প্রতিবেদন : বিলকিস বানোর ধর্ষকদের শাস্তির মেয়াদ শেষের আগেই কী কারণে মুক্তি দেওয়া হয়েছে সেই প্রশ্ন তুলে গুজরাত সরকারকে চাপে ফেলল শীর্ষ আদালত। গুজরাত দাঙ্গার এই গণধর্ষকদের মুক্তি দিতে বিজেপি সরকারের তৎপরতা নিয়ে সর্বস্তরে যে প্রশ্ন উঠেছিল, তা এবার শোনা গেল খোদ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের মুখেও। আদালতের কড়া প্রশ্নের মুখে কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি মোদিরাজ্যের সরকার।
আরও পড়ুন-হাতি মেরে দাঁত পাচারে অভিযুক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী
বিলকিসের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রশ্ন তুলেছে, কেন শাস্তির মেয়াদ শেষের আগেই গণধর্ষকদের মুক্তি দেওয়া হল? কিসের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত? কোন মাপকাঠিতে আগেভাগে বিলকিস বানোর ধর্ষকদের মুক্তি, তার সঠিক উত্তর দিতে না পারায় সুপ্রিম কোর্টের সামনে মুখ পুড়েছে মোদি-শাহের গুজরাত সরকারের। শীর্ষ আদালতের বিচারপতি বি ভি নাগারত্না ও উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চের মন্তব্য, গুজরাত সরকার পাতলা বরফের উপর রয়েছে। গণধর্ষণের অপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে ১৪ বছর জেল খাটার পরই তাদের কীভাবে ছেড়ে দেওয়া হল? তাহলে এই মাপকাঠিতে অন্য বন্দিদের কেন ছেড়ে দেওয়া হল না?
আরও পড়ুন-বাজি হাবের উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী
কেন শুধুমাত্র বিলকিস মামলার অপরাধীদেরই বেছে বেছে ছাড়া হয়েছে? গুজরাত সরকারের কাছে সুপ্রিম কোর্ট আরও জানতে চায়, জঘন্য অপরাধের এই দোষীদের ১৪ বছর পর সংশোধনের সুযোগ দেওয়ার যে কথা বলা হচ্ছে, সেই নীতি কি বাকি বন্দিদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য? ভুল সংশোধন করার সুযোগ তো সকলেরই প্রাপ্য। এই সুযোগ কতজন পেয়েছেন? জেলগুলি কি উপচে পড়ছে? পরিসংখ্যান দিক সরকার।
বিলকিসের অপরাধীদের জন্য কীসের ভিত্তিতে জেল উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করা হয়েছিল, তাও গুজরাত সরকারের কাছ থেকে জানতে চেয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। মামলার শুনানি সেখানে না হওয়া সত্ত্বেও গোধরা আদালতের মতামত চাওয়া হল কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
আরও পড়ুন-ঘরে বসেই লক্ষ্মীলাভ
গুজরাত সরকারের হয়ে সওয়াল করেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু। তাঁর সাফাই, আইন মেনেই এই অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাজু আরও জানান, যেহেতু বিলকিসের ধর্ষকেরা ২০০৮ সালে দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন, তাই ১৯৯২ সালের নীতি বিবেচনা করা হয়েছে।
গত বছরের ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসে বিলকিসকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জনকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গুজরাতের বিজেপি সরকার। রাজ্যের বিধানসভা ভোটের আগে সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের হাওয়া তুলতেই বিলকিস-ধর্ষকদের মুক্তি, অভিযোগ তোলে বিরোধী শিবির। মুক্তির পর সাজাপ্রাপ্ত ধর্ষকদের ফুলমালায় বরণ করে নিতে দেখা যায় বিজেপি বিধায়ক ও গেরুয়া শিবিরের লোকজনকে।
আরও পড়ুন-বর্ষার উৎসব তিজ
খোদ বিলকিস অভিযোগ তোলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কেন মেয়াদ শেষের আগে ১১ জন ধর্ষক এবং বিলকিসের শিশুসন্তান-সহ পরিবারের অন্যান্যদের খুনিকে ছাড়া হল, এই নিয়ে বিতর্ক বাধে। অভিযোগ ওঠে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন বিভিন্ন সময় প্যারোলে মুক্তি পেয়ে যখন জেলের বাইরে ছিল, তখনও তাদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে। ধর্ষকদের মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একাধিক আবেদন জমা পড়েছে। শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন বিলকিস বানো।