বাঁকুড়ার ওন্দায় তৃণমূলের জনসভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) বলেন, “আগামী পঞ্চায়েত ভোট অধিকার রক্ষার লড়াই। এই নির্বাচনে নিজেদের অধিকারের জন্য ভোট দিন। তবে, আপনারা না লড়লে পাশে থাকবে না তৃণমূল।“ তিনি জানান, বাঁকুড়ার মানুষ যদি নিজেদের অধিকারের দাবি লড়াই না করে, তাহলে তাদের হয়ে লড়াই করবে না তৃণমূল।
চৈত্রের প্রবল দাবদাহে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (Abhishek Banerjee) যখন ওন্দা ময়দানের মঞ্চে বলতে ওঠেন তখন তাপমাত্রার পারদ প্রায় ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। বক্তৃতার শুরুতেই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বেলা ২টোয় কাঠফাটা রোদ্দুরে যাঁরা সভায় আসেন তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে আসেন যে, গত নির্বাচনে বিজেপিকে সমর্থন করে যে পাপ করেছেন, তার প্রায়শ্চিত করবেন।“ এরপরেই বিজেপির বিরুদ্ধে একের পর তোপ দাগেন অভিষেক। কারণ, ২০১৯-এ বাঁকুড়ার দুটি লোকসভা কেন্দ্রেই জিতেছে বিজেপি। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনেও ভালো ফল করতে পারেনি তৃণমূলর। পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাই তৃণমূল সাংসদের ভাষণে নিশানায় বিজেপি। অভিষেক প্রশ্ন তোলেন, “যাঁরা আচ্ছে দিনের স্বপ্ন সফল হবে বলে বিজেপিকে ভোটে দিয়েছিলেন, তাঁদের আশা কি পূরণ হয়েছে?“ এরপরেই অভিষেক বলেন, ভেবেছিলেন বিজেপিকে ভোট দিলে দেশের উন্নতি হবে, গ্যাসের দাম কমবে, কর্মসংস্থান হবে, উন্নয়নে জোয়ার হবে, কিন্তু বাস্তবে কী হল! বিজেপি সাংসদ জগন্নাথ সরকার ও সৌমিত্র খাঁকে বাঁকুড়ায় দেখা যায় না বলে কটাক্ষ করেন অভিষেক। কিন্তু ভোট না পেলেও মানুষের সমস্যায় সবসময় পাশে থাকে তৃণমূল।
এরপরেই রাজ্যের বকেয়া নিয়ে কেন্দ্রের মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়ান অভিষেক। তাঁর অভিযোগ, ভোটে হেরে প্রতিশোধ নিতেই দেশের মধ্যে একমাত্র বাংলাকে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। কিন্তু রাজ্যের বকেয়া নিয়ে বিজেপির কোনও সাংসদ দিল্লিতে সরব হননি। অভিষেকের কথায়, দিল্লি থেকে অধিকার ছিনিয়ে আনতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও বিকল্প নেই। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের অভিযোগ, বাঁকুড়ার ১৮,৬২০০০ শ্রমিক ১০০দিনের কাজে টাকা পাননি। ২৪ তারিখ থেকে ১০০দিনের বকেয়া না পাওয়ার প্রতিবাদে চিঠি-সই সংগ্রহ শুরু হবে। ১ কোটি চিঠি নিয়ে দিল্লি যাবেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “দিল্লির কৃষি মন্ত্রকের সামনে চিঠি নিয়ে বসব। দেখব তিনি কীভাবে দরজা বন্ধ করে থাকেন!“ অভিষেকের অভিযোগ, বাঁকুড়ার ১৫ হাজার কৃষকের হয়ে একবারও সংসদে সরব হয়নি জেলার ২ বিজেপি সাংসদ।
আরও পড়ুন: ১৪ থেকে ১৭ এপ্রিল দক্ষিণবঙ্গজুড়ে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি
এরপরেই অভিষেক প্রশ্ন করেন, এই বঞ্চনার জন্যই কি বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন? আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচন বাংলার অধিকার রক্ষার নির্বাচন। তৃণমূল জিতলে বাংলার মানুষ তাঁদের অধিকার পাবেন। আর বিজেপি জিতলে বাংলা থেকে টাকা তুলে নিয়ে গিয়ে গুজরাটে ঢালবে। আগামী পঞ্চায়েতে নিজের অধিকারকে সামনে রেখে লড়াই করতে হবে। তৃণমূলের প্রার্থী কে? এর উত্তরে ফের অভিষেক বলেন, কোনও নেতা নন, পঞ্চায়েত তৃণমূলের প্রার্থী ঠিক করবে মানুষ। তারা যাঁকে চাইবে তিনিই প্রার্থী হবেন। তবে, অভিষেক সাফ জানান, “অধিকারের জন্য তৃণমূলকে ভোট দিন। আপনি যদি নিজের অধিকারের জন্য না লড়েন, তৃণমূলও আপনাদের জন্য লড়বে না।“
১০০ দিনের কাজের বকেয়ার দাবিতে তৃণমূলের পাশে থাকার আহ্বান জানান অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তিনি বলেন, “যেখানে বিজেপি নেতাদের দেখবেন, তাঁদের ঘিরে ধরে জবাব চান“। তীব্র কটাক্ষ করে অভিষেক বলেন, সব রাজ্য ছেড়ে শুধুমাত্র বাংলার টাকা যারা আটকে রাখে, তারাই বাংলাকে বাংলাদেশের চোখে দেখছে।
বামফ্রন্ট আমলের ‘কালোদিনের’ কথা স্মরণ করান অভিষেক। বাঁকুড়ায় লোকে ঘরের বাইরে বেরতে ভয় পেতেন। ১০-১২ কিলোমিটার দূরে জল আনতে হত। এখন বেশির ভাগ জায়গায় পানীয় জল এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগে আগামী ২ বছরে বাঁকুড়ার প্রতিটি ঘরে পানীয়জল পৌঁছবে। বাঁকুড়ার ৮টি বিধানসভায় তৃণমূলকে ভোট না দিলেও সবাই রাজ্য সরকারের প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। আবাস যোজনায় বিজেপি নেতা-বিধায়কদের পরিবারের নামে আবাস যোজনায় প্রাপকের তালিকায়, বিধায়ক নীলাদ্রিশেখর জানার মেয়ে এইমস-এ বেআইনি ভাবে চাকরি পেয়েছেন- তীব্র আক্রমণ করেন অভিষেক। একই সঙ্গে তিনি জানান, তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্তদের ঘাড় ধরে বের করে দেয়।