ডাবল ইঞ্জিন মোদিজির স্রেফ ভাঁওতা। বেকারত্ব কমছে কোথায়? সরকারি পদ খালি পড়ে থাকার পরেও তা পূরণ করছে না কেন্দ্র।
পরিসংখ্যান মন্ত্রকের অধীন ‘পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে’ই বলছে, মোদি রাজ্য গুজরাত, ডাবল ইঞ্জিনের অসম, উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্রের হাল বিজেপির পক্ষে স্বস্তিদায়ক নয়। অসমে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে বেকারত্বের হার ছিল ১১.৭ শতাংশ। ২০২২-২৩ বর্ষে হয়েছে ১৪.৯ শতাংশ। আর গুজরাতে? সেখানে এই হার ছিল ৬.১ শতাংশ, হয়েছে ৬ শতাংশ। উত্তরপ্রদেশেও তাই। ১১.৩ থেকে হয়েছে ১১ শতাংশ। ডাবল ইঞ্জিনের ঢক্কানিনাদ স্নাতক বেকারদের বরাত ফেরাতে পারছে না।
আরও পড়ুন-ভুয়ো জাতিগত শংসাপত্র ইস্যু নিয়ে কড়া পদক্ষেপ, নিয়োগ হচ্ছে বহু আধিকারিক
কেন্দ্রশাসিত লাদাখ, জম্মু-কাশ্মীর, আন্দামান নিকোবর, দাদরা নগর-হাভেলি দমন-দিউ, চণ্ডীগড়, লাক্ষাদ্বীপেও বেকারদের বেহাল অবস্থা। লাদাখে স্নাতক বেকারত্বের হার একলাফে ৯.৮ থেকে হয়েছে ২৬.৫ শতাংশ। আন্দামান, পুদুচেরি, দাদরা নগর-হাভেলি, জম্মু-কাশ্মীরেও বেড়েছে এই হার।
অন্যদিকে, বদলাচ্ছে বাংলার ছবি। গত এক বছরে রাজ্যে কমেছে স্নাতক বেকারত্বের হার। ৯.৭ শতাংশ থেকে কমে হয়েছে ৭.৩ শতাংশ।
আস্তে আস্তে এগোচ্ছে, বাংলার মতো না হলেও বেকারত্ব কমছে অন্য রাজ্যেও। তবে কিনা সেগুলোর সবকটাই অ-বিজেপি দল শাসিত রাজ্য।
বিহারে স্নাতক বেকারত্বের হার ২০ থেকে কমে হয়েছে ১৬.৬ শতাংশ। কর্ণাটকে সাড়ে ১২থেকে ৯.৪ শতাংশ। কেরলে ২৬.৯ থেকে কমে হয়েছে ১৯.৮ শতাংশ। পাঞ্জাবে ১৮.৯ থেকে ১৬.৯ শতাংশ। তামিলনাড়ুতে ১৮.৭ থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৬.৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন-আসছেন মুখ্যমন্ত্রী, প্রস্তুতি খতিয়ে দেখলেন জেলা সভাধিপতি, উদ্বোধনের অপেক্ষায় চাকলাধাম
ওদিকে মাঝেমধ্যেই ঘটা করে ‘রোজগার মেলা’ করছেন প্রধানমন্ত্রী। ঢাকঢোল পিটিয়ে চলে প্রচার। কিন্তু গ্র্যাজুয়েট অর্থাৎ স্নাতক যুবকদের ভাগ্য খুলছে না। এখনও দেশের ১৩.৪ শতাংশ স্নাতক কর্মহীন। বলছে খোদ মোদি সরকারেরই রিপোর্ট। বিশেষত, বিজেপির ‘ডাবল ইঞ্জিন’ রাজ্যের পরিস্থিতি একেবারেই স্বস্তিজনক নয়। ওপরের পরিসংখ্যানই তার প্রমাণ।
আসলে মোদি পার্টি ব্যস্ত অন্য কাজে। তাদের এজেন্ডা আলাদা।
গীতাপাঠ, রামমন্দির উদ্বোধন, চব্বিশের ভোট। এক সুতোয় বাঁধা ভোটের গেরুয়া এজেন্ডা। লক্ষ্য একটাই—মেরুকরণ। আর তার ফল? হিন্দু রাষ্ট্র।
আরও পড়ুন-চ.ক্রান্ত-গুজব উড়িয়ে নিশ্চিন্তের টেট
রবিবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ‘লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠান ছেয়ে ছিল এমনই পোস্টার-ফ্লেক্সে। তাতে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় লেখা ‘হিন্দু রাষ্ট্রের সূচনা’। ভোট যত এগিয়ে আসছে, গেরুয়া উদ্দেশ্য স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠছে। তাই মূল আয়োজক হিসেবে প্রকাশ্যে ‘সনাতন সংস্কৃতি সংসদ’-এর নাম এলেও ‘গীতাপাঠে’র নিয়ন্ত্রক হয়ে থাকল গেরুয়া শিবিরই। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ, তিনি না আসায় বিকল্প সন্ধানের চেষ্টা, এবং বিজেপি নেতা-মন্ত্রীদের প্রকট উপস্থিতি প্রমাণ দিয়েছে, এই অনুষ্ঠান স্রেফ ‘গীতা’র স্বার্থে নয়। নরেন্দ্র মোদি সরকার সংবিধান বদলাতে চাইছে। এর মূল উদ্দেশ্য, ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করা।ভোটের আগে মেরুকরণে জোর দিতে চাইছে ওরা। এটাই গেরুয়া শিবিরের চরিত্র। ভোটের আগে বিজেপি উস্কানি বাড়িয়ে যাবে। তবে রবিবারের ফ্লপ সভাতেই প্রমাণ হল, বাংলার মানুষ বিদ্বেষকে সমর্থন করে না। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু যথার্থ বলেছেন, ‘ব্রিগেড তো রাজনীতির সভার জন্যই পরিচিত। গীতাকে হঠাৎ এভাবে রাজনীতির স্তরে নামিয়ে আনতে হল কেন?’
