এ এক এমন মহাকাব্য, যা চিরকালীন। এর ঘটনাবলি, এর তত্ত্ব, এর বৈচিত্রের বিস্তার এতটাই যে অনায়াসে পুরাণ থেকে টেনে প্রাসঙ্গিক করা যায়। লেখক অর্ণব রায় তাই করেছেন। পুরাণের আধারে লিখেছেন এক ক্রাইম থ্রিলার, তাঁর ‘দ্য মহাভারত মার্ডারস’ উপন্যাসে। আর সেই উপন্যাসের আধারেই এবার তৈরি হয়েছে ওয়েব সিরিজ ‘মহাভারত মার্ডারস’। পরিচালক সৌমিক হালদার। প্ল্যাটফর্ম ‘হইচই’। আদতে সিনেমাটোগ্রাফার সৌমিক জানালেন, এখনও অবধি পরিচালনা করছেন ভাল লাগা থেকে, এখনই পুরোপুরি পরিচালক হবার কথা ভাবেননি। ভবিষ্যতে শিফট করলেও আপাতত ক্যামেরার পিছনে থাকতেই ভালবাসবেন। কিন্তু মাঝেমাঝে এই সিরিজগুলির পরিচালনা তিনি দারুণ উপভোগ করছেন। তাই ওয়েব সিরিজ ‘ব্যোমকেশ’-এর মতো ‘মহাভারত মার্ডারস’-এর জার্নিটাও দুর্দান্ত কেটেছে তাঁর।
আরও পড়ুন-সেই সাংবাদিক
“আমরা নব্বই ভাগ অর্ণব রায়ের উপন্যাসকেই অনুসরণ করেছি। এত নিটোল বুনোটে কাহিনি বোনা আছে বইয়ে যে তা থেকে সরে আসার প্রয়োজন হয়নি। শুধু মাধ্যম ভিন্ন বলে, গল্প বলার স্বার্থে আর একটা ডেফিনিট এন্ডের স্বার্থে যে সামান্য ইম্প্রোভাইজেশনের প্রয়োজন হয়েছে সেটা করেছি। এ-ছাড়া, বইয়ে যে মারাত্মক লেভেলের ভায়োলেন্সের বর্ণনা আছে, তা কিছুটা ব্যালান্স করেছি দর্শকের কথা ভেবেই। পড়া আর দেখার মধ্যে তো পার্থক্য আছে।” শুরুতেই বললেন সৌমিক। কাহিনি-বিন্যাস, চিত্রনাট্য এবং সংলাপের দায়িত্বে ছিলেন সৌগত বসু ও অনির্বাণ ভট্টাচার্য। অবশ্যই ইনি অভিনেতা অনির্বাণ ভট্টাচার্য নন।
সৌমিক আরও যেটা জানালেন, “মহাভারতের নির্যাস নিলেও, তার আধারে চরিত্রগুলির বিন্যাস হলেও, আসলে এটি একটি ক্রাইম থ্রিলার। রিভেঞ্জ স্টোরি। সিরিয়াল কিলিংয়ের আদলে একের পর এক খুন হতে থাকবে কলকাতার বুকেই। যারা খুন হবে চারিত্রিক দিক থেকে তাদের মহাভারতের পঞ্চপাণ্ডবের মিল আছে। দর্শক দেখলেই রিলেট করতে পারবেন কোনটা কে। আর গল্পের দুর্যোধন, যিনি ঠান্ডা মাথায় একের পর এক খুনগুলি করছেন, তাঁকে ধরতে নাকাল পুলিশের ক্রাইম ব্রাঞ্চের অফিসাররা। কারণ খুনগুলি যেমন অভিনব পদ্ধতিতে হচ্ছে তা আগে কখনও হয়নি আর এই লুকোচুরিটা উপভোগ করছেন ও চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন নয়া দুর্যোধন।”
আরও পড়ুন-ফুসফুস থেকে মাদুলি বের করলেন ডাক্তাররা
পুলিশ অফিসার ‘রুকসানা’র চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা সরকার। খুনের তদন্ত করতে গিয়েই রুকসানা টের পান যে, চরিত্রগুলির সঙ্গে মহাভারতের পাণ্ডবদের চরিত্রের কিছু যোগসূত্র আছে কিন্তু সেটা কী, কেন, কীভাবে তা বুঝে উঠতে নাকাল হতে হয় তাঁকে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই সিরিজটি শ্যুটিংয়ের সময়েই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন প্রিয়াঙ্কা। রাজারহাটে শ্যুটিংয়ের সময় বাইক দুর্ঘটনায় পা ভাঙে তাঁর। সেই কারণে দীর্ঘদিন শ্যুট বন্ধ রাখতে হয়েছিল তাঁকে। প্রিয়াঙ্কার