বেঙ্গালুরু, ১২ মার্চ : চার বছর আগে ধরমশালায় অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ী ভারতীয় দলে শ্রেয়স আইয়ার ছিলেন রিজার্ভ বেঞ্চে। ম্যাচের শেষে ট্রফি ঘিরে উচ্ছ্বাসের ভিড়ে শ্রেয়সের ছবি কাগজে বেরিয়েছিল। সেই ছবি মুম্বইয়ের বাড়িতে টাঙিয়ে রেখে বাবা রোজ মনে করিয়ে দিতেন, পনেরোজনে থাকলে হবে না, তোকে টেস্ট খেলতে হবে!
আরও পড়ুন-ভুল শট খেলেই আউট বিরাট : সানি
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিষেকে সেঞ্চুরি করেও শ্রেয়সের জায়গা পাকা হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে আবার রিজার্ভ বেঞ্চে। ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে লিমিটেড ওভার সিরিজে এই আছেন তো এই নেই। এই চলতে চলতে আবার যখন শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টেস্ট দলে সুযোগ পেলেন, বড় মঞ্চে নিজেকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করে ফেললেন। শনিবার বেঙ্গালুরুতে গোলাপি টেস্টের প্রথম দিন ব্যাটিং বিপর্যয়ের মধ্যে একা কুম্ভ হয়ে লড়ে গেলেন শ্রেয়স। বিরাট কোহলি যখন ফিরে যাচ্ছেন, ভারত ৮৬/৪। এখান থেকে শ্রেয়সের ব্যাটে ভর করে ভারত প্রথম দফায় ২৫২ রান তুলেছে। একদিনের মেজাজে খেলে ৯৮ বলে ৯২ রানের ইনিংসে দশটি বাউন্ডারি ছাড়াও তিনি চারটি ছক্কা মেরেছেন। শ্রেয়সের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান পন্থের (৩৯)।
আরও পড়ুন-মোহনবাগানের নতুন সচিব হচ্ছেন দেবাশিস
তবে গোলাপি বলে রাতের আলোয় সুইংয়ের যে গল্পগাথা এতদিন ধরে চলে আসছে, সেটা আরও একবার সামনে আনলেন বুমরা-শামি। আড়াইশোতে দলের ইনিংস শেষ হওয়ার পর এই দু’জনের সাঁড়াশি আক্রমণে শ্রীলঙ্কা দিনের শেষে ৮৬/৬। এর মধ্যে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের ৪৩ রান সরিয়ে রাখলে সিংহলি ব্যাটিংয়ের করুণ অবস্থা আরও পরিষ্কার। বুমরা ১৫ রানে তিন ও শামি ১৮ রানে দুটি উইকেট নিয়ে তাদের চাপে ফেলে দিয়েছেন। প্রথম দিনে ১৬টি উইকেট পড়েছে। গোলাপি টেস্টে প্রথম দিনে এত উইকেট কখনও পড়েনি।
এদিন প্রথম ওভার থেকে লাকমল আর ফার্নান্দো যথেচ্ছ বাউন্স পেলেন, এটা ঠিক। কিন্তু গোলাপি ম্যাচে ধারণা বদলে দিয়ে চিন্নাস্বামীর উইকেটে সিংহলি স্পিনাররাই ছড়ি ঘুরিয়ে গেলেন! মোহালিতে এক স্পিনার নিয়ে ডুবেছে শ্রীলঙ্কা। এখানে লাসিথ এম্বুলদেনিয়ার সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে প্রবীণ জয়বিক্রমকে। দু’জনে দুটো সেশনে ভারতকে গুটিয়ে দেন ২৫২ রানে। প্রথমজনের তিন উইকেট। অন্যজনের দুই।
রোহিত এদিন টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতের শুরুটা ভাল হয়নি। ২৯ রানের মধ্যে মায়াঙ্ক (৪) ও রোহিত (১৫) ফিরে যাওয়ায় চাপ তৈরি হয়েছিল। এরপর বিহারী (৩১) আর বিরাট (২৩) মিলে পরিস্থিতি সামলে নেন। মোহালির মতো এখানেও দারুণ শুরু করেছিলেন ভিকে। ডি’সিলভার ভেতরে আসা বলে আড়াআড়ি খেলে এলবি হয়ে যান। ঋষভ পন্থ ২৬ বলে ৩৯ রান করে গিয়েছেন। তবে ভারতীয় ইনিংসে আসল কাজটা করে গিয়েছেন শ্রেয়স।
আরও পড়ুন-বাঁকুড়ায় বিদ্যুতের স্পর্শে আবার মৃত্যু হল হাতির
একশো শতাংশ দর্শকের অনুমতি থাকলেও এদিন মাঠে ছিলেন হাজার পঁচিশেক লোক। যাঁদের প্রায় সবাই এসেছিলেন বিরাটের ৭১তম সেঞ্চুরি দেখবেন বলে। কিং কোহলির সেকেন্ড হোমে তাঁর জন্য পোস্টার নিয়ে আসা লোকজন অবশ্য হতাশ তাঁর আউট নিয়ে। এই উইকেটে বাউন্স আছে, বল নিচুও হচ্ছে। বিরাটের বলটা নিচু হয়েছে। পা বাড়িয়ে খেললে হয়তো বাচঁতেন। কিন্তু পিছনে চলে যাওয়ায় নিচু বলকে সামলাতে পারেননি।
প্রথম দিনের শেষে চালকের আসনে ভারত। শ্রেয়স, বুমরা ও শামির ত্রিফলা ধাক্কায় বেসামাল শ্রীলঙ্কা। ১৬৬ রানে পিছিয়ে থেকে তাদের ম্যাচে ফেরা এখন খুব কঠিন।