প্রতিবেদন : অশান্তি ও সন্ত্রাসের বাতাবরণের মধ্যেই শেষ হয় ত্রিপুরা বিধানসভা নির্বাচন (Tripura Assembly Election 2023)। ৬০ আসনবিশিষ্ট ত্রিপুরায় ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া ধীরগতিতে চলায় নির্ধারিত সময়ের পরেও বুথে বুথে লম্বা লাইন ছিল। বিকেল ৪টে পর্যন্ত ভোটদানের হার ছিল ৮১ শতাংশ। তবে সার্বিকভাবে এই হার ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ হবে বলেই মনে করা হচ্ছে। গেরুয়া সন্ত্রাসের সামনে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন তৃণমূল প্রার্থীরাও। বিধানসভা ভোটেও গেরুয়া-
সন্ত্রাস, রক্তাক্ত ত্রিপুরা : ভোটের আগের রাত থেকেই শাসক দল বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে বোমাবাজি, হুমকি, অশান্তি পাকানোর অভিযোগ এনেছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা। ভোটের (Tripura Assembly Election 2023) দিনও একের পর এক বুথে অবাধে ছাপ্পা, রিগিং করেছে গেরুয়াবাহিনী। লুট হয়েছে ভোট। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভয় দেখিয়েছে বাইকবাহিনী। গেরুয়া-সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের ত্রিপুরার ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ভোটের আগের দিন রাত থেকেই মানুষ যাতে বাড়ি থেকে বের হতে না পারে সেই কারণে ব্যাপক সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি করেছিল বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিশালগড়ের মতো জায়গায় রাতভর ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছে। কমলপুরের মতো বিধানসভা কেন্দ্রে রাত থেকেই হুমকি দেওয়া হয়েছে তৃণমূলের এজেন্টদের। যাতে তাঁরা বুথে যেতে না পারেন। কদমতলা কুর্তিতে তৃণমূলের এজেন্টের বাবাকে অপহরণ করা হয়েছে। ধনপুর, তেলিয়ামুড়া, খয়েরপুরের মতো অনেক জায়গায় ত্রিপুরার বাইরে থেকে লোক এনেছিল বিজেপি। যারা মানুষকে ভয় দেখিয়েছে।
নিষ্ক্রিয় কেন্দ্রীয় বাহিনী : ত্রিপুরায় হাইভোল্টেজ বিধানসভা নির্বাচনে ভোটারদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষ্য করা গেলেও, গদি বাঁচাতে সন্ত্রাসকেই হাতিয়ার করে রাজ্যের শাসক দল বিজেপি। কেন্দ্রীয় বাহিনী ও ভিন রাজ্য থেকে পুলিশ এনেও বিজেপির সন্ত্রাস রুখতে ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন। বিধানসভা ভোটে ফের রক্তাক্ত ত্রিপুরা। কমিশনে জমা পড়েছে ভূরি ভূরি অভিযোগ।
এ-প্রসঙ্গে তৃণমূলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, তবে অনেক জায়গাতেই মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা চোখে পড়েছে। শাসকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে মানুষ লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছে, এটা দেখে ভাল লেগেছে। তাই নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে না থাকলে, আরেকটু সক্রিয় ও সদর্থক ভূমিকা নিতে পারলে সামগ্রিকভাবে ভাল ভোট করা যেত। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে কার্যত বসিয়ে রাখা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিবিসি বিতর্কে নয়া ইন্ধন ধনকড়ের, আয়কর তল্লাশি অব্যাহত
একের পর এক ইভিএম বিকল : সকাল ৭টা বাজার আগেই বুথে বুথে ভোটারদের ভিড় থাকলেও একের পর এক ইভিএম বিকল হওয়ায় অনেক ভোটার ভোট না দিয়েই চলে যান। সামগ্রিকভাবে ভোট-প্রক্রিয়া চলেছে অনেক ধীরগতিতে। ফলে ভোটদানের হারেও তার প্রভাব পড়েছে। যা নিয়ে সরব হয়েছে তৃণমূল-সহ বিরোধীরা।
ঠুঁটো জগন্নাথ নির্বাচন কমিশন : ভোটদান পর্ব শেষ হওয়ার পর ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা মনে করেছিলাম যে জাতীয় নির্বাচন কমিশন হয়তো অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থা করবে। কিন্ত কিছু কিছু জায়গায় যেভাবে বিজেপির সন্ত্রাস চলেছে, সেখানে নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বলতে বাধ্য হচ্ছি।
ত্রিপুরাবাসীর পাশে তৃণমূল : দীর্ঘ ২৫ বছরের বাম অপশাসন থেকে মুক্ত করতে ২০১৮ সালে রাজ্যে পরিবর্তন আনে ত্রিপুরাবাসী। অনেক প্রত্যাশা, ভরসা, বিশ্বাস থেকে মানুষ অত্যাচারী সিপিএমের হাত থেকে ক্ষমতা তুলে দিয়েছিল বিজেপির হাতে। কিন্তু গত পাঁচবছরে মানুষ বুঝেছেন ত্রিপুরায় খাল কেটে কুমির এনেছেন তাঁরা। রাজ্যকে রসাতলে পাঠিয়েছে ডাবল ইঞ্জিন বিজেপি। অপশাসনে বামেদেরকেও টেক্কা দিয়েছে গেরুয়া শিবির। গত পাঁচ বছরে শিক্ষা থেকে স্বাস্থ্য, খাদ্য থেকে কর্মসংস্থানে ত্রিপুরাকে আরও পিছিয়ে দিয়েছে বিজেপি। পরিবর্তে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, ত্রিপুরা বিজেপির আমলে জঙ্গলরাজ্যে পরিণত হয়েছে। শান্তিপ্রিয় ত্রিপুরায় অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় পুরনিগমের নির্বাচন হোক বা নগর পঞ্চায়েত, ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে ত্রিপুরা জুড়ে। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের রক্ত ঝরেছে। অবাধে ছাপ্পা, রিগিং থেকে ভোট লুট করেছে বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। বিরোধীদের নামে দেওয়া হয়েছে ভুয়ো মামলা। মানুষকে ভয় দেখিয়ে বুথে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। বাদ যাননি পুলিশকর্মীরাও। আইনশৃঙ্খলা এতটাই ভেঙে পড়েছে যে মহিলা থানায় পর্যন্ত হামলা চালিয়েছে বিজেপি-আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ভোটের পর তৃণমূল কংগ্রেস সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নির্বাচনে জয়-পরাজয় মানুষ ঠিক করবে। কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস ত্রিপুরার উন্নয়নের স্বার্থে, পরিবর্তনের স্বার্থে ত্রিপুরাবাসীর পাশে ছিল, আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে, যতদিন না পর্যন্ত বাংলার মতো ত্রিপুরার মানুষ উন্নয়ন পায়। ত্রিপুরায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের এক ইঞ্চিও জমি ছাড়া হবে না।