সংবাদদাতা, কাঁথি : “অতি দর্পে হত অধিকারী গড়।” চার দশকের অধিকারী জমানা অবসানের সবচেয়ে বড় কারণ এটাই। এমনটাই দাবি কাঁথিবাসীদের। যে শহর থেকে অধিকারীদের উত্থান, সেই শহর এবার পুরভোটে অধিকারীদের বাস্তবের মাটিতে আছড়ে ফেলেছে। আসলে অধিকারী অ্যান্ড কোং আত্ম অহংকারে বলিয়ান হয়ে, নিজেদের দলের ঊর্ধ্বে ভেবে বসেছিলেন। কিন্তু ব্যক্তির চেয়ে দল অনেক বড় বিষয়। এবার পুরভোটের ফল এই শিক্ষাটাই যেন দিয়ে গেল অধিকারীদের।
আরও পড়ুন-তীব্র ক্ষোভ, অচলাবস্থা বিশ্বভারতীতে
যখন তৃণমূল কংগ্রেসে অধিকারীরা ছিলেন, তখন থেকেই অহংকারে তাঁদের মাটিতে পা ছিল না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি অধিকারীদের পেছন থেকে সরতেই, তাঁরা বাঘ থেকে বিড়াল হয়ে গেছেন। বিজেপিতে গিয়েও অধিকারীরা শুধরাননি। তাঁদের দাপটে কোণঠাসা আদি বিজেপি। আবার একুশের বিধানসভা ভোটের নিরিখে কাঁথি পুরসভায় অনেকটাই পিছিয়ে ছিল তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপি এর ফায়দা তুলতে পারেনি। দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়— সেই থিওরি মানতে গিয়ে ফের মুখ থুবড়ে পড়েছেন অধিকারীরা।
আরও পড়ুন-জঙ্গিপুরে এই প্রথম বোর্ড গড়বে তৃণমূল
এবার পুরভোটের প্রচারে বেরিয়ে বিরোধী দলনেতা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেছিলেন, “দুয়ারে সরকারের পাল্টা, দুয়ারে শুভেন্দু।” অর্থাৎ কাঁথি জুড়ে যেন বিজেপির তুলনায় বিরোধী দলনেতাকে বড় করে দেখাতে চেয়েছিল পদ্ম শিবির। কোনও ব্যক্তি একটি সরকারের সমর্থক হতে পারে না। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের কারণে, তৃণমূলকে আপন করে অধিকারীদের বর্জন করেছে কাঁথির মানুষ। তাছাড়া বর্তমান বিরোধী দলনেতার বহুদিন কাঁথির মাটির সঙ্গে যোগ ছিল না। কাঁথির মানুষদের অধিকারীরা ‘ঘরকা মুরগি’ মনে করেন।
আরও পড়ুন-পুরভোটে নজরকাড়া জয় মহিলাদের
তাই কাঁথি থেকে বিরোধী দলনেতা নাম তুলে নিয়ে প্রথমে হলদিয়া, পরে নন্দীগ্রামের ভোটার তালিকায় যুক্ত করেছেন। কাঁথির কোনও বাসিন্দা শুভেন্দুর সঙ্গে দেখা করতে চাইলে পুরসভায় রাত এগারোটার পর যেতে হত। কড়া সিকিউরিটি বলয় ও অনুগামীদের পেরিয়ে অনেক সময় তাঁর সাক্ষাৎ পেতেন না কাঁথির আমজনতা। তিনি রাস্তা দিয়ে যেতেন গাড়ির কালো কাচ তুলে। গত কুড়ি বছরে অধিকারীদের উজাড় করে দিয়েছে কাঁথি। কিন্তু বিনিময়ে হলদিয়া, তমলুকের জন্য অধিকারীদের যতটা তৎপরতা ছিল, তার ধারেকাছেও কাঁথি নেই। এহেন নেতাকে ভোটের ঠিক কয়েকদিন আগে দুয়ারে দেখে মানুষ ভোট দেবেন কেন? কাঁথি পুর ভোটের ফলাফল যেন বিরোধী দলনেতাকে এই বার্তাই দিল। আবার ছোট অধিকারী সৌমেন্দু নিজেকে কেউকেটা ভাবতেন। সকলকেই তাঁকে ‘স্যার’ সম্বোধন করতে হত। তা না হলে বড় গোঁসা হত ছোট অধিকারীর।