কেরিয়ারের প্রথম ৭টি ছবি পর পর ফ্লপ। টলিউড অরুণ কুমারকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিল ‘ফ্লপ মাস্টার জেনারেল’ তকমা দিয়ে। নিউমারোলজি মানতেন কি? তার উল্লেখ মেলে না। তবে, মামার বাড়ির দেওয়া উত্তম নামেই জীবনে সাফল্য। ‘উত্তম’ থেকে ‘নায়ক’ তারপর ‘মহানায়ক’।
আরও পড়ুন : এবার ত্রিপুরাতেও যাত্রা হবে : মদন
প্রথম জীবনের উত্তম কুমারের ক্যারিশ্মা পর্দায় সেভাবে চোখে পড়ত না। কাজল পরা চোখ, ঠোঁটে চড়া লিপস্টিক, দেহের তুলনায় অতিরিক্ত সাদা পমেটম দেওয়া মুখ, সাধারণ দেহ সৌষ্ঠবের উত্তম তখন লড়াই করছেন। ছয়ের দশক থেকে বদল শুরু। তখন থেকেই উত্তম কুমার তৈরি করলেন নিজের স্টাইল। ব্যায়াম করা চেহারা, নিজের নামের আদ্যক্ষর ‘ইউ কাট’ চুল, চোখে বাঁকা চাহনি, ভুবন ভুলানো হাসি। আর তার সঙ্গে মিলল অপূর্ব কণ্ঠস্বর। গায়ক হতে চেয়েছিলেন প্রথম জীবনে। সেই জন্য হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কাছে রীতিমতো গান শিখেছিলেন কিছুদিন। কিন্তু বুঝেছিলেন সেটা হবে না। তবে সঙ্গীত চর্চা ছিল। তবে, উত্তমের লিপে হেমন্তর আর মান্নার গান তাঁর প্রত্যেকটা চরিত্রকে রোমান্টিকতার শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছিল। শুধু মহিলারাই নন, আপামর বাঙালি মজে গেল উত্তম ম্যাজিকে।
অতি-উত্তমের মাঝেও কিন্তু ছিলেন এক মানুষ উত্তম কুমার। যিনি স্রোতে ভেসে বলিউডে নিজের জায়গা খুঁজতে গিয়েছিলেন। হয়নি। মুখ থুবড়ে পড়েছিল ‘ছোটি সি মুলাকাৎ’। নিজের ছবি প্রযোজনা করতে গিয়ে ‘আত্মপ্রেমে’ এডিট টেবিলে দৃশ্য কাটতে পারেননি। ফলে ছবির দৈর্ঘ্য হয়ে গিয়েছিল অতি বড়। এখবর মেলে সেই এডিট টেবিলে থাকা অন্য এডিটারের থেকে। ব্যক্তিগত জীবনেও টানাপোড়েন ছিল বিস্তর।
আরও পড়ুন : বাংলাই পথ দেখায়: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নকল, এবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী খুললেন হেল্প লাইন!
জীবনের মধ্য গগন থেকে সূর্য পশ্চিমে ঢলতে শুরু করতেই জীবন খাতা থেকে নাম তুলে নিলেন উত্তম। যদি আজও সশরীরে থাকতেন! চরিত্রাভিনেতা হিসেবে কাজ করতেন! তাহলেও কি এই ম্যাটিনি আইডলের তাকমাটা থাকত? সে চর্চায় বহু নাম উঠে আসবে। যাঁদের সঙ্গে দাঁড়িপাল্লায় মাপা হবে তাঁকে। জন্মদিনের এত কাটাছেঁড়া নাই বা হল। বাঙালির মনে আজও তিনি ‘মহানায়ক’; ‘অতিউত্তম’। শুধু ৯৫তম জন্মবার্ষিকীতে নয়, বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ এবং তাঁর অসংখ্য অনুরাগী প্রতিদিনই একইভাবে স্মরণ করে চলেছে তাঁকে।