মইনুল হাসান
পশ্চিমবাংলায় নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপি শুধু নির্বাচন নয়, রাজনীতি, সমাজনীতি, উন্নয়ন সবক্ষেত্রে হেরে ভূত হয়ে গিয়েছে। এমনকী এখন যা অবস্থা তাতে তাদের দল ধরে রাখা মুশকিল। জেলার বিধায়কদের ধরে রাখা বড় রকমের কসরতের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। নির্বাচিত বিজেপি বিধায়কেরা একাধিক জন সংসদীয় নেতার সম্পর্কে যা বলেছেন তাতে কানে আঙুল দিতে হয়। কেবলমাত্র রাজভবনে বিজেপি বেঁচে আছে। দল এবং বিধায়কদের এমন ছন্নছাড়া অবস্থা বিজেপি মেনে নিতে চাইছে না। বিশেষ করে বিধানসভায় ঘোরতর পরাজয়ের কাঁটার ব্যথা এখনও তাঁদের খচখচ করে ফুটছে।
আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই তারাপীঠ থেকে গ্রেফতার হল আনারুল হোসেন
এই ব্যথা যে কী ব্যথা সেটা বিজেপি’র কেন্দ্রীয় নেতারা ভালমতনই জানেন। পাল্টা নিতে তাঁরা বদ্ধপরিকর। সম্প্রতি রাজ্যের পুরসভাগুলির নির্বাচনে বিজেপি’র অবস্থা তথৈবচ। এমনাবস্থায় ব্যথাটি আরও বেড়েছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। ঘুরপথে পশ্চিমবাংলার মানুষকে ‘উপযুক্ত শিক্ষা’ দেবার চক্রান্ত করে চলেছে। এই বাংলার মানুষের প্রতি তাদের অবস্থান ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রের হাতে দু’টি তদন্তকারী সংস্থা আছে। সিবিআই এবং ইডি। নিরপেক্ষভাবে তাদের কোনও বিষয়ের তদন্ত করা কর্তব্য। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। দু’টি সংস্থাকেই রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে বিজেপি। প্রতিহিংসা মেটানোর কাজে ব্যবহার করছে। বহুকাল ধরে পশ্চিমবাংলার প্রধান দল তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের প্রতি ইডি ও সিবিআই দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একটাই উদ্দেশ্যে, যেমন করে হোক তৃণমূলকে আটকাও। কিন্তু বিজেপি’র এই চক্রান্ত বাংলার মানুষ ভালমতো জেনে গেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সর্বোচ্চ নেত্রী মাথা উঁচু করে বলেছেন, সিবিআই বা ইডি কেন? কোনওভাবেই বাংলার মানুষের মাথা নত করানো যাবে না। আমরা হাসতে হাসতে জেলে যাব। তবু বাংলার অপমান সহ্য করব না। আমরা মাথা নোয়াতে শিখিনি। তাঁর এই দৃঢ় প্রত্যয় ও সাহস নেতাদের মধ্যে ও বাংলার মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন-শাহের কাছে ধনকড়কে সরানোর দাবি তৃণমূল সাংসদদের
পার্টির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বারবার মিথ্যা অজুহাতে সিবিআই বা ইডি ডেকে পাঠাচ্ছে। সেটা কলকাতায় করতে সাহস না পেয়ে দিল্লিতে ডাকছে। অভিযোগ হচ্ছে কয়লা ও গোরুপাচার কাণ্ড। সবাই জানেন ঘটনাগুলি ঘটে কেন্দ্রীয় রক্ষীদের সামনে। কয়লা তো কেন্দ্রীয় সরকারের সম্পত্তি। তা পাহারা দেওয়ার জন্য আছে কেন্দ্রীয় সংস্থা সিআইএসএফ। আর সীমান্ত দিয়ে গরু পাচার হয়ে বাংলাদেশ যায়। সেখানে পাহারারত কেন্দ্রীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। তৃণমূল নেতাদের হেনস্থা করার সময় এ-সব কথা ভুলিয়ে দেওয়া হয়।
