প্রতিবেদন : নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শিক্ষা-সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই হিন্দুত্ববাদী ভাবধারা ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে তথ্য-যুক্তির তোয়াক্কা না করে ইতিহাস বিকৃত করতেও পিছপা নন বিজেপি নেতারা। সেই কাজ করতে গিয়েই এবার কর্নাটকে গল্পের গরুকে গাছে তুলে ছেড়েছে গেরুয়া দল।
আরও পড়ুন-সাংবাদিকের মামলা : ইউপি সরকারের জবাব তলব সুপ্রিম কোর্টের
কর্নাটকের অষ্টম শ্রেণির ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ের একটি অধ্যায়ে লেখা হয়েছে, বুলবুলি পাখির ডানায় চেপে আন্দামানের সেলুলার জেল থেকে বাইরে নিজের মাতৃভূমিতে আসতেন বীর সাভারকর! আবার নিজের কাজ শেষ করে বুলবুলির ডানায় ভর করেই তিনি ফিরে যেতেন আন্দামানে জেলের কুঠুরিতে। স্বভাবতই পাঠ্যবইয়ে এমন রোমাঞ্চকর বুলবুল-যাত্রার বর্ণনা দেখে চোখ কপালে উঠেছে ইতিহাসবিদ, শিক্ষাবিদ থেকে শুরু করে সকলের। পাঠ্যপুস্তকে অবাস্তব, গাঁজাখুরি বর্ণনা দেখে সকলেই একবাক্যে বলেছেন, বিজেপি নির্লজ্জতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এতে সার্বিকভাবে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষতি, ছাত্রছাত্রীদের ক্ষতি। ইতিহাস বিকৃত করার এই বেনজির চেষ্টা জনগণ কখনওই ভালভাবে নেবে না। গাঁজাখুরি বর্ণনা সম্পর্কে পক্ষী বিশারদরা বলছেন, আন্দামান থেকে ভারতীয় মূল ভূখণ্ডের কোনও জায়গার ন্যূনতম দূরত্ব ১৪০০ কিলোমিটার। বুলবুলির পক্ষে কখনওই ওই দূরত্ব অতিক্রম করা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন-সিবিআই তদন্তে অনুমতি তুলে নেওয়ার পথে নীতীশ সরকার
কর্নাটকের শিক্ষা দফতরের এই কীর্তি সামনে আসতেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে সরব হয়েছে বিরোধীরা। কর্নাটকের বিজেপি সরকার ইতিহাসের পাঠ্যক্রম থেকে শহিদ ভগৎ সিংয়ের কথা বাদ দিয়ে যোগ করেছে সাভারকরের কাহিনি। বিজেপি সাভারকরকে নিজেদের পথপ্রদর্শক বলে মনে করে। তাই এই উদ্যোগ। কিন্তু স্বাধীনতার ইতিহাস বলছে, ১৯১১ সালের ৪ জুলাই সাভারকরকে আন্দামান জেলে পাঠানোর পর থেকেই তিনি নিয়মিত ব্রিটিশ সরকারের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করে চিঠি লিখতে থাকেন। একের পর এক লিখিত মুচলেকায় তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাছে মুক্তির আর্জি জানিয়ে তাদের শাসন ও সংবিধান মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেন। শেষ পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসক তাঁকে মুক্তি দিলে তিনি রাজনীতি থেকে সরে গিয়ে হিন্দুত্ববাদী প্রচার শুরু করেন। এমনকী, স্বাধীনতাপ্রাপ্তি পর্যন্ত তিনি ব্রিটিশের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারাও পেতেন।
আরও পড়ুন-যোগীরাজ্যে মিলল না শববাহী গাড়ি, মৃত ভাইয়ের দেহ নিয়ে বাড়ির পথে দাদা
এদিকে পাঠ্যাংশের ছবি ভাইরাল হতেই তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েছে কর্নাটক টেক্সটবুক সোসাইটি। রাজ্যের শিক্ষকদের একাংশও এই পাঠ্যবই নিয়ে তীব্র আপত্তি তুলেছেন। তাঁদের দাবি, পড়ুয়াদের কাছে এই অংশটি বুঝিয়ে বলা খুবই কঠিন। তারা যদি এই ঘটনার প্রমাণ চায়, তাহলে আমরা কী করব? যদিও বিস্ময়করভাবে পাঠ্যবইয়ের এই অংশটিকে কার্যত স্বীকৃতি দিয়েছেন কর্নাটকের স্কুলশিক্ষামন্ত্রী বিসি নাগেশ। তাঁর নির্লজ্জ সাফাই, ওই পাঠ্যাংশে সাভারকর সম্পর্কে যা লেখা হয়েছে তা পুরোপুরি ঠিক।