নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : কয়েক মাস আগেই বিবেক অগ্নিহোত্রীর সিনেমা ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’ নিয়ে অনেক প্রচার করেছে বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দ্য কাশ্মীর ফাইলস সিনেমাকে হাতিয়ার করে নিজেদের হিন্দুত্বের এজেন্ডাকেও তুলে ধরার চেষ্টা করেছে বিজেপি। যদিও বৃহস্পতিবারের ঘটনা প্রমাণ করে দিল আসল ‘কাশ্মীর ফাইলস’ কোনটা, মত বিরোধীদের। বৃহস্পতিবার কাশ্মীরি পণ্ডিত হত্যার প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভূস্বর্গ। বৃহস্পতিবার রাতে জঙ্গিদের হাতে খুন হন বুদগামের সরকারি অফিসের কর্মচারী রাহুল ভাট।
আরও পড়ুন-মোদির হিংসার রাজনীতিকে তোপ
এই নিয়ে ৬ মাসে তিনজন কাশ্মীরি পণ্ডিত খুন হলেন। এরপরই ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে এসে কাশ্মীরের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন কয়েক হাজার কাশ্মীরি পণ্ডিত। তাঁদের দাবি, তাঁদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ মোদি সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং সেখানকার উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। রাহুল ভাটের হত্যার পরেই ফের একবার কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্নের মুখে কেন্দ্রীয় সরকার। এই ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার, ৩৫০ জনেরও বেশি সরকারি কর্মচারী এবং কাশ্মীরি পণ্ডিত সেখানকার উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহার কাছে গণ ইস্তফাপত্র পাঠান৷
আরও পড়ুন-আগে আসছে বর্ষা
শুক্রবার সকাল থেকেই উত্তপ্ত ছিল ভূস্বর্গ। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে মৃত রাহুলের স্ত্রী এদিন কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। রীতিমতো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহতের স্ত্রী বলেন, কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বলির পাঁঠা করছে মোদি সরকার। পণ্ডিতদের ওরা রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। মোদি-শাহকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, সাহস থাকলে আপনারা নিরাপত্তা ছাড়া কাশ্মীরে ঘুরে দেখান। কাশ্মীরি পণ্ডিতদের একের পর এক নৃশংসভাবে খুন করছে জঙ্গিরা আর গোটা দেশ নীরব হয়ে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। তাঁরা মুখে যা বলেন কাজে সেটা করেন না। এটা মেনে নেওয়া যায় না।
আরও পড়ুন-হারানো দিনের স্মরণীয় নায়িকা বিনতা রায়, আজও মনের মণিকোঠায়
শুক্রবার সকালে রাহুলের মৃতদেহ জম্মুর দুর্গানগরের বাড়িতে পৌঁছনোর সঙ্গে সঙ্গেই পুলিশকে ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান কাশ্মীরি পণ্ডিতরা। পুলিশের উদাসীনতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এদিন পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোঁড়েন পণ্ডিতরা। রাহুলের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। রাহুলের মৃত্যু গোটা কাশ্মীরি পণ্ডিত সমাজকে এক জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছে। পণ্ডিতরা সকলেই কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ভূমিকায় প্রবল ক্ষুব্ধ। রাহুল ভাটের হত্যার প্রতিবাদ জানাতে শুক্রবার জম্মু-কাশ্মীরে রাস্তায় নামেন পণ্ডিত সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ মানুষ। বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা অবরোধ করেন বিক্ষোভকারীরা। বের হয় মোমবাতি মিছিল। এই বিক্ষোভ মিছিল থেকে মোদি, শাহ ও জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট জেনারেল মনোজ সিনহার বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন-সেবার দীপ জ্বেলে যাচ্ছেন যাঁরা
এদিকে, শুক্রবার সকালে পুলওয়ামায় গুদারু এলাকায় জঙ্গিরা বাড়িতে ঢুকে খুন করল এক পুলিশকর্মীকে। মৃত পুলিশকর্মীর নাম রিয়াজ আহমেদ ঠোকার। আগের দিন কাশ্মীরে খুন হন এক সরকারি কর্মী। পরপর খুনে প্রশ্নের মুখে উপত্যকার নিরাপত্তা।