সতর্কতা সত্ত্বেও কাবুলে হামলা, দায় কার?

Must read

কাবুল : বৃহস্পতিবার জোড়া বিস্ফোরণের পর রাজধানী কাবুল-সহ গোটা আফগানিস্তান তীব্র আতঙ্কে কুঁকড়ে গিয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বিস্ফোরণে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০৪। আহতদের অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা। মৃতদের মধ্যে ১৩ জন মার্কিন সেনা আছেন। কাবুল বিমানবন্দরের বাইরে বিস্ফোরণের ঘটনায় খোদ মার্কিন মুলুকেই প্রবল বিক্ষোভের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক। সন্ত্রাসবাদ দমনে গোটা বিশ্বকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছে বিদেশমন্ত্রকের তরফে। আফগান সেনা গোয়েন্দারা আগেই এই ধরনের বিস্ফোরণ হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট সেই সতর্কবার্তাকে বিশেষ আমল দেননি বলে অভিযোগ উঠছে। তার পরিণতিতে এই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে অনেকে মনে করছেন।

আরও পড়ুন : ছাত্রী নিগৃহে বিচার চেয়ে বিক্ষোভে সামিল কুণাল-শান্তনু

বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে, আমেরিকার উদাসীনতার কারণেই কি এতগুলো মানুষের প্রাণ অকালে ঝরে গেল? মার্কিন মুলুকেই ক্ষোভ, সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার মার্কিন কর্তাদের কে দিয়েছে? আফগানিস্তানের চলতি পরিস্থিতির জন্য আমেরিকার দায়িত্বজ্ঞানহীনতাই দায়ী। তাই এই হঠকারি সিদ্ধান্তের জন্য সে দেশের প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে জবাব দিতে হবে। কুখ্যাত জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। অনেকেই মনে করছেন, আইএস জঙ্গি মওলাই আসলাম ফারুকি এই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে।

ফারুকি পাকিস্তানের মানসপুত্র হিসেবেই পরিচিত। কিছুদিন আগে কাবুলের এক গুরুদুয়ারায় হওয়া হামলাতেও ফারুকি যুক্ত ছিল। ওই হামলায় ২৭ জনের প্রাণ গিয়েছিল। বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণের প্রেক্ষিতে জরুরি বৈঠকে বসে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের শীর্ষ কর্তারা। ওই বৈঠকে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর জানান, ভারতীয়দের ফিরিয়ে আনার জন্য সব ধরনের চেষ্টা চলছে। পরে বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী বলেন, অধিকাংশ ভারতীয়কেই দেশে ফেরানো হয়েছে। জোরকদমে চলছে উদ্ধার কাজ। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬টি বিমানে ৫৫০ জনকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। যার মধ্যে ২৬০ জন ভারতীয় নাগরিক। তবে, আর কতজন ভারতীয় সেদেশে আটকে আছেন সে ব্যাপারে বিদেশমন্ত্রক সঠিক ভাবে কিছু জানাতে পারেনি। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা গোটা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে আগামী সপ্তাহেই বিদেশ যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবারের বিস্ফোরণে ১৩ মার্কিন সেনার মৃত্যুর ঘটনায় আমেরিকায় প্রবল ক্ষোভের মুখে পড়েছেন বাইডেন। রাষ্ট্রসংঘে আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি বলেছেন, বাইডেন কি নিজেই পদত্যাগ করবেন, নাকি তাঁকে সরিয়ে দিতে হবে। তবে বাইডেনের পর যদি কমলা হ্যারিস দেশের প্রেসিডেন্ট হন তা হলে পরিস্থিতি আরও ১০ গুণ খারাপ হবে।

এখন ঈশ্বরই পারেন আমাদের রক্ষা করতে। নিকির বক্তব্য সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই রিপাবলিকান পার্টির একাধিক সদস্য অবিলম্বে বাইডেনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। আবার কেউ কেউ বাইডেনকে ইমপিচমেন্ট করার কথাও বলেছেন। বাইডেন ছাড়াও দেশের সহকারি প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস ও বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের পদত্যাগের দাবিও উঠেছে। মার্কিনীরা অনেকেই মনে করছেন, আফগানিস্তান থেকে হঠাৎ করে সেনা সরিয়ে নেওয়ার বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত হঠকারিতা ছাড়া কিছুই নয়। এটা বাইডেনের চরম উদাসীনতার প্রমাণ। যদিও বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার পর বাইডেন কড়া হুমকি দিয়ে বলেছেন, বিস্ফোরণে জড়িতরা কেউ পার পাবে না। প্রয়োজনে আমেরিকা অতিরিক্ত সেনা পাঠাবে। যারা এই কাজ করেছে আমেরিকা তাদের খুঁজে বের করে উপযুক্ত জবাব দেবে। মার্কিন সেনা-সহ বহু মানুষের এই আত্মবলিদান কখনোই বিফলে যাবে না। বিস্ফোরণ তাদের কাজ, আইসিসি এই কথা জানানোর পর আফগানিস্তানের স্বঘোষিত প্রেসিডেন্ট আমারুল্লা সালেহ বলেছেন, তাঁরা আগেই বলেছিলেন তালিবানের সঙ্গে আইএস ও হাক্কানি নেটওয়ার্কের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে। এ বিষয়ে তাঁদের কাছে প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। কিন্তু তাঁদের এই দাবি বিশ্বাস করেনি আমেরিকা। শেষ পর্যন্ত এতগুলো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে আমেরিকা পুরো বিষয়টি নিশ্চয়ই বুঝেছে। আফগান সেনার গোয়েন্দা বিভাগও কিছুদিন আগেই সতর্কবার্তা দিয়েছিল। কিন্তু গোয়েন্দা দফতরের সেই রিপোর্টকে আমল দেয়নি মার্কিন সেনা। আফগানিস্তানের তালিবান সরকারকে সমর্থন করছে পাকিস্তান, ইরান, চিনের মত হাতেগোনা কয়েকটি দেশ। তালিবান-সহ বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে সরাসরি মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি নিয়ে মুখ খুলেছে নর্দান অ্যালায়েন্স। বিরোধী জোটের নেতা আহমেদ মাসুদ জানিয়েছেন, তালিবান তথা অন্য জঙ্গি গোষ্ঠীকে যদি পাকিস্তান, ইরান এভাবে মদত জোগায় তবে তাদের উপযুক্ত জবাবের জন্য তৈরি থাকতে হবে। যথারীতি নাম না করে পাকিস্তানের ভূমিকার কড়া নিন্দা করেছে ভারতীয় বিদেশমন্ত্রক।

আরও পড়ুন : ছাত্রী নিগৃহে বিচার চেয়ে বিক্ষোভে সামিল কুণাল-শান্তনু

বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী কিছু দেশ জঙ্গিদের আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছে। তারা জঙ্গিদের সব ধরনের মদত দিচ্ছে। জঙ্গিরা সে দেশের মাটি ব্যবহার করে বিভিন্ন জায়গায় নাশকতা চালাচ্ছে। এটা মেনে নেওয়া যায় না। গোটা দুনিয়াকে মনে রাখতে হবে, সন্ত্রাসের কোনও সীমা হয় না। সন্ত্রাস কোনও জাত পাতের গণ্ডি মানে না। সন্ত্রাসবাদীদের একটাই ক্ষমতা তারা শুধু ধ্বংস করতে পারে। তাই সন্ত্রাসবাদীদের নির্মূল করা না হলে তার পরিণাম ভুগতে হবে গোটা বিশ্বকেই।

Latest article