নবনীতা মণ্ডল: দশমদিনেও উদ্ধার করা যায়নি উত্তরকাশীর (Uttarkashi Tunnel Collpase) সুড়ঙ্গে আটকে থাকা ৪১ জন শ্রমিককে। হিমালয়ের প্রাকৃতিক ভঙ্গুরতার জন্য উত্তরাখণ্ডের সুড়ঙ্গে ধস নামার পাশাপাশি টানেলের এসকেপ রুট না রাখাই এই নজিরবিহীন ঘটনার জন্য দায়ী। যত সময় যাচ্ছে নির্মাণকারী সংস্থার নানা গাফিলতি স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নীতিন গড়করি আশ্বাস দিয়েছিলেন, দু’দিনের মধ্যে সবাইকে উদ্ধার করা যাবে। মঙ্গলবারও সেই আশ্বাস পূরণ হয়নি।
টানা ১০ দিন বা ২৪০ ঘণ্টা ধরে উত্তরকাশীর (Uttarkashi Tunnel Collpase) বিপর্যস্ত নির্মীয়মাণ সিল্কিয়ারা টানেলে নরকযন্ত্রণায় বাঁচার আশায় দিন গুনছেন ৪১ জন শ্রমিক। এরমধ্যে আছেন পশ্চিমবঙ্গের তিনজন। আতঙ্কের পরিস্থিতিতে আরও হতাশার কথা শুনিয়ে এনডিএমএর সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল সৈয়দ আতা হাসনাইন বলেছেন, এটি সহজ চ্যালেঞ্জ নয়, তাই আমরা প্রতিটি বিকল্প পথ খোঁজার চেষ্টা করছি। এখন এটুকুই একমাত্র আশ্বাস দিতে পারি। কবে উদ্ধারপর্ব শেষ হবে, সেই সময়সীমা নির্ধারণ করতে পারছি না।
ব্লুপ্রিন্ট অনুযায়ী এসকেপ রুটের কথা বলা হলেও বাস্তবে তা না বানানোর খেসারত দিচ্ছেন শ্রমিকরা। বর্তমানে তাই বারকোট প্রান্ত থেকে একটি ব্যাকআপ রুট তৈরির কাজ শুরু করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার।
ব্যাকআপ টানেলের ব্যাস হবে প্রায় তিন মিটার। এ পর্যন্ত আট মিটার উদ্ধার টানেল নির্মাণ করা হয়েছে। সিল্কিয়ারা-বারকোটের ঘটনার পর বিজেপি শাসিত উত্তরাখণ্ড সরকারের বিশেষজ্ঞরা বাধ্য হয়ে এখন রাজ্যের সমস্ত নতুন এবং চলমান প্রকল্পগুলির ‘সেফটি অডিট’-এর নির্দেশ দিয়েছেন। আর এই পদক্ষেপের মাধ্যমে গাফিলতির অভিযোগে নিজেরাই সিলমোহর দিয়েছে রাজ্যের বিজেপি সরকার।
টানেলের বাইরে কর্তব্যরত আধিকারিকদের কাছে ইতিমধ্যেই বাইরে থাকা শ্রমিকরা নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিয়ে বলেছেন, সরকার শুধু পরীক্ষা-নিরীক্ষাই করছে। আসল কথাটা হল শ্রমিকরা এখনও টানেলের মধ্যেই আটকে রয়েছেন। উচ্চপ্রযুক্তির ক্যামেরার মাধ্যমে প্রকাশ্যে এসেছে শ্রমিকদের ছবি। ১০ দিনে এই প্রথমবার ছয় ইঞ্চি লাইফলাইন পাইপের মাধ্যমে আটকে পড়া শ্রমিকদের বোতলে খিচুড়ি পাঠানো হয়েছে। এতদিন শ্রমিকরা বেঁচে ছিলেন শুধুমাত্র ড্রাইফ্রুট খেয়ে। মাঝে মাঝে তাঁদের পাঠানো হত অ্যান্টি-ডিপ্রেশন ট্যাবলেটও। সোমবার নতুন পাইপের মাধ্যমে সুড়ঙ্গের ভিতর পাঠানো হয়েছে একটি মোবাইল ফোন ও চার্জার। উদ্ধারকারী দলের ইনচার্জ কর্নেল দীপক পাতিল বলেন, বিকল্প লাইফলাইনের মাধ্যমে আমরা সুড়ঙ্গের ভিতরে খাবার, মোবাইল এবং চার্জার পাঠাতে পারি। চিকিৎসকদের পরামর্শে কী কী খাবার দেওয়া হবে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টানেলের ভিতর থেকে শ্রমিকদের উদ্ধার করতে ইতিমধ্যেই ব্যর্থ হয়েছে ড্রোন এবং ডিআরডিও র পাঠানো বিশেষ রোবট।
তাই সরকারের আশ্বাস সত্ত্বেও আতঙ্কিত আটকে পড়া শ্রমিকদের স্বজনরা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন আটকে পড়া শ্রমিকদের জন্য পালানোর কোনও পথ রাখা হয়নি? নির্মাণের সময় কী ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণ করা হয়েছিল?
চারধাম মহামার্গ পরিযোজনা হল উত্তরাখণ্ড সরকারের সর্বআবহাওয়া হাইওয়ে প্রকল্প যা ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ডিসেম্বর ২০১৬ তে উদ্বোধন করা হয়েছিল৷ উত্তরাখণ্ড ইউনিভার্সিটি অফ হর্টিকালচার অ্যান্ড ফরেস্ট্রির পরিবেশ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এস পি সতি বলেন, যদিও নির্মাণ কোম্পানিরা কখনওই স্বীকার করে না যে তারা বিস্ফোরক ব্যবহার করে, কিন্তু আমরা অতীতে বারবার এর লঙ্ঘন দেখেছি। আমি নিশ্চিত যে টানেল ধসে চূড়ান্ত একটা ঝাঁকুনি দেওয়া হয়েছিল, এর তদন্ত করা উচিত। ভারী বিস্ফোরকের ব্যবহার করার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার প্রাক্তন ডিরেক্টর পি সি নাওয়ানি বলেছেন, এসকেপ রুট ছাড়া এই ধরনের প্রকল্প করা সম্ভব নয়। নাওয়ানি যিনি আবার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ রক মেকানিক্সের প্রাক্তন ডিরেক্টরও, তাঁর বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, টানেল নির্মাণের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের জীবনের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলেছে নির্মাণকারী সংস্থা এবং উত্তরাখণ্ড সরকার।
আরও পড়ুন- কাতারের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চায় হামাস