ওয়াল্টার ইলিয়াস ডিজনির জন্ম শিকাগো, ইলিনয়ে, ডিসেম্বর ৫, ১৯০১-এ। তিনি ইলিয়াস এবং ফ্লোরা কল ডিজনির পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ সন্তান। আত্মীয়দের মতে, “ইলিয়াস ছিলেন অনেকটা তার বাবার মতো; সে কোনো এক জায়গায় বেশিক্ষণ সন্তুষ্ট থাকতে পারেনি।” ১৯০৮ সালে, মার্সেলিনে একটি স্কুল খোলা হয়েছিল, কিন্তু ওয়াল্ট ১৯০৯ সাল পর্যন্ত পড়া শুরু করেননি।
আরও পড়ুন-Partha Chatterjee: বিধানসভায় আসুন শিখুন কাজ : পার্থ
আট বছর বয়সে তিনি এবং তার ছয় বছর বয়সি বোন রুথ একসাথে স্কুল শুরু করেছিলেন। ১৯১১ সালে, ওয়াল্টারের বাবা ইলিয়াস একটি কানসাস সিটি স্টার ডেলিভারি রুট কিনেছিলেন এবং ওয়াল্ট এবং তার দাদা রয়কে সেখানে কাজে লাগানো হয়েছিল। সকাল, বিকেল এবং সপ্তাহান্তে ইলিয়াস, ওয়াল্ট এবং রয় তাদের ডেলিভারি করতেন।
ওয়াল্ট আরও ছয় বছর বাবার সাথে কাগজপত্র সরবরাহ করতে থাকেন। রুট বাড়ার সাথে সাথে ইলিয়াস অন্য ছেলেদের সাহায্য করার জন্য ভাড়া করে তাদের সপ্তাহে কয়েক ডলার প্রদান করে। কিন্তু তার ছেলেকে অর্থ দিতে অস্বীকার করেন। তিনি বলতেন, যে এটি পরিবারের সদস্য হিসাবে তার কাজের অংশ ছিল। তাই ওয়াল্ট ইতিমধ্যেই একজন তরুণ উদ্যোক্তা হয়ে নিজের অর্থ উপার্জনের উপায় খুঁজতে শুরু করেন। প্রথমে তার নিয়মিত রুটে স্থানীয় ওষুধের দোকানে ডেলিভারি করেন।
আরও পড়ুন-Partha Chatterjee: বিধানসভায় আসুন শিখুন কাজ : পার্থ
দশ বছর বয়সে ওয়াল্ট এক প্রতিবেশী ছেলের সাথে সোডা বিক্রির একটি স্ট্যান্ড খোলেন। কিন্তু সেরকম লাভ করতে পারেননি। শোনা যায়, বিনামূল্যে চুল কাটার জন্য স্থানীয় একজন নাপিতের জন্য গ্রাহকদের ব্যঙ্গচিত্র এঁকে দিতেন। কানসাস সিটিতে থাকাকালীন তিনি ফাইন আর্ট ইনস্টিটিউট-এ ক্লাস শুরু করেন।
পরবর্তীকালে কর্মসূত্রে, ফ্রান্সে থাকাকালীন কার্টুন ও ক্যারিকেচার তৈরির প্রতি আরও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কানসাস সিটি ফিল্ম অ্যান্ড অ্যাড কোম্পানিতে চাকরিতে জয়েন করার পর অ্যানিমেশনের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয়। ধার করে একটি অ্যানিমেশনের ওপর বই এবং ক্যামেরার সাহায্যে বাড়িতে বসে গবেষণা করতে থাকেন অ্যানিমেশনের ওপর। সেইসময় মূলত কাট আউট পদ্ধতিতে কাজ হত।
তিনি তৈরি করেন প্রথম প্রতিটি ফ্রেম বাই ফ্রেম ছবি এঁকে আন্যিমেশনের কাজ। যেটিকে বলা হয় সেল অ্যানিমেশন বা ক্লাসিক অ্যানিমেশন পদ্ধতি। নিজের এই অভাবনীয় পদ্ধতিকে জনসমক্ষে তুলে ধরার জন্য তৈরি করেন নিজের অ্যানিমেশন স্টুডিও “লাফ-ও-গ্রাম” স্টুডিও ১৯২১ সালে। এই “লাফ-ও-গ্রাম” স্টুডিও’র তাঁকে পরিচিতি দিতে শুরু করে। ১৯২৩ সালে তার হলিউডে প্রবেশ হয় এবং তার দাদা এবং তিনি মিলে তৈরি করেন ডিজনি ব্রাদার স্টুডিও, যেটি পরবর্তীকালে বিশ্ববিখ্যাত “ওয়াল্ট ডিজনি কোম্পানি” হিসাবে পরিচিতি পায়।
