নবনীতা মণ্ডল ও অনন্ত গুছাইত, নয়াদিল্লি : এবার ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের তোপের মুখে কংগ্রেস (Congress)৷ আর তারপরেই শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া৷ যার জেরে কংগ্রেসের অন্দরমহলেই লেগেছে আগুন৷ দলের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বর্ষীয়ান নেতা গুলাম নবি আজাদ (Gulam Navi Azad) স্পষ্ট ভাষায় বললেন, ২০২৪–এর ভোটে কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসার কোনও সম্ভাবনাই নেই৷ এখানেই শেষ নয়, দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে মুম্বইয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথার প্রতিধ্বনি করলেন রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন (Derek O’Brien)৷ সাফ কথা বললেন, ইউপিএ অর্থাৎ ইউনাইটেড পিপলস অ্যালায়েন্স বলে কিছু নেই৷ বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেই তার ইতি হয়েছে৷
বৃহস্পতিবার সকালে ভোটকুশলী পিকে কার্যত নাম না করে আক্রমণ করেন কংগ্রেস (Congress) ও রাহুল গান্ধীকে (Rahul Gandhi)৷ তাঁর বক্তব্য ছিল, কংগ্রেস কারও ব্যক্তিগত ইচ্ছা–অনিচ্ছায় চলতে পারে না৷ নেতৃত্ব আকাশ থেকেও তৈরি হয় না৷ তথ্য বলছে, শেষ ১০ বছরে কংগ্রেস ৯০% নির্বাচনে হেরেছে৷ বিরোধী নেতৃত্বের এখন সময় এসেছে বিষয়টি গণতান্ত্রিকভাবে ভাবার৷ অর্থাৎ পিকের কথায় পরিষ্কার, রাহুল গান্ধীর মরশুমি রাজনীতিকে তিনি প্রকাশ্যে কটাক্ষ করলেন৷ তাঁর নেতৃত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুললেন৷ কংগ্রেসের অন্দরমহলও রাহুলের ‘পার্ট–টাইম পলিটিক্স’ নিয়ে অনেকদিন ধরেই বিরক্ত৷ জাতীয় রাজনীতিতে যখন প্রতিরোধের প্রয়োজন হয়েছে তখন দেখা গিয়েছে রাহুল গান্ধী বিদেশে ছুটি কাটাচ্ছেন৷ যখন রাস্তায় নেমে কংগ্রেসের (Congress) আন্দোলনের দরকার হয়েছে, তখন রাহুল ট্যুইটেই নিজেকে সীমাবদ্ধ রেখেছেন৷ ফলে বিরোধী সর্ববৃহৎ দল হিসেবে ক্রমশ ব্যাকবেঞ্চে চলে গিয়েছে কংগ্রেস৷ সেই শূন্যতার জায়গা থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের (Trinamool Congress) উত্থান৷ এবং কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে তৃণমূল কংগ্রেসই বারবার সামনে সারিতে থেকেছে৷
আরও পড়ুন-বাংলায় আরও লগ্নি এবার আদানি গোষ্ঠীর
শুধু যে ঐতিহ্য ভাঙিয়ে আর চলবে না কংগ্রেসের (Congress) ক্রমশ কমতে থাকা গ্রহণযোগ্যতা সে কথাই বলে। পিকেও তাঁর ট্যুইটে কার্যত এটাও স্মরণ করিয়েছেন কংগ্রেস নেতৃত্বকে। একইসঙ্গে নেতৃত্ব যে আকাশ থেকে পড়ে না, আন্দোলন থেকেই উঠে আসে নেতা, রাহুল গান্ধীর গত কয়েকে বছরের পারফরম্যান্স গ্রাফ সে কথাই বলে। পিকের এই ট্যুইটের পরেই কংগ্রেসের অন্যতম মুখ এবং গান্ধী পরিবার ঘনিষ্ঠ গুলাম নবি আজাদও পিকের ট্যুইটকে সমর্থন করে কংগ্রেসের অন্দরেই তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন। কী বলেছেন গুলাম? আমি সবসময় চাইব কংগ্রেস ৩০০ আসনে জয়ী হোক৷ কিন্তু আমার মনে হয় না, ২০২৪–এর লোকসভা ভোটে কোনওভাবে তা সম্ভব হবে৷ আদৌ কংগ্রেস কি সরকার তৈরি করতে পারবে? আমার তো ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে৷ মন বলছে অনেক আগেই আটকে যাবে৷ গুলামের ট্যুইট থেকে পরিষ্কার, কংগ্রেসের যে কোনও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নেই এবং বহুদিন কেন্দ্রের ক্ষমতা দূরে থাকতে হবে তা পরিষ্কার। সেইসঙ্গে বর্তমান নেতৃত্ব যেভাবে চলছে, সে ব্যাপারে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব যে ঘোরতর অসন্তুষ্ট এবং কোনও ভবিষ্যৎ দেখছেন না তা গুলামের কথাতে পরিষ্কার। অর্থাৎ রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বকেই কার্যত চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যসভার প্রাক্তন এই সাংসদ।
কংগ্রেসের অন্দরে এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মাঝেই ডেরেক ও’ব্রায়েন ইউপিএর অস্তিত্বকে সরাসরি অস্বীকার করে বলেছেন, ইউপিএ নেই। ভোট পরবর্তী সরকার গঠনের জন্য তৈরি হয়েছিল। নির্বাচনের আগে কোনও জোট হয়নি। ফলে তৃণমূল কংগ্রেসের জোট ধরে রাখার দায়বদ্ধতাও নেই। বিজেপি সরকার গঠন হওয়ার পরেই অস্তিত্ব হারিয়েছে ইউপিএ। যদি সত্যি কংগ্রেসের মনে হয় বিজেপিকে হারাতে হবে, তাহলে বিরোধী শিবিরের মুখ বদল দরকার। আর সেই মুখ অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জনপ্রিয়তা এবং গ্রহণযোগ্যতার নিরিখে তিনি শীর্ষে। শুধু তাই নয়, দেশের বিভিন্ন রাজ্যে জিতে আসার পর বিজেপি মুখ থুবড়ে পড়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্যেই। মুখ পুড়েছে বিজেপির। নেত্রীকে ঘিরে ধরেই স্বপ্ন দেখছে বিরোধীরা। তাঁকে ঘিরেই আন্দোলন আবর্তিত হচ্ছে বাংলা থেকে ত্রিপুরা, অসম, গোয়া, মেঘালয়, হরিয়ানায়। দিল্লিতেও লহর। সেটা শুধু অপেক্ষার। নতুন করে সব কিছু শুরু করতে হবে বিরোধীদের। কংগ্রেস যদি আন্দোলন বিমুখ হয় তাহলে তো বিরোধীরা বসে থাকতে পারে না। তৃণমূল কংগ্রেস চায় কংগ্রেসকে নিয়েই চলতে। কিন্তু তারা ক্রমশ মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে। দেশের মানুষ মনে করছেন আসল কংগ্রেস তৃণমূলই। ফলে তাঁদের দোয়া এবং আশীর্বাদ নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস লড়বে। সাম্প্রদায়িক শক্তিকে প্রতিহত করবে। অগণতান্ত্রিক স্বৈরাচারীদের দিল্লির তখ্ত থেকে সরাবে। সবচেয়ে বড় কথা হল, দেশ দেখেছে বারবার বিজেপির কাছে কংগ্রেস হেরেছে। পারেনি প্রতিহত করতে। আর দেশ দেখছে বিজেপি হেরেছে তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে। ফলে তৃণমূল কংগ্রেসকে ঘিরে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার জায়গা তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিকই। ডেরেক তথ্য দিয়ে বলেন, ইউপিএ জোট হওয়ার পর থেকে কংগ্রেস প্রায় এক-তৃতীয়াংশ কমেছে। আর কমেছে বামফ্রন্ট, আরজেডি। তৃণমূল কংগ্রেস বেড়েছে। সংখ্যাই প্রমাণ করছে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলা ছাড়িয়ে দেশের মানুষের কাছাকাছি পৌঁছচ্ছে।
দীর্ঘদিন ধরেই কংগ্রেসের অন্দরে শীর্ষ নেতারা রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এবার পিকের মতো ভোট কুশলীও একই প্রশ্ন তুলে দিলেন, আর তাঁকে সমর্থন গুলাম নবির। তিনি প্রকাশ্যে বলছেন, অন্দরে কার্যত ঝড় উঠেছে।