রুটিরুজির সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য এখন নামানো হয়েছে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এই কাণ্ডটি গেরুয়াপক্ষ ঘটাচ্ছে। কিন্তু এভাবে কি তৃণমূল কংগ্রেসকে আটকানো যায়? না, যায় না। কারণ, এই দল ও তার নেতৃবৃন্দ অন্য ধাতুতে গড়া। আলোচনায় তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অরূপ চক্রবর্তী
পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের চারটিতে জয় পাওয়ার পরেই বেলাগাম মূল্যবৃদ্ধি। হেঁশেলে হেঁশেলে আগুন। সেই আঁচে পুড়ছে দেশের মানুষ। তখনই সেদিক থেকে চোখ ঘোরাতে, বিরুদ্ধস্বরকে স্তব্ধ করতে ফের মাঠে নামানো হল কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলোকে। একাধিক বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাদের বিরুদ্ধে সিবিআই, ইডি হানা শুরু করেছে স্বৈরাচারী মোদি সরকার। সেই নিয়ম মেনেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে দিল্লিতে ইডির তলব। তারপর ম্যারাথন জিজ্ঞাসা। কিন্তু কোনও কাজে দিল না।
আরও পড়ুন-আইন বাঁচাতে নরম বিশ্বভারতী
এরকম উদাহরণ ঝুড়ি-ঝুড়ি । যা বিজেপির প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজনীতির পক্ষে দেদার সার্টিফিকেট দেয়।
যেমন, পেগাসাস অধিকারী। তাঁর বিরুদ্ধে এই বিজেপি অভিযোগ এনেছিল। হাত পেতে টাকা নেওয়ার ফুটেজ দেখিয়ে বলেছিল সারদা-নারদার টাকা আত্মসাৎ করা চোর। সেই ফুটেজ নিজেদের ওয়েবসাইটে ফলাও করে দিয়েছিল। এখন তিনি বিজেপির নেতা এবং প্রধান বিরোধী দলনেতাও বটে! তাই ফুটেজটা আর বিজেপির ওয়েবসাইটে রাখা যায়নি।
আরও পড়ুন-মাধ্যমিক যোগ্যতায় এসএসসি এমটিএস পরীক্ষা
ইডি তদন্ত করছে। মহারাষ্ট্র বিজেপি পথে নামল। নারায়ণ রাণের গ্রেপ্তার চাই। তাঁর বিরুদ্ধে তিনশো কোটি টাকার অর্থ তছরুপের অভিযোগ । আর এই ক’দিন আগে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ ঘটালেন। তাতে প্রথম নাম ছিল মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নারায়ণ রাণের।
প্রতিবেশী রাজ্য আসাম। রোজভ্যালি কাণ্ড এবং সারদায় মূল অভিযুক্ত তৎকালীন কংগ্রেস নেতা হেমন্ত বিশ্বশর্মা। তাঁর বিরুদ্ধেও বিজেপি আন্দোলন করেছিল। হেমন্ত বিশ্বশর্মার গ্রেপ্তার চাই। তিনি এখন আসামের মুখ্যমন্ত্রী! অবশ্যই বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী।
নিশীথ প্রামাণিক। আর এক বিজেপি নেতা। তাঁকে ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সিবিআই নোটিস পাঠিয়েছিল। সেই নোটিসে নিশীথ প্রামাণিকের বিরুদ্ধে মানবপাচার, অবৈধ অস্ত্রপাচার, বেনামী সম্পত্তি দখলের অভিযোগ ছিল। একদা সিবিআই যাঁকে নোটিস পাঠিয়েছিলেন তিনিই আজ সিবিআই দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী!
