ব্রাত্য বসু (শিক্ষামন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ সরকার): ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারি পথচলার শুরু তৃণমূল কংগ্রেস-এর। জনগণমন নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) স্বপ্ন আর সংগ্রামের তৃণমূল কংগ্রেস। মা-মাটি-মানুষের তৃণমূল কংগ্রেস। সেই যাত্রাপথে বহু বাধা বিঘ্ন এসেছে— এসেছে আঘাত আর অপমান। কিন্তু মানুষ সঙ্গ ছাড়েনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের— আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সঙ্গ ছাড়েননি মানুষের। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই পথ বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রামের পথ। সিঙ্গুর থেকে নন্দীগ্রাম, যেখানে ক্ষমতার দম্ভ মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিতে চেষ্টা করেছে, সেখানেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata banerjee)। নিরন্তর লড়াই আজ ইতিহাস– সে ইতিহাসের পাতা আজ আর ওলটাব না। বরং ২০১১-র মে মাসে মানুষের আশীর্বাদ নিয়ে যে পথচলার শুরু, আসুন আজ খানিকক্ষণ পদচারণা করা যাক সেই পথে।
২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। তারপর থেকে প্রতি ক্ষেত্রে বাংলা এগিয়ে চলেছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। এ রাজ্যে সরকার নারীদের উন্নয়নে নিয়েছে অসাধারণ সমস্ত প্রকল্প। নারী ক্ষমতায়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগান্তকারী প্রকল্পগুলি, যথা ‘কন্যাশ্রী’, ‘স্বাবলম্বন’, ‘মুক্তির আলো’, ‘সবলা’, ‘রূপশ্রী’ প্রভৃতির যথাযথ রূপায়ণ এবং অসাধারণ সাফল্য এই দশ বছরেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। সাম্প্রতিকতম প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ সাড়া ফেলেছে সারা দেশে। এছাড়াও শিশুসাথী, শিক্ষাশ্রী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, সমব্যাথী, গতিধারা, যুবশ্রী, মানবিক, সবুজসাথী, দুয়ারে সরকার প্রভৃতি প্রকল্পগুলি রাজ্যের প্রান্তিক শ্রেণির মানুষদের জীবনে যে নয়া দিগন্তের সূচনা করেছে, তাকে স্বীকৃতি জানানো হয়েছে বিশ্বব্যাঙ্কের সাম্প্রতিক এক রিপোর্টেও। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে যখন প্রথম দায়িত্ব নেন, তখন তাঁর সামনে পাহাড়প্রমাণ ঋণের দায় ছাড়াও রাজ্যের জঙ্গলমহলে মাওবাদী উপদ্রব, উত্তরে অশান্ত দার্জিলিং প্রভৃতি জ্বলন্ত সমস্যাগুলি তাঁর পথে কাঁটার মতো ছড়িয়ে। মাওবাদী দমনে আমাদের নেত্রী কঠোর পদক্ষেপ নিতে দ্বিধাগ্রহণ করেননি। জঙ্গলমহলের জন্য তিনি বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। জঙ্গলমহলের মানুষদের জন্য পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। দু’টাকা কেজি দরে চাল দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। জঙ্গলমহলের মানুষের জীবনছন্দ স্বাভাবিক সুরে বেজে উঠেছে আবার। পাহাড়ের জন্য আলাদা কমিটি গঠন করেছেন। পাহাড়ের বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রেখেছেন। তিনিই প্রথম এবং বোধ করি একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী, যিনি প্রত্যেক মাসে বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করে প্রতিটি সমস্যার কথা শুনেছেন বারেবারে এবং সমাধানের পথ দেখিয়েছেন তৎক্ষণাৎ। কর্মসংস্কৃতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন নবান্ন থেকে জেলায়, প্রতিটি প্রশাসনিক স্তরে, সর্বত্র। ধর্ম এবং রাজনীতি নির্বিশেষে সমস্ত শ্রেণির মানুষের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনপ্রিয়তা তাই আজ আকাশচুম্বী। রাজ্যের ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য-পরিষেবাকে উন্নয়নের চূড়ায় নিয়ে যেতে তাঁর উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। একদিকে রাজ্যের সাহিত্য-সংস্কৃতির বিস্তারের ক্ষেত্রে তাঁর অসামান্য অবদান, আবার অন্যদিকে কৃষকরা যাতে তাঁদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পান সে জন্যও তিনি তৎপর। রাজ্যে পিপিপি মডেলে স্কুল-কলেজ এবং হাসপাতাল প্রভৃতি খোলার উদ্যোগ তিনিই প্রথম নিয়েছেন। সংখ্যালঘু উন্নয়নের লক্ষ্যে, চাকরি ক্ষেত্রে এবং উচ্চশিক্ষায় সংরক্ষণ ঘোষণা করেছেন। সংখ্যালঘু মানুষের সংকটের বিভিন্ন দিকগুলি তিনি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে দেখেছেন। রাজ্যে এই প্রথমবার, বহু সংখ্যালঘু মানুষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধিকার অর্জন করেছেন। পঞ্চায়েতে সংখ্যালঘুদের এত বড় সুযোগ অন্য সরকার দেয়নি। ফলত নিশ্চিতভাবে, সামগ্রিক বিচারে এই উন্নয়নকে সর্বাত্মক এবং সার্থক বলা যায়। যা সম্ভব হয়নি চৌত্রিশ বছরের বামশাসনে, তা মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এগারো বছরে করে দেখিয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। বিরোধীদের জোট যে মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে, বাংলা চেয়েছে তার নিজের মেয়েকেই, তার প্রমাণ তৃণমূল সরকারের পুনরায় দায়িত্বে প্রত্যাবর্তন। শিক্ষা, চাকরি, বাসস্থান— সমস্ত দিক থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল সরকার দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃত উন্নয়ন কাকে বলে।
