চা পানের উপকারিতা সম্পর্কে কিছু বলুন…
প্রাথমিকভাবে চা ক্লান্তি দূর করে, আলিস্যি দূর করে। মনঃসংযোগ এবং ক্ষিপ্রতা বাড়ায়। ক্যানসার রোধেও চা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এমনটাই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আসলে প্রাণিকোষের ডিএনএ সুরক্ষায় কাজ করে চায়ের বেশ কিছু উপাদান। তার ফলেই ক্যানসারের ঝুঁকি কমে বলে মনে করা হচ্ছে। এটা ঠিক, চায়ের পুষ্টিগুণ খুব বেশি নেই। তবে এতে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ক্যাটেচিন-এর মতো কিছু উপাদান আছে।
আরও পড়ুন-ছকভাঙা এক অগ্নিপুরুষ
কী ভূমিকা পালন করে এই উপাদানগুলো?
ক্যাটেচিন এবং পলিফেনলস ফ্রি রেডিক্যালস তৈরিতে বাধা দেয়, কোষের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। পলিফেনল মুখের ব্যাকটিরিয়া নষ্ট করে দেয়। শরীরের অভ্যন্তরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে চায়ে উপস্থিত পলিফেনলস। চায়ের মধ্যে এই উপাদানের উপস্থিতির পরিমাণ ২৫ শতাংশর বেশি। ৭ শতাংশ থিওফাইলিন ও থিওব্রোমিন রয়েছে চায়ে। যা শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানির জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ক্যাফেইন নামক উত্তেজক পদার্থ আছে চায়ের মধ্যে। হৃৎপিণ্ড এবং দেহের অন্যান্য পেশি সতেজ রাখতে এই উপাদান যথেষ্ট সহায়তা করে।
আর কী কী উপকার পাওয়া যায়?
চায়ের মধ্যে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যা শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। হজমে সাহায্য করে চায়ের অ্যাসেনশিয়াল অয়েল। মোকাবিলা করে ফুড পয়জনিংয়ের। চায়ের মধ্যে থাকে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান। এই উপাদান ইনফেকশনের মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। থাকে ফ্লুয়োরাইড মিনারেল। এটা হাড় এবং দাঁতের এনামেল অটুট রাখে। অতিরিক্ত স্ট্রেস, অনিদ্রার সমস্যায় মিন্ট চা খেলে উপকার পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন-রেলের তুঘলকি কাণ্ড একগুচ্ছ ট্রেন বাতিল
চা কী কী ক্ষতি করে?
অতিরিক্ত চা খেলে মূত্রের পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ চায়ের মধ্যে থাকে ক্যাফেইন জাতীয় পদার্থ। এর ফলে বারবার প্রস্রাব পায়। অনেকেই মনে করেন, সকালে গরম গরম চা খেলে পেট পরিষ্কার হয়। এটা ভুল ভাবনা। অতিরিক্ত চা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে, ঘুমের সমস্যা হয়। বাড়ে উত্তেজনা, অস্থিরতা, হৃদস্পন্দন। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় চা খেলে মহিলাদের স্ট্রেস বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে।
অনেক স্বাস্থ্য সচেতন মানুষ এখন গ্রিন টি পান করছেন। গ্রিন টি কতটা উপকারী?
গ্রিন টি সত্যিই খুব উপকারী। মনে রাখতে হবে গ্রিন টি পানীয় হয়েছে অনেক পরে। আগে ছিল ওষুধ। ক্যানসারের ঝুঁকি কমায় গ্রিন টি। কিডনি এবং ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগী গ্রিন টি পান করলে ভাল থাকেন। কমায় হৃদরোগের ঝুঁকি, রক্তে কোলেস্টোরেলের মাত্রা। কেটে গেলে গ্রিন টির লিকার লাগালে বন্ধ হয়ে যায় রক্ত পড়া। দিনে অন্তত দুই কাপ বা তার বেশি গ্রিন টি পান করলে মানসিকভাবে ফিট থাকা যায়। গ্রিন টি অর্থাৎ সবুজ চায়ের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়াও আছে খনিজ উপাদান। যা মানুষকে সুস্থ রাখতে পারে। নিয়মিত সবুজ চা পান ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকিও কিছুটা কমিয়ে দেয়। অনেকেই বাতের ব্যথায় ভোগেন। কষ্ট পান। তাঁদের আমি গ্রিন টি পান করার পরামর্শ দেব। গ্রিন টি ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন-রেলের তুঘলকি কাণ্ড একগুচ্ছ ট্রেন বাতিল
দুধ না লিকার, কোন চা বেশি উপকারী?
এটা ঠিক, দুধ এবং চিনি মেশানো চা খেতে ভাল। তবে সেটা শরীরের পক্ষে মারাত্মক ক্ষতিকর। আমি লিকার চা খেতেই পরামর্শ দেব। দুধ এবং চিনি ছাড়া। লিকার চা যথেষ্ট উপকারী। বিজ্ঞানীরাও সেই কথাই বলেন। যাঁরা দুধ ভালবাসেন, তাঁরা আলাদা করে দুধ খান। চায়ের সঙ্গে খাওয়ার দরকার নেই। আর একটা বিষয়, মেজর খাবার খেতে খেতে চা পান না করাই ভাল। চায়ের সঙ্গে হালকা স্ন্যাকস, বিস্কুট চলতে পারে।
কোন সময়ে চা পান করা উচিত?
অনেকেই সকালের জলখাবার বা দুপুরের লাঞ্চের পরে চা পান করেন। এটা তাঁদের প্রতিদিনের অভ্যাস। এই অভ্যাস কিন্তু একেবারেই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সঠিক সময়ে বা সঠিক উপায়ে চা পান না করলে শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। খাবার খাওয়ার আগে চা পান করলে সমস্যা। তার ফলে হজম বাধাপ্রাপ্ত হয়, খাবার থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাওয়া যায় না। পাশাপাশি খাবার খাওয়া শেষ করে সঙ্গে সঙ্গে চা পান করাও উচিত না। এতেও বেশকিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। খাবার খাওয়ার অন্তত আধ ঘণ্টা আগে এবং খাবার খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে চা পান করা উচিত।
আরও পড়ুন-কলেজ খুলে হচ্ছে ক্লাস, নানান সাংস্কৃতিক উৎসব, কী উদ্দেশ্যে অনলাইন পরীক্ষা
খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চা পান করলে কী কী সমস্যা দেখা দেয়?
অ্যাসিডাম টেনিকামস এবং জেসথিয়োফিলিনস নামক উপাদান রয়েছে চায়ের মধ্যে। এই উপাদানগুলো পাকস্থলীর হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়। খাবার থেকে আয়রন শোষণ করে চা। পাশাপাশি খাবার থেকে আমিষ এবং ভিটামিন শোষণ করে। চা পান করুন। তবে নিয়ম মেনে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।