২৩ এপ্রিল, দিনটিকে স্বাভাবিকভাবেই মানুষ মনে রাখে আন্তর্জাতিক বই দিবস হিসাবে। কিন্তু মলাটের ভাঁজে পড়ার রীতিকে পাল্টে দিয়ে আধুনিক বিশ্বে এক অন্য ইতিহাস শুরু হয়েছিল এই দিন থেকেই। কাগজ- পর্বকে ছাপিয়ে উঠে আসছে অডিও- মাধ্যম। বলছি ‘ইউটিউব’-এর কথা।
২০০৫ সালে এই দিনেই প্রথম ভিডিও আপলোড করা হয় ‘ইউটিউব’ (YouTube) নামক ভিডিও আপলোডিং সাইট–এ। ভিডিওটির নাম ‘মি অ্যাট জু’, আপলোড করেছিলেন ইউটিউবের কো-ফাউন্ডার জাভেদ করিম। সেই শুরু। প্রাথমিকভাবে মনে হবে, ইউটিউব মানে তো সিনেমা, খেলা, মিউজিক, ভিডিও বা এককথায় বলা যেতে পারে মনোরঞ্জনের মাধ্যম। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের এটাও জানা উচিত, ইউটিউব-এর একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার হাতিয়ার। “যা দেখি, তাই শিখি” ধারণাকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগানোর জন্য অবশ্যই অন্যতম সেরা মাধ্যম হয়ে উঠতে সক্ষম ইউটিউব। শুধু তাই নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া এরকম উন্নতমানের দেশগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই ইউটিউবকে ব্যবহার করা হচ্ছে পঠন-পাঠন ব্যবস্থার অঙ্গ হিসাবে।
আরও পড়ুন: বিজেপির টার্গেট এবার মেধা পাটেকর
এমনিতেই উন্নতমানের শিক্ষাব্যবস্থায় বর্তমানে ই-লার্নিং সিস্টেমকে কাছে টেনে নেওয়া হচ্ছে। প্রি প্রাইমারি, মন্তেসরি, কিন্ডার গার্ডেন স্তরে শিশুদের শিক্ষাদানের জন্য ছবি এঁকে, অঙ্গ দেখিয়ে বা পারফরমিং আর্টসের সাহায্য নেওয়া হয়। ছাপার অক্ষরের থেকেও দৃশ্য-মাধ্যমে কোনও কিছুর পাঠ যে আরও বেশি মস্তিষ্কগত হয়, এটা এমনিতেই প্রমাণিত সত্য। ফলে ভিডিও দেখে পড়াশুনা করার ক্ষেত্রেও যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে এই ইউটিউব (YouTube)। প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে ইউটিউব ‘ইউটিউব ফর স্কুলস’ বলে একটি আলাদা প্রোফাইল তৈরি করে। সেখানে একদিকে যেরকম নন-স্কুলস ভিডিওগুলি ব্লক করা হয়েছে, অন্যদিকে, সারা বিশ্বব্যাপী অজস্র শিক্ষক-শিক্ষিকাদের শিক্ষামূলক ভিডিও দেওয়া হয় এই প্রোফাইলে। পরবর্তীকালে ‘ইউটিউব এডু’ নামে আরও একটি জনপ্রিয় চ্যানেল তৈরি করে এই সাইট।
সমীক্ষা বলছে, বিশ্বের সর্বোচ্চ ইউটিউব পর্যবেক্ষণকারী দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। বাকিরা হল আমেরিকা, রাশিয়া, জাপান এবং ব্রাজিল ও অন্যান্য। ভারতে প্রায় ছয় কোটি ইউটিউব (YouTube) ইউজার রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশই ৩৫ বছর বয়সের নিচে। ইউনিভার্সিটি অফ কেপ টাউন- প্রফেসর সুমারি রুডট এবং ডমিনিক পেইয়ার- ২০১১ সালের একটি রিপোর্টে দেখানো হয়েছে, ক্লাসরুমে ইউটিউব-মাধ্যমে ভিডিও লার্নিং সিস্টেমে ৭১% ছাত্রছাত্রী চিরাচরিত পদ্ধতির থেকে বেশি উপকৃত হচ্ছেন। আর এই ইউটিউব-মাধ্যমে শিক্ষণের কথা বলতে গেলে শেষে অবশ্যই বলতে হবে সালমান আমিন খান-এর কথা। ২০০৩ সালে খান তাঁর ভাইঝিকে অঙ্ক শেখানোর জন্য প্রথম ইয়াহু ব্যবহার করেন। এরপর ভাইজির সঙ্গে তার বন্ধুরা যুক্ত হলে তিনি ইউটিউবে ভিডিও আপলোডের মাধ্যমে পড়ানোর চেষ্টা করেন। ধীরে ধীরে তাঁর এই পড়ানোর মাধ্যম জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নিজের ম্যানেজমেন্ট চাকরি ছেড়ে তৈরি তাঁর নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল খান অ্যাকাডেমি, এক বছরের মধ্যেই খান অ্যাকাডেমির ভিউয়ার্স অর্থাৎ দর্শক সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৫ কোটিতে। বর্তমানে এই খান অ্যাকাডেমির মাধ্যমে এশিয়া, আফ্রিকার প্রত্যন্ত অঞ্চলের পঠন-পাঠন করানো হচ্ছে।
ইউটিউব সম্পর্কে কিছু অভাবনীয় তথ্য
ইউটিউব কো ফাউন্ডার চেড হারলি, স্টিভেন চেন এবং জাভেদ করিম একসঙ্গে ‘পে-প্যাল’ নামক অনলাইন মানি ট্রান্সফার কোম্পানিতে কাজ করতেন। সেখান থেকেই তাঁদের ইউটিউব তৈরির বিষয়টি মাথায় আসে।
ইউটিউব- সবথেকে বেশি দেখা ভিডিও হল গ্যাং-ম্যান স্টাইল গানের ভিডিও।
ইউটিউব- কোনও ভিডিও বাফারিং করলে তত্ক্ষণাৎ কম্পিউটার কি বোর্ডের অ্যারো কি প্রেস করে স্নেক গেম খেলা যায়।
২০০৬ সালে গুগল ইউটিউব সাইটকে কিনে নেয়।
প্রতি ঘণ্টায় ১০০-র বেশি ভিডিও ইউটিউবে আপলোড হয়।
প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪৬,২৯৬টি ভিডিও দেখা হয় সারা পৃথিবী থেকে।