সহযোগী পুলিশ অফিসার সিদ্ধার্থ সিনহার চরিত্রে আছেন অর্জুন চক্রবর্তী। অর্জুনের চরিত্রটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও ইন্টারেস্টিং কাহিনিতে। তবে গল্পে মুখ্য ভূমিকায় আছেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, রাজনীতিবিদ পবিত্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে। তাঁর সহকারী আবিরলাল-এর চরিত্রে আছেন কৌশিক সেন। সৌমিক জানালেন, প্রত্যেকটা চরিত্রই কমবেশি জটিল, তাই লেয়ার অফ স্টোরিস আছে। কিন্তু তা লিনিয়ার গল্পের সঙ্গে সুন্দরভাবে ইন্টার-কানেকটেড। “আসলে গল্পের বুনোটটাই একটু জটিল। তবে এমন নয় যে দর্শকদের বুঝতে অসুবিধে হবে। রহস্য ঘন করার উদ্দেশ্যেই এই পন্থা নেওয়া হয়েছে। তাই প্রতিটা মুহূর্ত দর্শক উপভোগই করবেন। সেই সঙ্গে যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব, দ্রৌপদী প্রতিটি চরিত্রই সমকালীন হয়েও নিজ বৈশিষ্ট্যে এতটাই প্রমিনেন্ট যে সেটা গল্পে আলাদা মাত্রা যোগ করে।”
আরও পড়ুন-রুশ টার্গেট এবার ফিনল্যান্ড, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি অবশ্যম্ভাবী?
ইতিমধ্যেই ট্রেলার লঞ্চ হয়ে গেছে। ট্রেলারে প্রতিটি চরিত্রকে যেভাবে দেখা গিয়েছে তা রহস্যে মোড়া। মহাকাব্য পড়তে পড়তে রুকসানার আত্মকথন, “মহাভারত শুধুমাত্র একটা ধর্মগ্রন্থ নয়, মহাভারত মানুষের গল্প। কিন্তু আমি এই গল্পের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি চার মাস আগে!” প্রেস কনফারেন্স-এ শাশ্বত ওরফে পবিত্র চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘আপনারা তো আমাকে একটা তকমা দিয়ে দিলেন, যুধিষ্ঠির। আর এই খুনগুলির সঙ্গে মহাভারতের একটা যোগ আছে, দ্যাট মেকস ইট মহাভারত মার্ডারস!” আবার ট্রেলারের শেষে এক গাড়িতে যেতে যেতে যখন পবিত্র নিজের মতো করে বিশ্লেষাত্মক হন, “কৌরব মহারথীদের দ্যাখো মারা হচ্ছে অনৈতিকভাবে”, রুকসানা বলে ওঠে পবিত্রকে, “স্যর, ইউ সাউন্ড লাইক দুর্যোধন!” রহস্য ঘন হয়। কারণ একে একে খুন হয়ে যায় দ্রৌপদী, সহদেব, নকুল। তবে কি পারবে এবার পাণ্ডবরা নিজেদের বাঁচাতে? জানতে হলে আর মাত্র এক সপ্তাহের অপেক্ষা। ‘মহাভারত মার্ডারস’ মুক্তি পাচ্ছে ১৩ মে। এরপর যথাক্রমে ২০ মে, ২৭ মে, ও ৩ জুন— প্রতি সপ্তাহে তিনটি করে পর্ব দেখানো হবে। সব মিলিয়ে মোট বারোটি পর্ব।
আরও পড়ুন-বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স দিবসের আঙিনায় দেশের মহিলা ক্রীড়াবিদরা
সিরিজের বেশিরভাগ শ্যুটিং হয়েছে কলকাতাতেই। সামান্য কিছু অংশ মফসসলে আর ক্লাইম্যাক্সের শ্যুট হয়েছে উত্তরবঙ্গে। সৌমিক শুধু ডিরেকশনই দিয়েছেন, ক্যামেরা করেছেন রম্বদীপ সাহা আর এডিটিংয়ের দায়িত্বে সংলাপ ভৌমিক। বাকি যাঁরা অভিনয় করেছেন, তাঁরা হলেন, ভিকি প্যাটেল, রাজদীপ গুপ্তা, অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অর্পিতা ঘোষ, রিয়া গাঙ্গুলি ও দেবাশিস মণ্ডল।