প্রতিবেদন : মণিপুরে ঘটে-যাওয়া ভয়ঙ্কর ঘটনার সঙ্গে বাংলা বা অন্য রাজ্যের কোনও ঘটনার কোনও তুলনা চলে না। এই ঘটনা দেখে গোটা দেশ শিউরে উঠেছে। এই ভিডিও আমিও দেখেছি। আমরা আবার এই ধরনের ভিডিওর জন্য অপেক্ষা করব নাকি! আর মণিপুরে গত তিন মাস ধরে যে জাতিদাঙ্গা হয়েছে তাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। সোমবার এভাবেই সুপ্রিম (Supreme Court- Manipur) ভর্ৎসনা শোনা গেল মণিপুর নিয়ে একগুচ্ছ মামলার শুনানি চলাকালীন। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের (D y chandrachud) কথায়, আমরা সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত সংঘর্ষে নারীর প্রতি অভূতপূর্ব মাত্রার কিছু হিংসার ঘটনা নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু এখানে এটা বলা যাবে না যে নারীর বিরুদ্ধে অপরাধ বাংলাতেও হচ্ছে, কারণ এখানে (মণিপুরে) ঘটনা ভিন্ন। মণিপুর মামলায় আপনার কাছ থেকে কী পরামর্শ আছে বলুন? মণিপুরে যা ঘটেছে তা অন্যত্রও ঘটছে বলে আমরা বিষয়টিকে এড়িয়ে যেতে পারি না।
আরও পড়ুন- বোসের এক্তিয়ার বহির্ভূত পদক্ষেপ, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য
সম্প্রতি ইন্ডিয়ার সাংসদরা মণিপুরের (Supreme Court- Manipur) বিভিন্ন শিবির ঘুরে এসে তাঁদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। সেই রিপোর্ট নিয়ে এবার রাষ্ট্রপতির সাক্ষাৎ চাইল ‘ইন্ডিয়া’র নেতারা। মণিপুরের পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখে আসার পর তা নিয়ে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁকে সম্পূর্ণ বিষয়টি অবগত করাতে চান ইন্ডিয়ার নেতারা। তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের কাছে মণিপুরের নির্যাতিতা মহিলারা অভিযোগ জানিয়েছিলেন, দেশের রাষ্ট্রপতি একজন মহিলা হওয়ার পরও কেন মণিপুরের মেয়েরা অসুরক্ষিত অসহায়?
প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা এবং বিচারপতি মনোজ মিশ্রের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ, দু’জন উপজাতীয় মহিলাকে উন্মত্ত জনতার নগ্নভাবে প্যারেড করানোকে ‘ভয়াবহ’ বলেছেন। সেইসঙ্গে যৌন নিপীড়নের ভিডিওটির উল্লেখ করে বলেন, সময় ফুরিয়ে আসছে, মণিপুরের জন্য দ্রুততার সঙ্গে এর সমাধান প্রয়োজন। সোমবার মণিপুরের ভাইরাল ভিডিওর ঘটনায় নির্যাতিতা দুই মহিলার তরফে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করা হয়। বর্ষীয়ান আইনজীবী কপিল সিব্বাল, দুই নির্যাতিতা মহিলার পক্ষে সওয়াল করে বলেন, মামলায় সিবিআই তদন্ত বা অসমে মামলা স্থানান্তর, কোনওটাই চান না নির্যাতিতারা। একই সময়ে, সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা, সরকারের পক্ষে উপস্থিত হয়ে বলেন, আমরা কখনই মামলাটি অসমে স্থানান্তর করার অনুরোধ করিনি। বলেছি বিষয়টি মণিপুরের বাইরে স্থানান্তর করা হোক। প্রধান বিচারপতি বলেন, আমি নিজে সেই ভিডিও দেখেছি, সেই ভিডিও এমন কিছু যা জাতীয় ক্ষোভ উসকে দিয়েছে। একই সময়ে ভিডিওটি আদালতের হস্তক্ষেপের কারণ হয়ে উঠেছে। এরপর তুষার মেহতা বলেন, সিবিআই তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে কেন্দ্রের কোনও আপত্তি নেই। সুপ্রিম কোর্ট মনিটর করলে স্বচ্ছতা থাকবে। একজন আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং বলেন, এই বিষয়ে একটি উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করা উচিত, এতে সুশীল সমাজের সাথে যুক্ত মহিলাদেরও রাখতে হবে, যাঁদের এই ধরনের বিষয়ে অভিজ্ঞতা রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি বলেছেন, সিবিআইকে বিষয়টি তদন্ত করতে দিন, আমি নিজেই তদন্ত পর্যবেক্ষণ করব। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, যে ভিডিওটি বেরিয়েছে, এটি মহিলাদের বিরুদ্ধে একমাত্র ঘটনা নয়, সেখানে মহিলাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে কী ঘটেছে? মণিপুরে অন্য মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটেছে এমন সমস্ত ক্ষেত্রে আমাদের একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত। চন্দ্রচূড় বলেন, আমাদের আর কোনও ভিডিওর জন্য অপেক্ষা করা উচিত নয়। কেন্দ্র যে হলফনামা দাখিল করেছে তাতে দেখা যাচ্ছে যৌন হেনস্থার আরও অনেক ঘটনা রয়েছে। অন্যান্য মহিলাদের প্রতি হিংসার মোকাবিলায় আমাদের একটি ব্যবস্থাও তৈরি করতে হবে। শুধু এই তিন মহিলা নয়, মণিপুরে অপরাধের শিকার প্রতিটি মহিলার জন্যই ব্যবস্থা থাকা উচিত। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমরা এই মুহূর্তে তদন্ত বন্ধ করতে পারি না, কারণ হিংসায় জড়িত অপরাধীদেরও গ্রেফতার করতে হবে। মামলায় শূন্য এফআইআর নথিভুক্ত করার সময় নিয়ে মণিপুর পুলিশের আচরণে বিরক্তি প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট। মঙ্গলবার আবার এই মামলার শুনানি রয়েছে।