চিত্তরঞ্জন খাঁড়া: দুই বাংলার লড়াইয়ে কড়া টক্করের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু ওপারের আবাহনী দেরিতে জাগল। তার আগেই এপারের মোহনবাগান ম্যাচের দখল নিয়ে জয়ের গন্ধ পেয়ে যায়। শেষ বেলায় আবাহনীর আগ্রাসন সামলে ৩-১ গোলে জিতল সবুজ-মেরুন। গোলের হ্যাটট্রিক করে যুবভারতী মাতালেন ডেভিড উইলিয়ামস। বুঝতে দিলেন না রয় কৃষ্ণের অভাব। গোলের সুযোগ নষ্ট না করলে বাগানের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার একাই করতে পারতেন পাঁচ গোল। জুয়ান ফেরান্দোর দলও প্লে-অফ জিতে এএফসি কাপের ‘ডি’ গ্রুপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল। আগামী ১৮ মে গ্রুপের প্রথম ম্যাচ মোহনবাগানের। গ্রুপে বাকি দল গোকুলাম কেরালা, বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংস এবং মালদ্বীপের মাজিয়া স্পোর্টস। আবাহনী-বধ করে উঠেই দর্শক গ্যালারির দিকে ছুটলেন তিরি, প্রীতম, উইলিয়ামসারা।
আরও পড়ুন-বাংলা দলকে সিনেমা দেখাল আইএফএ
প্রায় ৩৫ হাজার দর্শক ছিলেন গ্যালারিতে। ৯০ মিনিট ধরে দলকে সমর্থন জানানোর কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ‘ভাইকিং ক্ল্যাপ’ দিলেন ফুটবলাররা। সমর্থককুল তখন উদ্বেলিত। মোবাইলের ‘ফ্ল্যাশ লাইট’ জ্বেলে মোহনবাগান, উইলিয়ামস স্লোগানে তখন সরগরম যুবভারতী। দলকে জিতিয়ে উইলিয়ামস বললেন, ‘‘সমর্থকদের সামনে হ্যাটট্রিক করতে পারা দারুণ অনুভূতি। কঠিন ম্যাচ ছিল। কিন্তু আমরা পেরেছি। রয় না থাকলেও আমাদের দল শক্তিশালী।” কোচ জুয়ান বললেন, ‘‘১-২-এ পিছিয়ে পড়ে ছক বদলে ফেলি। ছেলেরা পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলেছে।”
আরও পড়ুন-কার্তিককে দেখে মাঠে ফিরতে ইচ্ছে করছে বলছেন মুগ্ধ ডি’ভিলিয়ার্স
এদিন শুরু থেকে আবাহনীকে দাঁত ফোটানোর কোনও সুযোগই দেয়নি মোহনবাগান। প্রথম মিনিট থেকে আক্রমণের ঝড় তুলে ম্যাচের রাশ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয় জুয়ানের দল। ৬ মিনিটেই প্রথম গোল সবুজ-মেরুনের। জনি কাউকোর পাস থেকে গোল করেন উইলিয়ামস। প্রথম গোলের পর আক্রমণের সুনামি ওঠে আবাহনী রক্ষণে। দুই প্রান্ত থেকে প্রবীর, লিস্টন, মনবীররা একের পর এক আক্রমণ তুলে আনেন। ২৯ মিনিটে ব্যবধান বাড়াতে সক্ষম হয় মোহনবাগান। এবারও গোলদাতা উইলিয়ামস। ডানদিক থেকে প্রবীর দাসের গোলের ঠিকানা লেখা ক্রস থেকে নিখুঁত শটে বল জালে জড়ান সবুজ-মেরুনের অস্ট্রেলীয় স্ট্রাইকার। প্রথমার্ধেই আরও ব্যবধান বাড়িয়ে বিরতিতে যেতে পারত সবুজ-মেরুন। কিন্তু সুযোগ নষ্ট করায় তা সম্ভব হয়নি। ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার মরিয়া চেষ্টা করে আবাহনী। রাফায়েল, ড্যানিয়েলদের আক্রমণে নাভিশ্বাস ওঠে সবুজ-মেরুন রক্ষণে।
আরও পড়ুন-গ্যাস, পেট্রোপণ্যের দামবৃদ্ধির অভিনব প্রতিবাদ আঁচ হেঁশেলে, কৃষিতে
৬০ মিনিটে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা কোস্টারিকার বিশ্বকাপার ড্যানিয়েল কলিনড্রেস দুর্দান্ত গোল করে আবাহনীকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন। গোটা মাঠ জুড়ে খেলে আবাহনী আক্রমণে নেতৃত্ব দিলেন ড্যানিয়েল। চাপে পড়ে ৮০ মিনিটে জোড়া বদল করেন জুয়ান। লিস্টন, দীপক ট্যাংরিকে তুলে আক্রমণে লোক বাড়াতে কিয়ান নাসিরি ও বিদ্যানন্দ সিংকে নামান বাগান কোচ। হুগোর পরিবর্তে নামেন অভিষেক ধনঞ্জয়। নেমেই সহজতম গোলের সুযোগ নষ্ট করেন কিয়ান। তবে মিনিট চারেক পরেই ৮৫ মিনিটে ব্যবধান ৩-১ করে মোহনবাগান। তৃতীয় গোলটিও করে হ্যাটট্রিক করেন উইলিয়ামস। যদিও ম্যাচে একাই করতে পারতেন পাঁচ গোল। জয় নিশ্চিত বুঝে উইলিয়ামসকে তুলে নেন জুয়ান। উইলিয়ামস আর মোহনবাগান ধ্বনিতে তখন গগনভেদী চিৎকার যুবভারতীতে। এদিন নিরাপত্তার কড়াকড়িতে প্রতিবাদী পোস্টার ছিল না। বাইরে অবশ্য ‘রিমুভ এটিকে’ মিছিল ছিল। অপেক্ষা এবার ১৮ এপ্রিলের জন্য।