প্রতিবেদন : সংবাদপত্রপ্রেমীদের জন্য দুঃসংবাদ। চরম আর্থিক অনটনের ধাক্কায় বন্ধ হয়ে গেল অস্ট্রিয়ার ৩২০ বছরের পুরোনো সংবাদপত্র উইনার জাইটুংয়ের (Wiener Zeitung) মুদ্রণ। কয়েক শতকের বর্ণময় অলিগলি ছুঁয়ে যে সংবাদপত্র নিজেই এক চলমান ঐতিহাসিক দলিল। অর্থসংকটে ন্যুব্জ হয়ে সেই পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রকাশকরা। ফলে ১ জুলাই থেকে পত্রিকার শুধু অনলাইন সংস্করণই প্রকাশিত হচ্ছে। তবে দৈনিক মুদ্রণ বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুঃখ ঘোচাতে বিকল্প ভাবনাও রয়েছে সম্পাদকীয় বিভাগের। ছাপার অক্ষরে এই সংবাদপত্রের একটি মাসিক সংস্করণ যাতে অন্তত প্রকাশ করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।
৩২০ বছরের পুরনো সংবাদপত্র ছাপার অক্ষরে মুদ্রণ (Wiener Zeitung) বন্ধের সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। ১৭০৩ সালের ৮ অগাস্ট যাত্রা শুরু সংবাদপত্রের। এরপর ১৮৫৭ সালে তৎকালীন সম্রাট ফ্রানজ জোসেফের আমলে পত্রিকাটি রাষ্ট্রীয় মালিকানায় নেওয়া হয়। এটিই ছিল অস্ট্রিয়ার প্রথম সরকারি পত্রিকা। ৩০ জুন সংবাদপত্রের শেষ মুদ্রিত সংস্করণটির প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে, ৩২০ বছর, ১২ রাষ্ট্রপতি, ১০ সম্রাট, দুই প্রজাতন্ত্র… একটিই সংবাদপত্র।
আরও পড়ুন- বিশ্বকাপে নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রসঙ্গত, অস্ট্রিয়ার এই ঐতিহাসিক সংবাদপত্রটি সরকারি মালিকানাধীন হলেও এর সম্পাদকীয় বিভাগ ছিল পুরোপুরি স্বাধীন। আর সম্পাদকীয় মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে স্বাধীনতা বজায় রাখায় পাঠকমহলে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এই সংবাদপত্র। তবে বেশ কয়েক বছর ধরেই এই সংবাদপত্রের নিজস্ব আয় ক্রমশ কমেছে। আয় কমার দরুণ দৈনন্দিন খরচ বহন করা কঠিন হয়ে উঠেছিল। ব্যয়সঙ্কোচনের স্বার্থে ছাঁটাই হয়েছিলেন বহু কর্মী। সম্পাদকীয় বিভাগে কর্মীর সংখ্যা শেষমেশ মাত্র ২০-তে এসে পৌঁছয়। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর শেষপর্যন্ত ঐতিহ্যশালী সংবাদপত্রটি ছাপার অক্ষরে প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেল। সংবাদপত্র বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পাঠকদের সান্ত্বনা দিয়ে
অস্ট্রিয়া সরকারের দাবি, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে পত্রিকাটি অনলাইনে প্রকাশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। ১ জুলাই থেকে এই সংবাদপত্রটি ছাপার অক্ষরের পরিবর্তে অনলাইনে পাওয়া যাবে। এজন্য নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যদিও ইতিমধ্যেই অভিযোগ উঠছে, কয়েক শতকের ইতিহাস পরিক্রমা করা এমন একটি ঐতিহ্যশালী সংবাদপত্রের মুদ্রণ অক্ষুণ্ণ রাখতে কেন যথাযথ আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা করবে না দেশের সরকার?