আরও পড়ুন-ট্রেনের তলায় পড়েও দুই শিশুকে রক্ষা করলেন মা!
ব্যাপক প্রচার সত্ত্বেও ‘এক লক্ষে’র টার্গেট পূরণ করতে পারেনি আয়োজকরা। গোটা সভাস্থল ঘিরে ফেলা হয়েছিল বাঁশ-গেরুয়া কাপড় দিয়ে। মঞ্চের পিছনে থাকার ব্যবস্থাও ছিল। শেষ মুহূর্তে কোমর বেঁধে আসরে নেমেছিল আরএসএস এবং তাদের শাখা সংগঠনগুলি। জেলা ও শহরতলির জনতাকে ব্রিগেডমুখী করার উপর জোর দেওয়া হয়। রুটের বাস না তুললেও ব্যবস্থা করা হয় টুরিস্ট বাসের। আর বাকিটা ট্রেন। শহরতলির বহু আশ্রমও ছিল নিশানায়। এই বিভাজনের কুৎসিত রাজনীতি থেকে প্রত্যেকে সতর্ক থাকুন, এটাই মুখ্যমন্ত্রী সহ সকল শুভ বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের আবেদন।
মোদির ব্রিগেড স্বভাব মতো রঙ্গ রসিকতাকে জাতপাতের রঙে রাঙাতে চাইছে। কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিছক মজার ছলে যেটা করেছিলেন, সেটাকে জাঠ সমাজের প্রতি অপমান বলে প্রচার করতে চাইছে। ব্যঙ্গকাণ্ড নিয়ে ফের গত রবিবার মুখ খুলেছেন উপ রাষ্ট্রপতি। তাঁর বক্তব্য, বিরোধীদের আক্রমণে তিনি অপমানিত বোধ করছেন।আর ওই রবিবারই জাঠ নেতা আরএলডি সাংসদ জয়ন্ত চৌধুরী জানিয়েছেন, জাঠ সমাজে এর চেয়েও বেশি রসিকতার রেওয়াজ রয়েছে। আর এই অঙ্গভঙ্গি কাণ্ডের সঙ্গে জাতপাতের কোনও যোগ নেই । কারণ, জাঠ হিসেবে ধনকার উপ রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হননি। তাই ব্যঙ্গ কাণ্ডের সঙ্গে জাতপাত জুড়ে দেওয়া ঠিক নয়।তিনি আরও বলেছেন,ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তো অধিবেশনের মধ্যেই মিমিক্রি করা হয়। ব্যঙ্গ করে কথা বলা মতামত বিনিময়েরই অঙ্গ।
আরও পড়ুন-যুদ্ধবিরতির দিশা নেই এখনও, ফের কথা বাইডেন ও নেতানিয়াহুর
ওরা মনে করছে, ওরা ধরে নিয়েছে।
চারটি রসুনের দাম ৮০ কেন ৯০ টাকা হলেও কেউ কিছু বলবে না, স্রেফ আলু ভাতে (নুন, তেল ছাড়া) খেতে গিয়ে প্রাণ বেরোলেও বলবে না। রান্নার গ্যাসের দাম যখন বাড়তে শুরু করল, আমরা সকলেই রেগে গেলাম, এক আত্মীয় বলেছিলেন, এর পর গ্যাসের পাইপটা নিজের মুখে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তার পর গ্যাসের দাম হাজার টাকা ছাড়াল, আমরা দিতেই লাগলাম মুখ বুজে। দাম কমিয়ে হাজারের নীচে নামানো হলে তো পোয়াবারো। উজ্জ্বলা গ্যাস প্রকল্পে প্রথম সিলিন্ডারটি বাদ দিলে পরেরগুলো যে দাম দিয়ে কিনতে হয়, ভর্তুকি ছাড়াও সেই দাম দিতে যে যে-কোনও উজ্জ্বলার প্রাণ বেরিয়ে যাবে এবং তিনি কাঠকুটোয় ফিরে যাবেন, এটা স্বাভাবিক এবং সরকারি খতিয়ানেও প্রমাণিত, কিন্তু সে কথা কথাও বিন্দুমাত্র উল্লেখ করা হল না। কিছুতেই কিছু আমাদের যায় আসে না। খেতে না পেয়ে, কর্মহীন হয়ে কত লোক সপরিবারে নিজেদের শেষ করে দিচ্ছে, আমাদের কিছু যায় আসে না, পাশের বাড়িতে, পাশের ফ্ল্যাটে তা ঘটলেও আমাদের কিছু যায় আসে না। যত ক্ষণ না আমাদের গলা দিয়ে গ্যাসের পাইপটা ঢুকিয়ে দেবে কেউ না কেউ।
এটা ওরা বুঝে গিয়েছে।
ওরা যে ভুল বুঝেছ, সেটা ২০২৪ এ ওদের বোঝানোর দায়িত্ব আমাদেরই।