বিশ্বজুড়ে এক ভয়ানক অতিমারির সময় চলছে যখন, সেই সময়েই এসে গেল ৪ ফেব্রুয়ারি তারিখটি। বিশ্বে এই দিনটি আরেক ভয়ানক মারণব্যাধির মহামারী রূপেই চিহ্নিত। এই মারণব্যাধির নাম ক্যান্সার (WORLD CANCER DAY)। যে রোগের এখন পর্যন্ত সঠিক নিরাময়ের দিশা মেলেনি। তবে আক্রান্ত রোগীকে আধুনিক চিকিৎসায় এই পৃথিবীতে বেশ কিছু বছর প্রাণদান করতে পারার মতো অনেক ওষুধ তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। নিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এবং এই চিকিৎসায় চিকিৎসকদের ভূমিকা তুলনাহীন।
এই মারণ রোগটির প্রতি বিশ্বময় মানুষকে সচেতন করতেই ২০০০ সালে প্রথম ৪ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে ‘ক্যান্সার দিবস’ পালন করা শুরু হয়। এই দিনটিতেই নানান আলোচনা সেমিনার ও সচেতনার বার্তা দেওয়া হয়ে হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী ক্যান্সার (WORLD CANCER DAY) মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করার ডাক দেওয়া হয়েছিল প্যারিসে। ফরাসি রাষ্ট্রপতি জ্যাক শিরাক ও সে সময়ের ইউনেস্কোর পরিচালক কোইচিরো মাতসুরা এই দিনটি উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেন। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয় সচেতনতার বার্তা।
ক্যান্সার একটি মারাত্মক ব্যাধি এ কথা আজ আর নতুন কথা নয়। বিশ্বে প্রতি দশজন মহিলার মধ্যে একজন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। পুরুষদের মধ্যে ২০ থেকে ২৯ শতাংশ মানুষ নাকি শুধুমাত্র তামাক সেবনের জন্য এই রোগে আক্রান্ত হন। বিশ্ব জুড়ে তামাক সেবনের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞাপন সচেতনতা।
সংক্ষেপে বলা যায়, মানবদেহে অনেকগুলি কোষ রয়েছে, সেই কোষের মধ্যে কিছু কিছু চুতিক্রমী ভাবে বৃদ্ধি পেতে থাকে যা থেকে সঠিক সময়ে সচেতন না হলে বা চিকিৎসা না করালে ক্যান্সার রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সারা বিশ্বে সব থেকে বেশি নাকি তিন ধরনের ক্যান্সার পরিলক্ষিত হয়। সেগুলি হল ব্রেস্ট ক্যান্সার, সার্ভাইক্যাল ক্যানসার ও ওরাল ক্যান্সার।
ভারতে, ২০১৮ সালে করা গবেষণা অনুসারে, পাঁচ বছরের সামগ্রিকভাবে বেঁচে থাকা ৭০ শতাংশ উন্নত দেশগুলির তুলনায় ভারতে সংক্রমনের সংখ্যা অনেক কম। ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত ১৮.৭ মিলিয়ন থেকে ২০১৯-এ বেডে ২৬ মিলিয়ন। ২০১৯ সালে ক্যান্সারে মৃত্যু ১০ মিলিয়ন ছুঁয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (IARC)-এর অনুমান অনুসারে, ২০১৮ সালে বিশ্বব্যাপী ১৭.০ মিলিয়ন মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন। এবং ৯.৫ মিলিয়ন ক্যান্সারে মৃত্যু হয়েছে। আগামী ২০৪০ সাল নাগাদ, জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং বার্ধক্যের কারণে বিশ্বব্যাপী ২৭.৫ মিলিয়ন মানুষ নতুন করে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা। যদিও দিন দিন সচেতনতার কারণে এই হার কিছুটা হলেও কমতে পারে। বিশেষ করে ধনী দেশগুলিতে। আশঙ্কা, নতুন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে ১৬.৩ মিলিয়ন ক্যান্সারে মৃত্যু হতে পারে আগামী কয়েক বছরে। জার্নাল আরও জানাচ্ছে কার্ডিও ভাসকুলার রোগের পরই ক্যান্সারে মৃত্যুর হার বেশি।
প্রতি বছর এই মারণরোগে ৮২ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারান। এটি এমনই একটি রোগ যার হাত থেকে পুরোপুরি নিষ্কৃতি মেলার পথ এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। এ কথা আগেই বলা হয়েছে। ধনী দেশের তুলনায় উন্নয়নশীল ও অনুন্নত দেশগুলিতে এই রোগের প্রকোপ বেশি। এর অন্যতম কারণ সেইসব দেশের মানুষের এই রোগ সম্পর্কে অসচেতনতা বা অজ্ঞতা। তামাক, অ্যালকোহল-সহ এমন কিছু বিষয় রয়েছে যেগুলি ক্যান্সারের অন্যতম কারণ। তবু মানুষ সচেতন নয়। খ্যাদ্যাভাস থেকে বায়ুদূষণ-সহ অনেকগুলি কারণ রয়েছে এই ব্যাধির অন্তরালে। তাই মানুষকেই সচেতন হতে হবে। তাই প্রতি বছর মানুষকে সচেতন করতে একটি করে স্লোগান বা থিম তৈরি করা হয়ে থাকে। ২০১৬-’১৭ সালে বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের থিম ছিল, ‘উই ক্যান, আই ক্যান,’ অর্থাৎ ‘আমরা পারব, আমি পারব’। বিশ্ব জুড়ে এমনই স্লোগান ধ্বনিত হয়েছিল। এ বছরের থিম ‘ক্লোজ দ্য কেয়ার গ্যাপ’। অসাম্য দূর করে এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। মূল কথা মারণব্যাধি থেকে দূরে থাকতে নিজেদেরই সচেতন হতে হবে। একমাত্র তা হলেই এই ভয়ানক রোগ থেকে দূরে থাকতে বা প্রতিহত করতে পারবে সকলে।
শুধু বড়রাই নয়, দিন দিন শিশুদেরও আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী প্রতি বছর অন্তত তিন লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। তবে এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আক্রান্ত সেরে উঠতে পারে। চাইল্ড ক্যান্সার বোঝাতে ১৮ বছরের কম বয়সিদেরই বোঝায়। শিশুদের মধ্যে লিউকোমিয়া বা রক্ত-সংক্রান্ত ক্যান্সারই বেশি দৃষ্ট হয়। এটি জিনগত রোগ বলেও বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন।
এই মারণব্যাধি কোনও সাদা-কালো বোঝে না। কোনও সাধারণ-অসাধরণ বোঝে না। ধনী-দরিদ্রের ফারাক নেই। দরিদ্র মানুষও আক্রান্ত হতে পারেন, আবার বিশ্বখ্যাত শিল্পী-কবি-গায়ক, অভিনেতা-অভিনেত্রী থেকে বিশ্বের তাবড় তাবড় নেতা-নেত্রীর জীবনে থাবা বসিয়ে তাঁদের জীবনের যাত্রাপথকে থমকে দিয়েছে।