ডিজনির তৈরি প্রথম বিখ্যাত চরিত্র হল ‘অসওয়াল্ড, দ্য লাকি রেবিট’। অসওয়াল্ডকে প্রতিস্থাপন করার জন্য, ডিজনি এবং তার সহকর্মী আইওয়ার্কস মিকি মাউস তৈরি করেছিলেন, সম্ভবত একটি পোষা ইঁদুর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে যা ডিজনি তার ‘লাফ-ও-গ্রাম’ স্টুডিওতে কাজ করার সময় তৈরি করেছিল। যদিও চরিত্রটির উৎস অস্পষ্ট। প্রথমে চরিত্রটির নাম দেওয়া হয়েছিল মর্টিমার মাউস, কিন্তু ডিজনির স্ত্রী কাম ইঙ্ক আর্টিস্ট লিলিয়ান এই নামটি গ্রহণযোগ্য নয় বলে, ‘মিকি’ নাম দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
ডিজনি পরবর্তীকালে নিজেকে অ্যানিমেশন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখতে শুরু করেছিলেন, তবে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত মিকির কণ্ঠস্বর প্রদান করেছিলেন। মিকি মাউস প্রথম প্রকাশ্যে শর্ট ফিল্ম ‘স্টিমবোট উইলি’তে ১৮ নভেম্বর, ১৯২৮-এ উপস্থিত হয়েছিল, সেই কারণে ভক্তরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই দিনটিকে মিকি মাউসের জন্মদিন হিসাবে স্বীকৃত দিয়েছ। ডিজনির একজন কর্মচারীর ভাষায়, ‘ইউবি মিকির শারীরিক চেহারা ডিজাইন করেছিলেন, কিন্তু ওয়াল্ট তাকে তার আত্মা দিয়েছেন।’
আরও পড়ুন-Lakhimpur: লখিমপুর: তদন্তে নজরদার নিয়োগ
১৯৩৪ সালে ওয়াল্ট ডিজনি উদ্যোগ নেন, স্বল্প দৈর্ঘের কার্টুন শর্ট তৈরির পরিবর্তে সম্পূর্ণ অ্যানিমেশন ফিল্ম তৈরি করার। ১৯৩৭সালে তৈরি হয় প্রথম পূরণ দৈর্ঘের অ্যানিমেশন ফিল্ম ‘স্নো হোয়াইট এন্ড সেভেন ডর্ফস’। সিনেমাটিকে জীবন্ত করে তুলতে সত্যিকারের পশু-পাখিকে নিয়ে আসা হতো ডিজনির স্টুডিওয়। তাদের গতিবিধি নিরক্ষন করতে হত ডিজনির অ্যানিমেটর আর্টিস্টদের। এই সিনেমায় কাজে লাগানো মাল্টিপল ক্যামেরা। এই সিনেমা রিলিজের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি, ডিজনি বা তার কোম্পানি ওয়াল্ট ডিজনিকে। এর পরবর্তীকালে শুরু হয় অ্যানিমেশন বিপ্লব।
আরও পড়ুন-চিংড়িঘাটায় বন্ধ হোক দুর্ঘটনা ,মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ পুলিশকে
বরাবরই শিশুদের জন্য তৈরি চিত্র, কার্টুন, অ্যানিমেশন, চরিত্র তৈরির প্রতি ঝোঁক ছিল ডিজনির। সেখান থেকেই তৈরি হয় এরকম সব চরিত্র সম্বলিত একটি বিশ্বমানের অ্যামিউজমেন্ট পার্ক তৈরি করার। তাঁরই উদ্যোগে ক্যালিফোর্নিয়ায় তৈরি হয় পৃথিবী বিখ্যাত থিম পার্ক ‘ডিজনি ল্যান্ড’। চিত্র পরিচালনা, প্রযোজনা জগতে সব মিলিয়ে ডিজনি ৫৯ বার অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড (অস্কার)-এর নমিনেশন পেয়েছেন এবং অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন ২২ বার। এ ছাড়াও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে গোল্ডেন গ্লোব নমিনেশন, এমি অ্যাওয়ার্ড-সহ দেশ বিদেশের আরও নানা সম্মাননা।