প্রতিবেদন : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে নজিরবিহীন সংকটের মুখে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যে ‘খুনে ওয়াগনার বাহিনী’কে (Wagner troops) ইউক্রেন ধ্বংস করার কাজে নামিয়েছিলেন, তারাই এখন রুশ ভূখণ্ড দখল করার ঘোষণা করেছে। পুতিন ও রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বিরুদ্ধে চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন একদা বন্ধু প্রিগোজিন। গোটা পরিস্থিতি বুমেরাং হয়ে উঠেছে পুতিনের কাছে। শনিবার দুপুরে রাশিয়ার শহর লিপেৎস্কের দখল নিয়েছে বিদ্রোহীরা। মস্কো থেকে ওই শহর মাত্র ছ’ঘণ্টার পথ।
কী এই ওয়াগনার বাহিনী : চেচনিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা দিমিত্রি উটকিন নামে এক রুশ সেনাকর্তা এই বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরবর্তীকালে এই বাহিনীর দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন প্রিগোজিন। তাঁর আমলেই বাহিনীর বাড়বাড়ন্ত। তাঁকে বলা হত পুতিনের রাঁধুনি। কারণ ক্রেমলিনে খাবার সরবরাহ করত প্রিগোজিনের রেস্তরাঁ ও ক্যাটারিং সংস্থা। শুধু তাই নয়, তিনি রুশ অলিগার্ক হিসাবেও পরিচিত। রাশিয়ার অন্যতম ধনী ও প্রভাবশালীদেরই অলিগার্ক বলা হয়ে থাকে। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলেও রাশিয়াকে প্রভূত সাহায্য করেছিল ওয়াগনার বাহিনী। ওয়াগনার বাহিনী (Wagner troops) সিরিয়াতে তেলের খনি, লিবিয়াতে হিরের খনি পাহারা দিত। পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালি সরকারের হয়েও জঙ্গিগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে লড়াই করত এই ওয়াগনাররা। এই বাহিনীর বিরুদ্ধে গোটা বিশ্বজুড়ে ধর্ষণ, খুন, ডাকাতি এবং যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন- এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় কলকাতা-যাদবপুর
হুমকি দিলেন প্রিগোজিন: শনিবারই মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান তথা পুতিনের এক সময়ের বন্ধু ইয়েভগনি প্রিগোজিন। তিনি জানিয়েছেন, রাশিয়ার বর্তমান সেনাকর্তাদের গদিচ্যুত না করা পর্যন্ত তাঁরা থামবেন না। তাঁদের এই পথে যারাই আসবে তারাই ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রিগোজিনের দাবি, দক্ষিণ রাশিয়ার রুস্তভে ঢুকে পড়েছে ওয়াগনার বাহিনী। তাঁরা ক্রমশ মস্কোর দিকে অগ্রসর হবেন। প্রিগোজিনের হুমকিতে ঘুম উড়েছে রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রকের আধিকারিক ও সেনাকর্তাদের।
পাল্টা হুঁশিয়ারি পুতিনের : এক সময়ের বন্ধু ওয়াগনার-প্রধানকে রীতিমতো বিশ্বাসঘাতক বলে তোপ দেগেছেন পুতিন। হুমকি দিয়ে পুতিন বলেছেন, আমাদের পিছন থেকে ছুরি মারা হয়েছে। এই বিদ্রোহী সেনাকে আমরা উপযুক্ত জবাব দেব। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে উৎসাহ দিয়ে পুতিন বলেছেন, রাশিয়া এক অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মুখে পড়েছে। এই অবস্থায় সেনাবাহিনীকে এককাট্টা হতে হবে। রুশ সংবাদ সংস্থা তাস জানিয়েছে, বিদ্রোহের কারণে প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দেশের গোয়েন্দা সংস্থা। মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবয়ানিন জানিয়েছেন, সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
ওয়াগনার কেন বিদ্রোহী : হঠাৎই কেন ওয়াগনার বাহিনী পুতিনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করল? কয়েক দিন আগেই ওয়াগনার-প্রধান প্রিগোজিন দাবি করেন, তাঁর বাহিনীর উপর রাশিয়া মিসাইল হামলা চালিয়েছে। এর ফলে তাঁর বহু সেনার মৃত্যু হয়েছে। এর জবাব তিনি দেবেন।