নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি: উত্তরপ্রদেশের উন্নাও। একটা সময় নিয়মিত খবরের শিরোনামে। আগামীকাল চতুর্থ দফায় ভোট এখানে। ভোটের ময়দান সরগরম সব রাজনৈতিক দলের উপস্থিতিতে। বিজেপির প্রার্থী পঙ্কজ গুপ্তের বিপক্ষে কংগ্রেসের হয়ে লড়াইয়ে নেমেছেন উন্নাওকাণ্ডে নির্যাতিতার মা আশা সিং। কিন্তু ভোটের প্রচার-প্রতিশ্রুতির বাইরে এখন ঠিক কেমন আছে উন্নাও? রাজনীতির চাপানউতোর আর মিডিয়ার প্রচারকে সরিয়ে রাখলে দেখা যাবে স্বাধীনতার এত বছর পরেও যেন পরাধীন উন্নাওবাসী।
আরও পড়ুন-৫ বছরের জেল লালুর, পশুখাদ্য মামলায় রায়
সেখানকার সাধারণ ঘরের মেয়েদের জীবন শুধু দুর্বিসহই নয়, নিরাপত্তাহীনতার ঘন আঁধারে ডুবে এখনও। একটি উন্নাওকাণ্ড প্রচারে এলেও আকছার এরকম বহু ঘটনার মুখে পড়তে হয় সেখানকার দলিত, গরিব পরিবারের মেয়েদের। প্রাণের ভয়ে সেসব ঘটনা প্রশাসন পর্যন্ত নিয়ে যেতেই সাহস পান না অধিকাংশ মানুষ। প্রতিবাদ-আন্দোলন তো পরের কথা! বিজেপি আর যোগী আদিত্যনাথের জমানায় উন্নাওয়ের নারী সুরক্ষার হাল আরও খারাপ হয়েছে। জাতপাতের বৈষম্য বেড়ে গিয়েছে আগের চেয়েও বেশি। জানালেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ রাম সিং। তাঁর মতে, যত প্রচারই হোক, উন্নাও আছে উন্নাওতেই।
আরও পড়ুন-ভারতের পাশে
দলিত মহিলাদের উপর নির্যাতনের জঘন্য ঘটনাই সাম্প্রতিককালে উন্নাওয়ের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বাকি ভারতের সঙ্গে। পুলিশি ব্যবস্থা থাকলেও আতঙ্কের মধ্যে কাটান উন্নাওবাসী মহিলারা। গ্রামবাসী বলদেও সিং জানালেন, স্বাধীনতার এত বছর পর প্রযুক্তির এত উন্নতির যুগে এখনও সন্ধ্যার পর এখানকার মেয়েরা বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পায়। গঙ্গার উপকূলবর্তী এলাকা উন্নাও। প্রবীণ বলদেও সিং বলেন, উন্নাওয়ের মেয়েরা অসুরক্ষিত। আস্থা নেই সরকারের উপরে। শুধু উন্নাও নয়, আশপাশের সিয়াগাও, পিপালখেরা, ব্যাঙরমুখ সব এলাকারই কমবেশি একই অবস্থা। গঙ্গার তীরবর্তী এলাকাগুলিতে দুষ্কৃতীদের রমরমা। মেয়েদের উপর এত অত্যাচার, কিন্তু দুষ্কৃতীদের শাস্তি হচ্ছে কি? প্রশ্ন করতেই খেপে উঠলেন বৃদ্ধ বলদেও। টেনে আনলেন কুলদীপ সেঙ্গারের প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুন-আলোচনায় রাজি
জানালেন, জেলে থাকলেও এলাকাবাসী এখনও ভয় পায় তার নামে। মানুষের আস্থা ফেরানোর কোনও চেষ্টাই করেনি প্রশাসন। এমনকী গত চার বছর ধরে এলাকাছাড়া ছিলেন উন্নাওকাণ্ডে নিগৃহীতার পরিবারও। উন্নাওবাসী রজনী বলেন, ধর্ষণ বা কোনওরকম নিগ্রহের শিকার হলে সেই মহিলা বা তার পরিবারের বসবাস করাই দায় হয়ে যায় এলাকায়। ভিটেছাড়া হওয়ার ভয়ে কোনও দুষ্কর্ম ঘটলেও সেখানে কেউ মুখ খুলতে চায় না। তার উপর আছে যদি কোনও প্রভাবশালীর যোগ থাকে, তাহলে তো আরও সর্বনাশ। পাশে পাওয়া যায় না পুলিশ-প্রশাসনকে। শাসক দলের গুন্ডারা লাগাতার হুমকি দেয় মুখ বন্ধ রাখার। সবকিছু জেনে বুঝেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ অভিযোগ প্রকাশ্যে আনতেই ভয় পায়। একটা হাথরস বা একটা উন্নাও হয়তো সামনে আসে। কিন্তু অপ্রকাশিত ঘটনার তালিকা চমকে দেওয়ার মতো।
আরও পড়ুন-শেয়ারবাজারে জোর ধাক্কা, পড়ল সোনার দর
এবারের ভোটে মহিলাদের সুরক্ষা ছাড়াও পরিকাঠামো উন্নয়নের মত একাধিক ইস্যু রয়েছে উন্নাওয়ে। তবে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে নারী সুরক্ষা। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ প্রকল্প ডবল ইঞ্জিনের যোগী সরকারের রাজত্বে কতটা কার্যকর তা উন্নাওয়ের নীরবতাই প্রমাণ করে দেয়। উন্নাওবাসীর দাবি, বেটিকে যদি বাঁচিয়েই না রাখা যায়, তাহলে সে পড়বে কীভাবে? নির্বাচনে জয়, পরাজয় সেখানকার মহিলাদের রোজনামচায় আদৌ কোনও পরিবর্তন আনতে পারবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেই নীরব উন্নাও। এ প্রসঙ্গে সমাজবাদী পার্টির মুখপাত্র বন্দনা সিং বলেন, রাজ্যের সমস্ত জায়গাতেই মহিলাদের সমস্যা। শুধুমাত্র উন্নাও নয়, রাজ্যের সর্বত্রই একই ছবি। যেখানেই এই ধরণের ঘটনা ঘটছে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের তরফে টাকা দিয়ে অথবা হুমকি দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা হচ্ছে। বিজেপি জমানায় দলিত মেয়েদের জন্য নরক হয়ে উঠেছে যোগীরাজ্য উত্তরপ্রদেশ।