মনে রাখা দরকার দু’টি বিষয়ই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। আর মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী প্রতিহিংসা নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় তৃণমূল নেতা, সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। দেশের মধ্যে সভ্যতা, সৌজন্য রাখার শিক্ষা নেই বিজেপি’র। সাধারণ সম্পাদকের স্ত্রীকেও ইডি দফতরে ডাকা হয়েছে। যাঁর একটি আড়াই বছরের সন্তান আছে। কলকাতায় বা তাঁর বাড়িতে ইডিকে আসতে বললেও তারা সাড়া দেয়নি। সাধারণ সম্পাদকের আপ্তসহায়ক-সহ যাঁরা তাঁর অফিসে কাজ করেন তাঁদের সকলকে ইডি ডেকেছে। শুধু তা-ই না, তাঁর যাঁরা বাল্যবন্ধু, তাঁর যাঁরা বহু পূর্বের সহপাঠী তাঁদেরকেও ডেকেছে। সহজেই বোঝা যায় কতখানি প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়েছে বিজেপি সরকার। আর তার সঙ্গে বোঝা যাচ্ছে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াইয়ে বারবার পরাজিত হয়ে হিংস্রপথ বেছে নিয়েছে। রাজনৈতিক হচ্ছা চরিতার্থ করার জন্য দু’টি সংবিধানিক সংস্থাকে ব্যবহার করছে লজ্জাহীনভাবে।
আরও পড়ুন-বগটুইয়ে নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য-চাকরির ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
কয়েকদিন আগে সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লির ইডি দফতর প্রবর্তন ভবনে ডেকে পাঠায়। কয়েকদিন আগে তাঁর চোখের অপারেশন হয়েছে। কিন্তু তিনি গেছেন। বিমানবন্দরে যাবার আগে বলেছেন কোনও অবস্থাতে মাথা নত করবেন না। প্রায় ৮ ঘণ্টা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন ইডি’র আধিকারিকরা। সেখান থেকে বেরিয়ে সাধারণ সম্পাদক যা বলেছেন তা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ— ‘‘গোরু পাচার কেলেঙ্কারি কী?… এত বড় জন্তু, ভারত থেকে বাংলাদেশে পাচার হলে বিএসএফের নজর এড়িয়ে করা সম্ভব? বিএসএফ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অধীন। কোলিয়ারিতে নিরাপত্তার দায়িত্বে সিআইএসএফ আছে। এই বাহিনীও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর অধীনে।… একে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কেলেঙ্কারি বলা উচিত।’’ একথাগুলি আমরা একটু আগে আলোচনা করছিলাম। ইডি বা সিবিআই-এর ডাক নির্ভর করে নির্বাচন এলেই। কাছাকাছি সময়ে পশ্চিমবাংলায় দুটি উপনির্বাচন আছে।
আরও পড়ুন-অভিনেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
বিধানসভা ও লোকসভার। ছন্নছাড়া বিজেপি নেতা আর কর্মীদের মনোভাব বাড়াবার জন্য তারা ডাক পাঠাচ্ছে। আর সবাই জানেন সবার কাছে এই ডাক যাচ্ছে না। যাদের প্রকাশ্যে খবরের কাগজ মুড়ে টাকা নিতে দেখা গেছে, সিবিআই-এর খাতায় যাদের নাম জ্বলজ্বল করছে তাদের ডাকা হচ্ছে না। তার মধ্যে অন্যতম বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা। কাগজ মুড়িয়ে টাকা নিয়ে তিনি নাকি সাধু সেজেছেন।
বিজেপির এই হিংস্র কৌশল তাদের রাজনীতির একটি অঙ্গ। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে দেখা গেছে সিবিআই-এর ভয় দেখিয়ে বহুজন সমাজ পার্টি ও তার নেত্রীকে ঘরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিজেপি’র এখনও বোধহয় জানতে বাকি আছে যে বাংলা অন্য জিনিস। বাংলা তথা দেশের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অন্য ধাতুতে গড়া। দলের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-এর মাথায় রয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাংলার মানুষের আশীর্বাদ। সামান্য সিবিআই, ইডি বা বিজেপি’র কুৎসিত চক্রান্তকে আমরা হেলায় হারাব। মাথা ঝুঁকাব না। বাংলা মায়ের দিব্যি।