আরও পড়ুন-কান্নায় ভেঙে পড়া অসুস্থ পরিজনের পাশে দাঁড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
উল্টোদিকের ছবিটা একেবারেই অন্যরকম। তামিলনাড়ুর স্টালিনের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলটের ভাই অগ্রসেন গেহলটের বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের পরিবারেও ইডি হানা দিয়েছে। অর্থাৎ যে বা যাঁরাই বিজেপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন, তাঁদেরকেই কোনও না কোনও এজেন্সি দিয়ে দমন করার চেষ্টা চলছে।
এখানে উল্লেখ্য, সারদা তদন্ত চলাকালীন সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে জিজ্ঞাসা করেছিল তদন্তে এত দেরি হচ্ছে কেন? আদালতে দাঁড়িয়ে সিবিআইয়ের উত্তর ছিল, তাঁদের কাছে পর্যাপ্ত জনবল নেই। তাই তাঁরা তদন্ত করতে পারছেন না। এবং আর্জি জানিয়েছিলেন যে আর নতুন করে কোনও তদন্তের দায়িত্ব যেন তাঁদের আর না দেওয়া হয়। সিবিআই সুব্রত চট্টরাজ বনাম ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া মামলায় হলফনামা দিয়ে মহামান্য বিচারপতি টি এস ঠাকুরকে এ-কথা জানিয়েছিল।
আরও পড়ুন-স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার বিলগ্নীকরণ আটকাতে স্মারকলিপি জমা দিল তৃণমূল কংগ্রেস
গোরু পাচার, কয়লা পাচার যা-ই বলুন না কেন এটা দেখার দায়িত্ব কার? উত্তর যদি হয় সিআইএসএফ, তবে তো সর্ষের মধ্যেই ভূত লুকিয়ে আছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিশ্চয়ই এই প্রশ্নের উত্তর দেবেন!
তাই প্রিয় কবি শ্রীজাতর লাইন ধার করেই বলব—
‘মানুষ থেকেই মানুষ আসে
বিরুদ্ধতার ভিড় বাড়ায়
তুমিও মানুষ আমিও মানুষ
তফাত শুধুই শিরদাঁড়ায়।’
শিরদাঁড়ার তফাত এখানেই যে কেউ সেটার ভার বইতে না পেরে ওয়াশিং মেশিনে ঢুকে জার্সি বদলায়, আবার কেউ কেউ শিরদাঁড়াটাকে সোজা রেখেই সিবিআই আর ইডি-র নোংরা খেলার মোকাবিলা রাজনৈতিক ভাবেই করে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তিনি বলেন, ঝুঁকেগা নেহি। আমি মাথা নত করব না।
এই বক্তব্যর পরিপ্রেক্ষিতে, বঙ্গ বিজেপির একজন নেত্রী মন্তব্য করেন, ‘অব ঝুঁকেগা নেহি। রোকেগা তো সহি।’ এই মন্তব্য বুঝিয়ে দেয়, বিজেপির রাজনৈতিক অভিলাষ।
আরও পড়ুন-দোষীদের কড়া শাস্তি ও আনারুলকে গ্রেফতার করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর
এখানে একটা কথা স্পষ্ট করে বলা দরকার। তৃণমূল কংগ্রেস কোনও বিজেপির মতো অশ্বমেধের ঘোড়া নয়, যাকে রুখতে চাইলে রোখা যায়। বিজেপির অশ্বমেধ যজ্ঞের জন্য গোধরা, সার্জিকাল স্ট্রাইক, মূল্যবৃদ্ধি, ‘কাশ্মীর ফাইল’, সিবিআই, ইডি প্রভৃতি উপচার উপকরণের দরকার পড়ে, অন্য কারও পড়ে না। তাই ‘ঝুঁকেগা নেহি’র মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক আস্ফালন না দেখে, একে জনগণেশের প্রতিস্পর্ধী স্বর হিসেবে দেখাটাই মঙ্গল!
এই দ্বিচারিতা, এই রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচার বাংলার মানুষ দেখছেন; দেশের মানুষ দেখছেন। সব উত্তর দেবেন ২০২৪।