প্রতিবেদন : বাংলাভাগের চক্রান্ত, পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, বিজেপি নেতাদের অনবরত অশালীন মন্তব্য ও কুৎসা, অভিযুক্ত বিজেপি মন্ত্রীদের গ্রেফতার— এরকম একগুচ্ছ ইস্যু নিয়ে সোমবার শিলিগুড়িতে প্রতিবাদ-মিছিল করল তৃণমূল কংগ্রেস (Trinamool Congress- Siliguri)। শিলিগুড়ির মাল্লাগুড়ি মোড় থেকে হাসমিচক পর্যন্ত মিছিল হয়। অবিলম্বে উত্তরবঙ্গের দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক ও জন বার্লার পদত্যাগের দাবি জানানো হয় তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে। এখানেই শেষ নয়, নিশীথ ও জনকে উত্তরবঙ্গের লজ্জা হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। সোমবার উত্তরবঙ্গের চার জেলা— কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং পাহাড়-সমতলের নেতা-কর্মী-সমর্থকেরা প্রতিবাদ-মিছিলে শামিল হন। এদিন প্রতিবাদ মিছিলের পর হাসমিচকে একটি প্রতিবাদ সভাও করে তৃণমূল কংগ্রেস। এদিন প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র দেবাংশু ভট্টাচার্য ও যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী সায়নী ঘোষ। এদিন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী উদয়ন গুহ তাঁর বক্তব্যে বলেন— ২০০৯ সালে নিশীথ প্রামাণিক আলিপুরদুয়ারে দুটি সোনার দোকানের তালা ভেঙে সোনা চুরি করেছিল। সেই কারণে তাকে ৪০ দিন জেল খাটতে হয়েছিল। আর এই ডাকাতকেই নরেন্দ্র মোদি দেশের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী করে রেখেছেন! তাঁর সংযোজন, কোচবিহারে ভেটাগুড়ির বাড়িতে নিশীথকে ঢুকতে হলে সিআরপিএফের নিরাপত্তা নিয়ে ঢুকতে হয়। শিলিগুড়ির (Trinamool Congress- Siliguri) মহানাগরিক গৌতম দেব বলেন, যাদের পায়ের তলায় রাজনৈতিক মাটি আলগা হয়ে যায় তারাই এ-ধরনের ষড়যন্ত্র করে। প্রতিটা ভোটের আগেই এ-ধরনের ষড়যন্ত্রের ছক কষে বিরোধীরা। কবিগুরু বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাঁর আদর্শকে পাথেয়ে করেই একদল হার্মাদের বাংলা ভাগের ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা রাস্তায় নেমেছি।
আরও পড়ুন-অসভ্যতা, অভিযোগ
বিজেপিকে তোপ দেগে দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাকে যে ভাগের চক্রান্ত করছে তার প্রতিবাদে এতটা পথ মিছিল করে একসঙ্গে এত মানুষ বিজেপির মুখে থাপ্পড় মেরে বুঝিয়ে দিল পাহাড় থেকে সমতল ইউনাইটেড বেঙ্গল। মোদির মন্ত্রিসভায় চল্লিশ শতাংশ মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রয়েছে। আমাদের দলের এক শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল তাকে দল থেকে সরিয়ে দলনেত্রী তিরস্কার করেছে। আর মোদি ডাকাত নিশীথ প্রামাণিককে ডাকাতির জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করে পুরস্কৃত করেছেন! ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি বাংলা ভাগের কথা বলেনি। এখন নির্বাচনে হেরে বাংলাকে ভাগ করতে চাইছে। আর বিজেপির কেউ কেউ মনে করছে ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হব’— ‘আমি মুখ্যমন্ত্রী হব’। কিন্তু আমি শপথ করে বলছি, বাংলা অখণ্ড থাকবে।
তৃণমূল যুব কংগ্রেসের রাজ্যে সভানেত্রী বলেন, বাংলা ভাগ ওসব বিজেপির বুলি। বাংলা মায়ের একটা আঙুলও কাটতে দেব না আমরা। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক। এদিন শুভেন্দুকে তুলোধোনা করে সায়নী বলেন, যতদিন তৃণমূলে ছিল তৃণমূলের ক্ষতি করেছে। এখন বিজেপিতে গিয়ে বিজেপির যেটুকু আছে সেটাও ক্ষতি করছে। উনি মিরজাফর। ভেতরে ভেতরে ঘুণ ধরে শেষ করিয়ে দেয়। এবারের লোকসভা ওর জন্য শেষ লোকসভা। শুভেন্দু প্রথমে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা বলতেন এখন তাঁর তিন বছরের শিশুপুত্রের কথা তুলে রাজনীতি করছেন। ওঁর শিরদাঁড়া সোজা নেই।
প্রতিবাদ মিছিল ও সভায় উপস্থিত ছিলেন দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী পাপিয়া ঘোষ, সাংসদ শান্তা ছেত্রী, আদিবাসী উন্নয়ন মন্ত্রী বুলুচিক বড়াইক, শিলিগুড়ি কর্পোরেশনের মেয়র গৌতম দেব, দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান অলক চক্রবর্তী-সহ উত্তরের সব সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও চেয়ারম্যানরা। এদিন কোচবিহারেও প্রতিবাদ মিছিল করে দল।