পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। মনোনয়ন পত্র জমা দেওয়ার কাজ চলছে। জেলায় জেলায় রাজনৈতিক কর্মীরা তৎপরতা বাড়াচ্ছেন। প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কথা বলি। সাম্প্রতিক সময়ে তারা মা মাটি মানুষের সরকার ও তৃণমূল দলের কাছে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছিল যে, অবিলম্বে নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে। এমনও তাঁরা বলার সাহস দেখিয়েছেন যে, তৃণমূল কংগ্রেস ভয় পেয়েছে। তারা নাকি নির্বাচন থেকে পালাতে চাইছে। অর্বাচীন আর কাকে বলে? কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের ঘোরতর কান্নার রোল প্রচার মাধ্যমে দেখা গেল। সেই কান্না-গণ্ডদেশ নিয়ে তাঁরা মহামান্য আদালতে হাজি হলেন। সব সময়ই এটা তাঁরা করে থাকেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সবসময় যান জনতার দরবারে। বিরোধীরা যান আদালতে। মহামান্য আদালতের প্রতি সম্মান রেখেই এটা বলছি। আসলে বিরোধীদের মানুষের কাছে যাওয়ার ‘মুখ’ নেই। সাহসও নেই। আর তাদের সঙ্গে মানুষও নেই।
আরও পড়ুন-বারাকপুরের জওয়ানের বিরুদ্ধে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের, সেনাবাহিনীতে দুই পাক গুপ্তচর
অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা যেতে পারে। নির্বাচনের পূর্বে কেন বিরোধী দলের সঙ্গে সভা হল না। সর্বদলীয় সভা করা অত্যন্ত জরুরি। করা হচ্ছেও। কিন্তু নির্বাচনের দিন ঘোষণার আগেই তা করতে হবে এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। আইনে কোনও উল্লেখ নেই। দ্বিতীয়ত, মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় কম। আইনে এই সময়টা নির্দিষ্ট আছে। ১১টা থেকে ৩টে। কমিশন তাই করেছে। তবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে জামানত অর্থ দিতে হয় ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিট) মারফত। সেটা করার জন্য কোনও সময় নেই। যে কোনও সময় অর্থাৎ অফিস টাইমে করা যায়। আর সম্পত্তি সংক্রান্ত যে হলফনামা দিতে হবে তা স্ট্যাম্প পেপারে লিখে নিজে সই করলেই হবে। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার জন্য এই প্রস্তুতি আগে থেকে নিয়ে থাকলে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া কয়েক মিনিটের ব্যাপার। তবে এ ব্যাপারে মহামান্য আদালত নির্দিষ্ট মতামত জানিয়েছেন। কমিশন নিশ্চয় তা ভেবে দেখবেন। আমাদের দল সব সময় নির্বাচনের জন্য তৈরি। সারা রাজ্যে ২-৩ দিনের মধ্যে আমাদের প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে দেবেন।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতীতে অতিথিশিক্ষক বেতন ১৫০ টাকা
এবার এখন পর্যন্ত যে মনোনয়নপত্র জমা পড়েছে তার সংখ্যার দিকে তাকানো যাক। ১৫টি জেলার খবর পাওয়া গিয়েছে, তাতে তৃণমূল কংগ্রেস একটাও মনোনয়নপত্র জমা দেয়নি। কিন্তু ২৫ হাজার মনোনয়নপত্র জমা পড়ে গিয়েছে। বিরোধীরা দিয়েছে। বিজেপি, সিপিএম ইত্যাদি। মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, পূর্ব বর্ধমান, উত্তর ২৪ পরগনা, মালদহ জেলাতে বাম প্রার্থীরা জেলাপরিষদ-সহ প্রায় সব আসনে প্রার্থী দিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁদের জোট হবে হবে করেও হচ্ছে না— তাতে আমাদের কী করার আছে? এখন যদি তাঁরা দাবি করেন যে, তাঁদের জোটের ব্যাপারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ইতিবাচক হস্তক্ষেপ করতে হবে— সেটা খুব বাড়াবাড়ি হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচনকে বলা হয় জনগণের নির্বাচন। ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায় প্রার্থী। একই বাড়িতে একাধিক প্রার্থী। ফলে অংশগ্রহণ বেশি। অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্র একেই বলে।
বিরোধী পক্ষে মনোনয়নে বাধা দেওয়া হচ্ছে সেটা যে সর্বৈব অসত্য তা আগেই বলেছি। বরং এ ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। কোনও প্রার্থী কোথাও যদি মনোনয়ন দিতে বাধাপ্রাপ্ত হন তাহলে সরাসরি আমাদের জানাতে পারেন। সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ হচ্ছে, তাঁকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে সবরকম সাহায্য করা হবে। তারই এক টুকরো উদাহরণ দেখা গেল পশ্চিম বর্ধমানের বারাবনিতে। ব্লকের নাম সালানপুর। যেসব বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন তাঁদের সকলকে ঠান্ডা জল ও ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। এতবড় নির্বাচন। এত উচ্চ তাপমাত্রার আবহাওয়া। সামান্য সংঘর্ষ হতেই পারে। বিরোধীদের সমস্যা হচ্ছে তারা গোষ্ঠী সংঘর্ষ আর রাজনৈতিক সংঘর্ষের মানে ভুলে গিয়েছেন। আর কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি তো একা কুম্ভ রক্ষা করেন নকল বুঁদির গড়। তাঁর তথাকথিত ‘গড়’ যে কবে ভাগীরথীর জলে ভেসে গিয়েছে সেটা মানতেই তাঁর অসুবিধা হয়। হায় রে! কী আর করা যাবে?
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে উত্তরজুড়ে ধরনায় মহিলারা
চাউর করা হচ্ছে তৃণমূলের গোষ্ঠিদ্বন্দ্বের গল্প। আগে তো গল্পের গরু গাছে উঠত। এখন প্রাণিসম্পদ রক্ষা আইনের ফলে গরুকে আর গাছে তোলা যায় না। নির্যাতনের পর্যায়ে পড়বে। সেই কারণে গল্পের গরু দূরদর্শনের পর্দা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়। তৃণমূল কংগ্রেস বিশাল বড় দল সবাই জানেন। দলের হাজার হাজার কর্মী যোগ্যতাবলেই প্রার্থী হতে চান। প্রার্থী হতে চাওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় নেই। কিন্তু আসন সংখ্যা সীমিত।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের বঞ্চনার বিরুদ্ধে উত্তরজুড়ে ধরনায় মহিলারা
সবাই প্রার্থী হবেন না। সেটা সত্য। কিন্তু কর্মীদের আবেগ ও উচ্ছ্বাস মিথ্যে হতে পারে না। সেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ কোনও কোনও সময় খানিকটা কড়াভাবে প্রকাশিত হয়। বিরোধীরা ও প্রচার মাধ্যমের বড় অংশ সেটাকে গোষ্ঠিদ্বন্দ্ব বলে চালাতে চায়। কিন্তু এখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ কথা। তিনিই প্রার্থী ঠিক করবেন এবং প্রার্থী জিতবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে সবাই লড়বে।
গণতন্ত্রের বড় ক্রান্তিকারী প্রয়োগ হচ্ছে বাংলায়। বিরোধীরা তাঁদের প্রার্থীর মনোনয়ন দিতে পারছেন না। ইতিমধ্যে তাঁরা প্রায় সেটা শেষ করেছেন। আসুন, গণতন্ত্র রক্ষায় একমত হয়ে আমরা রাস্তায় নামি। সারা দেশকে পথ দেখাই। যা অতীতে করেছি।