সৌপ্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়: তিনি বর্নপরিচয় লিখেছেন। বাঙালির শিক্ষার শুরু হয় তাঁকে দিয়েই কিন্তু এটা ক’জন জানেন আরশোলা সেদ্ধ জল দিয়ে হাঁপানির ওষুধ বানিয়েছিলেন তিনি। ওষুধের শিশিতে ছিল আবিস্কারক হিসাবে নাম ছিল ঈশ্বরচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়েরই।অবিশ্বাস্য তবু বাস্তব। ঘটনা শুনলে গা গুলিয়ে উঠতেও পারে।
আরও পড়ুন-বিপ্লব দেবের মন্তব্যকে টুইট করে সমালোচনা করলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়
ঘটনা কেমন? ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের হাঁপানির সমস্যা ছিল। শীতকালে তা স্বাভাবিকভাবেই তা বাড়ত। এই সময়ে দু’বেলা চা খেতেন তিনি। একদিন চা খাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাঁপের টান বেমালুম হাওয়া। বিদ্যাসাগর তো অবাক! গৃহভৃত্যকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন, এমন কী ম্যাজিক হল যে আজ এত দ্রুত কাজ হল। চায়ে কি মেশানো হয়েছে জানতে চান তিনি। ভৃত্য ভিড়মি খেয়ে বলে ফেলেন মহাসত্য কথা।
সে বলেছিল তাড়াহুড়োয় কেটলি না-ধুয়েই চা করে ফেলেছে। কেটলি আনতে বললেন ঈশ্বরচন্দ্র। কেটলির ভিতরে দেখে চমকে গেলেন তিনি। দেখেন অবশিষ্ট চায়ে দু’টো আরশোলা পড়ে রয়েছে। মাথায় বিদ্যুৎ খেলে যায়। তবে কী সেদ্ধ আরশোলাই তাঁর হাঁপানির কষ্ট কমিয়ে দিয়েছে?
তিনি এবার নিজে হাতে পরীক্ষা করতে যান। আরশোলা ধরে বেশি জলে সেদ্ধ করে , সেটিকে অ্যালকোহলে ফেলে ছেঁকে ডাইলিউট করে হোমিয়োপ্যাথির মতো ওষুধ বানিয়ে নিজের উপরে এমনকি অন্য ব্যক্তির উপরেও পরীক্ষা করে দেখেন। শুধু যখন অন্যদের উপর পরীক্ষা করেন তখন তাদের জানাননি তাঁরা কী পান করছেন। লোককে না জানালেই হল ওষুধে কী আছে। ফল ইতিবাচক পেয়েছিলেন। রোগের উপশম হয়েছিল নিজেরও।
আরও পড়ুন-পাঠকের ভালোবাসা পেতে আমার ভালো লাগে
হাঁপানির ওষুধ ব্লাটা ওরিয়েন্টালিশ তৈরি হয় ওই ফর্মুলাতেই। “মেটিরিয়া মেডিকায়” এই ওষুধের প্রথম প্রয়োগকর্তা হিসেবে নাম আছে পন্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরেরই। তবে বলে রাখা ভালো, যারা ভাবছেন আরশোলা সেদ্ধ গরম জল খেয়ে সর্দি , কাশি কমিয়ে নেবেন তারা ভুল করবেন, কারণ এখন আমাদের বাড়িতে যে আরশোলা পাওয়া যায় তা ব্লাটা ওরিয়েন্টালিশ নয়। এরা পেরিপ্লাটিনা আমেরিকানা প্রজাতির। ব্লাটা ওরিয়েন্টালিশ প্রজাতিকে আর পাওয়াই যায় না এখানে। পেরিপ্লাটিনা আমেরিকানা প্রজাতি এদের হঠিয়ে দিয়েছে। পেরিপ্লাটিনা প্রজাতিটি আমেরিকা থেকে জাহাজের মালপত্রের সঙ্গে আমাদের দেশে চলে আসে সপ্তদশ শতাব্দীর শেষ দিকে। তারপর থেকে এখন এদেরই রমরমা। তাই আরশোলা সেদ্ধ গরমাগরম জল কোনও কাজে আসবেনা।