মানস ভট্টাচার্য: ফুটবল সম্রাট পেলে আর নেই— খবরটা পাওয়ার পর থেকেই মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। মারণ ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করছিলেন। ভেবেছিলাম, ফুটবল মাঠের মতো এই লড়াইটাও হয়তো জিতবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হেরেই গেলেন ফুটবলের মহানায়ক। মনের মধ্যে অনেক স্মৃতি ভিড় করছে। অবাক লাগে যখন ভাবি, ফুটবল সম্রাটের বিরুদ্ধেই খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি। আবার কয়েক বছর আগে দ্বিতীয়বার যখন পেলে এলেন কলকাতায়, তখনও ওঁর সান্নিধ্য পাই। আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি।
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
১৯৭৭ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ইডেন গার্ডেন্সে নিউইয়র্ক কসমসের বিরুদ্ধে মোহনবাগানের ম্যাচ। মোহনবাগানের তৎকালীন সর্বময় কর্তা ধীরেন দে যখন আমাদের এই ম্যাচটির কথা বলেছিলেন তখন আমরা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। তার পর শুধু অপেক্ষা, কবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসবে, আমরা মোহনবাগান ফুটবলাররা তিন-তিনটি বিশ্বকাপজয়ী পেলের বিরুদ্ধে খেলতে নামব খাস কলকাতায়। পেলের সঙ্গে ছবি তুলব, ম্যাচ খেলব— যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল।
আরও পড়ুন-কেন্দ্রের বঞ্চনা অব্যাহত ফুঁসছে আলিপুরদুয়ার
সত্যিই, সেদিন স্বপ্নপূরণ হয়েছিল। আমাদের কোচ প্রদীপদা (পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়) সবাইকে উজ্জীবিত করেছিলেন এই ম্যাচের জন্য। পেলে যাতে গোল না করতে পারেন তার জন্য প্রদীপদার নির্দিষ্ট গেমপ্ল্যান ছিল। প্রদীপদা বলতেন, পেলে যত বড়ই ফুটবলার হোন, তোমরা লড়াই ছাড়বে না। পেলের সঙ্গে ব্রাজিলের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কার্লোস আলবার্তোও ছিলেন কসমস দলে। সেদিন কানায় কানায় ভর্তি ছিল ইডেনের গ্যালারি। মাঠে যত না লোক ছিল, মাঠের বাইরে বোধহয় তার থেকেও বেশি ছিল।
আমরা কিন্তু পেলের পায়ের জাদু দেখে মোহিত হয়ে ছিলাম না। বরং মাঠে আমরা নিজেদের প্রমাণ করেছিলাম। মহম্মদ হাবিব, শ্যাম থাপা গোল করলেও মোহনবাগান দল হিসেবে সেদিন খুব ভাল খেলেছিল। ম্যাচটা ২-২ ড্র হলেও আমরা জিততে পারতাম।
আরও পড়ুন-আবাসযোজনা নিয়ে পদ্মের রাজনীতি, পাল্টা জবাব সভানেত্রীর
২-১ এগিয়ে থাকা অবস্থায় কসমস পেনাল্টি থেকে গোল শোধ করে। কিন্তু খেলার পর পেলে স্বীকার করেন, ওটা পেনাল্টি ছিল না। শুধু বড় ফুটবলার নন, কত বড় মনের মানুষ ছিলেন পেলে সেটাও আমরা দেখেছিলাম। ম্যাচের পর হোটেলে নৈশভোজে উপস্থিত ছিল দু’দলের ফুটবলাররা। সেখানে আমাদের খেলার প্রশংসা করেন ফুটবলের সম্রাট। সবাইকে আলাদা করে অটোগ্রাফ দেন। প্রসূনকে (বন্দ্যোপাধ্যায়) অটোগ্রাফ দিয়ে লেখেন, ‘প্লে দ্য সকার, সি দ্য ওয়ার্ল্ড’। অর্থাৎ ফুটবল খেলে সারা বিশ্বকে দেখো। ফুটবলকে পেলে কতটা ভালবাসতেন, তাঁর এই উক্তিতেই সেটা বোঝা যায়।