আরও পড়ুন-প্রতিষ্ঠাদিবসে কলম ধরলেন মহাসচিব তথা শিল্পমন্ত্রী
মানুষের জন্য লড়াইয়ে তৃণমূল কংগ্রেস নিজেদের দায়বদ্ধতা কিন্তু আজও ধরে রাখতে পেরেছে। প্রতিপক্ষ যে রাজনৈতিক দলই হোক না কেন, মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata banerjee) প্রমাণ করে দিয়েছেন যে রাজ্যের তথা সর্বভারতীয় রাজনীতিতে তিনি অনিবার্য। ইতিমধ্যেই জাতীয় দল হিসেবে সর্বভারতীয় মর্যাদা পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস আবারও বিপুল বিজয় পেয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল বিজেপিকে বহু পিছনে ফেলে। বিজেপিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আনার জন্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী আর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বহুবার এই বাংলায় এসে সভা করেছেন, কিন্তু ভোটের লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারেননি পায়ে চোট পেয়ে হুইলচেয়ারে বসে প্রচারাভিযান চালানো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। সেইসঙ্গে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম শক্তিশালী চিন্তা, কুশলী ও সংগঠন ভাবনার নয়া পথের দিশারি হয়ে উঠে দলকে নতুন অক্সিজেন তথা মাত্রা দিলেন, দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক ও তরুণ নেতা শ্রী অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০২১ বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বিপুল গরিষ্ঠতায় জিতিয়ে আনতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রধান সেনাপতি ছিলেন তিনিই। বৈষম্যহীন উন্নয়ন ও স্বচ্ছ প্রশাসন রাজ্যের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও বদ্ধপরিকর। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে বাংলায় পুনরায় দায়িত্বে ফিরিয়ে আনার পর তিনি এখন সংগঠনকে ঢেলে সাজাচ্ছেন। বাংলার তথা ভারতবর্ষের বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন ও সদস্য সংখ্যা বাড়াতেও অভিষেক দৃঢ় পদক্ষেপ নিচ্ছেন। বাংলার উন্নয়নে ও সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে আদর্শ ভারত গড়তে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে দিদির যোগ্য উত্তরসূরি। বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে, এলাকায় এলাকায় বেরিয়ে সুচিন্তিত, যুক্তিপূর্ণ এবং ঝাঁঝালো আক্রমণে প্রচারের ঝড় তুলেছিলেন তিনি। রাজ্যের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চষে বেড়িয়েছেন, তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসনে বিগত দশ বছরে রাজ্যের উন্নয়নের জোয়ারের চিত্র। বাংলার মানুষের অধিকার যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী প্রতিষ্ঠিত করেছেন, সেই লড়াইয়ের মন্ত্র বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। আগামী দিনের কর্মসূচি প্রচারের মূল দায়িত্বও নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন অভিষেক। দলীয় কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, মানুষের কাছে পৌঁছে যেতে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যে উন্নয়নযজ্ঞ চলছে, সেই উন্নয়নের বার্তা রাজ্যবাসীর কাছে পৌঁছে দিয়ে তৃণমূলের জয় সুনিশ্চিত করেছেন তিনি। শৃঙ্খলা আর অনুশাসনই হল সংগঠন গড়ার হাতিয়ার— আর মজবুত সংগঠনই যে কোনও রাজনৈতিক দলের ভবিষ্যৎ। সেই পথেই হাঁটছেন দূরদর্শী অভিষেক। বয়সে নবীন হলেও, রাজনৈতিক বিচক্ষণতার সার্থক বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে সমর্থ হয়েছেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক। সরকারের উন্নয়নমুখী বিবিধ তুমুল কার্যকলাপে যোগদান করতে ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষও ভিড় জমাতে শুরু করেছেন।
এই বছর থেকে ১ জানুয়ারি দিনটি রাজ্যে ছাত্রদিবস হিসেবে পালন করা হবে, একথা ঘোষণা করেছেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন বৈষম্যহীন উন্নয়ন কাকে বলে। গত ২৪ বছর ধরে দাঁতে দাঁত চেপে তাঁর যে নিরন্তর লড়াই, যে অনমনীয় জেদ এবং ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা, সামনে দাঁড়িয়ে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার অসাধারণ দক্ষতা, একদিকে কঠিন শাসক অন্যদিকে মধ্যবিত্ত বাড়ির গৃহকর্ত্রীর মতো রাজ্যের মানুষকে সন্তানসম আগলে রাখার স্নেহ জননেত্রীকে কিংবদন্তি করে তুলেছে। তাই ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল এবং উন্নত ভারত গড়ার লক্ষ্যে সর্বভারতীয় সমাজে মানবীয় চিন্তাচর্চায় যথার্থ আগ্রহী অংশের চাকরিজীবী, কৃষিজীবী, সাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, শিল্পী, রাষ্ট্রচিন্তক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী সর্বোপরি আমজনতার মধ্যে তিনি আলোড়ন তুলেছেন। জাতীয় রাজনীতিতে প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন বাংলার মেয়ে। কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা আসমুদ্র-হিমাচল গোটা ভারতবর্ষকে যথার্থই মেলাবেন।— মেলাবেন তিনি
তোমার আমার নানা সংগ্রাম
দেশের দশের সাধনা
সুনাম, ক্ষুধা ও ক্ষুধার যত পরিণাম
মেলাবেন।