উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand Kanatal) গাড়োয়াল। এখানকার হিমশীতল পরিবেশে আছে অসংখ্য বেড়ানোর জায়গা। প্রতিটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এককথায় অসাধারণ। সময় পেলেই বাঙালি পর্যটকরা দলবেঁধে পাড়ি জমান। অনেকেরই মনের মতো জায়গা হতে পারে গাড়োয়ালের নিরিবিলি হিল স্টেশন কানাতাল।
মায়াময় এই হিল স্টেশনটির সঙ্গে অস্ট্রিয়ার দারুণ মিল। দেশে বসে বিদেশে বেড়ানোর স্বর্গীয় স্বাদ পেতে চাইলে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন।
দেবদারু এবং ওক গাছের ঘন জঙ্গল। তার মধ্যে চলে আলো আঁধারের লুকোচুরি খেলা। সুউচ্চ পাহাড়ের ঢালে ঘন অরণ্য এবং খরস্রোতা নদীর নিচু স্বরের সংলাপ শুনতে পান কেউ কেউ। কুয়াশা-মাখা এই গ্রামের ঘাস-জমি দেখে মনে হতে পারে, কেউ যেন সবুজ গালিচা বিছিয়ে দিয়েছে। পাহাড়ের আঁকাবাঁকা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে মন চাইবে কোন অজানায় হারিয়ে যেতে।
আছে ছোট-বড় বেশকিছু আপেল বাগান। পর্যটকদের মন কাড়তে বাধ্য। তবে আপেল দেখার আদর্শ সময় সেপ্টেম্বর-অক্টোবর। যদি তুষারপাতের অপরূপ দৃশ্য দেখতে চান, তাহলে যেতে হবে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে। হি-হি শীতে কাঁপতে কাঁপতে শুভ্র প্রকৃতির অপরূপ রূপ আস্বাদন করার মজাই আলাদা।
এখানকার প্রতিটি কোণ লোভনীয় এবং মায়াময়। ৮৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত কানাতাল যেন এক সব পেয়েছির দেশ। যেখানে নেই ছিটেফোঁটা মনকেমন। আছে শুধুমাত্র অনন্ত আনন্দ-উপাদান। এই আনন্দ ঔজ্বল্যহীন। নির্জনতাপ্রেমীদের মন ভরে যাবে। এখানকার প্রকৃতির রহস্যময় সৌন্দর্য কবিতার মতো সুন্দর । শান্তি এবং স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে রয়েছে গাছের সবুজ পাতায় এবং পাহাড়ে।
আরও পড়ুন-উত্তরপ্রদেশে নাগরিক সুরক্ষা শিকেয়
সকালে মনোরম আবহাওয়ায় পাখির কলকাকলিতে ঘুম ভাঙবে। তারপর সবুজ প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে বসা যায় গরম এককাপ কফি নিয়ে। মনের মধ্যে অদ্ভুত এক ভাললাগার জন্ম দেবে। সন্ধেটা আবার অন্যরকম।
জীবনের সমস্ত ব্যস্ততা থেকে মুক্তি দেবে কানাতালে কাটানো কয়েকটা দিন। দর্শনীয় হিল স্টেশনটি এখনও অনেকটাই অনাবিষ্কৃত। তাই দেখা যায় না খুব বেশি পর্যটকের ভিড়।
কানাতালের আশেপাশে আছে বেশকিছু বেড়ানোর জায়গা। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য তেহরি লেক, কাউদিয়া বনে সাফারি, শিব মন্দির, লাল টিব্বা, সুরকান্ধা দেবীর মন্দির।
এই সুরকন্দ দেবীর মন্দির হিন্দু দেবী সতীর মন্দির। ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে একটি। আর্কিটেকচারের জন্য দারুণ জনপ্রিয়। তাকালে চোখ ফেরানো যায় না। পুরাণে বলা হয়েছে, এই জায়গাটিতেই পড়েছিল সতীর মস্তক। মন্দিরটি হিমালয়ের কোলে অবস্থিত। এখান থেকে দেখা যায় পাহাড়ের মনোরম দৃশ্য।
চাইলে বেশ কিছু অ্যাডভেঞ্চারাস স্পোর্টসেও মেতে উঠতে পারেন। এই হিল স্টেশনটি ট্রেকিং এবং হাইকিং করার জন্য আদর্শ জায়গা। এর পাশাপাশি করতে পারেন সাফারি রাইড, আকাশ ভরা তারার নিচে ক্যাম্পিং, র্যালি পেলিং, ভ্যালি ক্রসিং এবং আরও অনেক কিছু।
টুক করে দিন দিন চার-পাঁচেকের জন্য কাটিয়ে আসতে পারেন কানাতাল। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে এখানকার প্রকৃতি অন্যরূপে সেজে ওঠে। নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবেন না। তাহলে আর দেরি না করে চটপট টিকিট কেটে ফেলুন। ঘুরে আসুন ভারতের অস্ট্রিয়ায়।
কীভাবে যাবেন?
যেতে পারেন ট্রেনে। কানাতালের (Uttarakhand Kanatal) কাছাকাছি দুটি রেল স্টেশন হল দেরাদুন এবং হৃষীকেশ। এই দুটি জায়গা থেকে কানাতাল পৌঁছানোর জন্য ট্যাক্সি অথবা বাস পেয়ে যাবেন। সড়কপথেও যেতে পারেন। জাতীয় সড়ক ৫৮ দিয়ে যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টার মতো। হাওড়া থেকে দুন এক্সপ্রেসে দেরাদুন যেতে পারেন। সেখান থেকে প্রায় ৮০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কানাতাল। মুসৌরি থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার। দিল্লি দিয়ে সফর শুরু করলে চাম্বা থেকে মুসৌরির পথেই পড়বে এই পর্যটনকেন্দ্র।
কোথায় থাকবেন?
কানাতালে (Uttarakhand Kanatal) আছে বেশ কয়েকটি থাকার জায়গা। তাঁর মধ্যে অন্যতম রহস্যময় পাইনের জঙ্গলের মধ্যে অবস্থিত দ্য টেরস। এখান থেকে দেখতে পাওয়া যায় সবুজ পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য। বুটিক রিসর্টের দ্য টেরসে ৮টি ডিলাক্স রুম, ১২টি সুপার ডিলাক্স রুম, একটি বুটিক স্পা এবং একটি লাক্সারি সুইট আছে। প্রতিটি সুইট পাহাড়ের ওপর বিভিন্ন উচ্চতায় বানানো। যাতে পর্যটকরা অসাধারণ জায়গার স্বাদ নিতে পারেন। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা এবং জাঁকজমকপূর্ণ সাজসজ্জার অপূর্ব মিশ্রণে দ্য টেরস অন্যদের থেকে একেবারে আলাদা স্বাচ্ছন্দ্য দিয়ে থাকে। এ ছাড়াও আছে আরও কিছু হোটেল। ওয়েবসাইট দেখে নিতে পারেন। দেরাদুন, মুসৌরিতে আছে অসংখ্য হোটেল। থাকা যায় সেখানেও।