রাখি গরাই, বাঁকুড়া : বাংলার প্রায় ৩০০ বছরের পুরানো প্রাচীন লোকসঙ্গীত টুসুগান ও টুসুপুজো। মূলত এই টুসুগান মহিলারা ইতু পুজোর পর থেকে পৌষ মাসের সংক্রান্তি পর্যন্ত সন্ধেবেলা গেয়ে থাকেন। গ্রামবাংলার পথেঘাটে পৌষ মাস পড়লেই টুসু গানের সুর ভেসে আসে। টুসুর আদি জন্মস্থান পুরুলিয়া জেলায়। কথিত আছে, পুরুলিয়ার আদিবাসী ঘরে টুসুর জন্ম। এই টুসুর সাহায্যেই মুর্শিদাবাদ নবাবের পুত্রের রোগমুক্তি ঘটেছিল। নবাব তাই পুণ্যবতী রমণীকে মুর্শিদাবাদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
আরও পড়ুন-সোমবার থেকে পঞ্চায়েত দফতরের উদ্যোগে করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে পৌঁছবে রান্না করা পুষ্টিকর খাবার
আদিবাসীরা একজোট হয়ে সেই চক্রান্ত রুখে দিয়েছিলেন। নবাবের হাত থেকে রেহাই পেতে পুণ্যবতী টুসু সংক্রান্তিতে নদীতে জীবন বিসর্জন দিয়েছিলেন। এরপর থেকেই অন্ত্যজ শ্রেণির কাছে টুসু দেবী রূপে পূজিতা। আজকাল বাংলায় যেসব লোকসংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে, তার মধ্যে টুসু অন্যতম। গ্রামেগঞ্জে ঘুরে গান গেয়ে যা কিছু উপার্জন হয়, তাই দিয়ে মেয়েরা টুসুপুজো করত। সারারাত জেগে টুসুগানের মহড়া চলত। সেসব আজ অতীত।
আরও পড়ুন-পদ্মের প্রচারে শিশুশ্রম, শিলিগুড়ি পুরসভা
এখনকার ছেলেমেয়েরা টুসুগানে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। তার মধ্যেও জঙ্গলমহলের কিছু কিছু জায়গায় এটা প্রচলিত আছে। বাঁকুড়া জেলার কিছু অংশ এবং পুরুলিয়া জেলায় এই টুসুর পরব দেখতে পাওয়া যায়। করোনা আবহে গত দু বছর বাড়ি বাড়ি টুসু নিয়ে বেরোতে পারেনি কেউ। এ বছরও করোনা বাড়ছে। টুসুগান গেয়ে ঢেঁকিতে চাল কোটা হারিয়ে যেতে বসেছে। এখন চাল মেশিনে কুটে নেওয়া হয়। এখনও মুষ্টিমেয় যাঁরা এই সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন, তাঁদের কুর্নিশ জানাতেই হয়।