অনলাইন এডুকেশনের খুঁটিনাটি

এখনও বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বাড়িতে বসে উৎসাহী পড়ুয়ারা সেই পাঠ নিচ্ছে। আধুনিক শিক্ষার একটা বড় অংশ অনলাইন এডুকেশন বা শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। এই অনলাইন এডুকেশন ভারতের আধুনিক শহরগুলিতে ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে আধুনিক উচ্চবিত্ত শিক্ষার্থীদের কাছে।

Must read

অনলাইন পাঠ
ওপারে শিক্ষক এপারে ছাত্রছাত্রী নিজের-নিজের বাড়িতে নিজেদের কম্পিউটারের সামনে পাঠ নিচ্ছে, নোটস নিচ্ছে, স্টাডি মেটিরিয়ালস নিয়ে রাখছে আগামী ক্লাসের জন্য। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় খুলে গেলেও অনলাইন পঠনপাঠন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়নি। এখনও বহু ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে বাড়িতে বসে উৎসাহী পড়ুয়ারা সেই পাঠ নিচ্ছে। আধুনিক শিক্ষার একটা বড় অংশ অনলাইন এডুকেশন বা শিক্ষার দিকে ঝুঁকছে। এই অনলাইন এডুকেশন ভারতের আধুনিক শহরগুলিতে ইতিমধ্যেই চালু হয়ে গেছে। বিশেষ করে আধুনিক উচ্চবিত্ত শিক্ষার্থীদের কাছে। এক শহর থেকে আরেক শহরে, এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে, এক দেশ থেকে আরেক দেশে এখন রমরমিয়ে ‘অনলাইন এডুকেশন সিস্টেম’ চালু হয়ে গেছে। পাশাপাশি আধুনিক অনলাইন শিক্ষার অনেকগুলি অ্যাপ বাজারে এসে গেছে। যেগুলি রেডিমেড কিনতে পাওয়া যায় বা গ্রাহক হলে সেই অ্যাপের মাধ্যমে একবারে হামাগুড়ি দেওয়া শিশুর বয়স থেকে উচ্চতর শিক্ষা পর্যন্ত রেডিমেড ইংরেজি, অঙ্ক, ভূগোল, বিজ্ঞান, ইতিহাস শিক্ষা পাওয়া যাচ্ছে। বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। এক কথায় ক্লাসরুম শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক অনলাইন শিক্ষাও চালু হয়ে গেছে জোর কদমে। আর এর মূল উৎসাহদাতা বা কার্যকারিতার কৃতিত্ব কিছুটা হলেও করোনা পরিস্থিতি। ওয়ার্ক ফ্রম হোম থেকে অনলাইন এডুকেশন। এর কৃতিত্ব কিছুটা হলেও করোনা পরিস্থিতির।

আরও পড়ুন-চা ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

সমস্যা যেখানে
এই পরিস্থিতিতে একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে ক্লাসরুম শিক্ষার সঙ্গে অনলাইন শিক্ষার। অনেক শিক্ষক-শিক্ষিকা যেমন এই পদ্ধতির সঙ্গে রপ্ত নন, তেমনই আরও বেশি সমস্যার মুখে সেই সব বাবা- মায়েরা, যাঁরা এই পদ্ধতির ভাবনা থেকে অনেক দূরে। সেক্ষেত্রে একটা বড় বৈষম্যের শিকার ওইসব ছাত্রছাত্রীরা। এই সমস্যা নিয়ে চিন্তিত শিক্ষক মহলও, যাঁরা এখনও অবগত নন সেই ভাবে। ফলে একটা বড় অংশ বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার আপডেটের সুযোগ থেকে। এই সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল রাজ্যের শিক্ষা দফতরও।

আরও পড়ুন-ছকভাঙা এক অগ্নিপুরুষ

শিক্ষার এই বিকল্প মডেল সম্পর্কে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত শুরু হয়েছে। এক পক্ষের মত, এই দরিদ্র দেশে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ও বৈষম্যের শিকার হবে এই সময়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র শিশুরা। এ কথা অস্বীকার্য যে ক্লাসরুম শিক্ষার পদ্ধতিকে কিছুতেই অবহেলা করা যায় না। অনলাইন শিক্ষার সুযোগ সবাই নিতে পারে না ঠিক, আবার ক্লাসরুম শিক্ষা এমন কিছু দিতে পারে যা অনলাইন শিক্ষা দিতে পারে না।  ক্লাসরুমে শিক্ষক ছাত্রের মন বুঝে বা পরিস্থিতি বুঝে পাঠ দান করেন। একভাবে বুঝতে না পারলে আরেক ভাবে বুঝিয়ে দেবার সুযোগ পান। শিক্ষক-ছাত্রের এক সুসম্পর্ক তৈরি হয়। যা অনলাইনে তেমন নেই। ক্লাসরুমে শিক্ষক-ছাত্রের সরাসরি সংযোগ ঘটছে। ছাত্র প্রশ্ন নিয়ে ক্লাসে আসছে, উত্তর নিয়ে ফিরছে এবং নতুন প্রশ্ন তার মনে জাগছে। শিক্ষকরা অনেকটা নমনীয় বা সংবেদী হবার সুযোগ পান। ক্লাসরুম শিক্ষার সেই ধারাকে অবহেলাও করা যায় না।

আরও পড়ুন-রেলের তুঘলকি কাণ্ড একগুচ্ছ ট্রেন বাতিল

বৈষম্যের প্রশ্ন
এই বৈষম্যের প্রশ্নেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্ট শিক্ষক সুকুমার গুছাইত। রসায়নের এই শিক্ষকের জোরালো প্রশ্ন, শিক্ষায় বৈষম্য কি এখনও নেই? বহু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রদের বসার টেবিল-চেয়ার নেই। বৈষম্য দূর করাটাই শিক্ষার কাজ। আজ থেকে শুরু করলে আগামী দিনে এই শিশুরাই আধুনিক শিক্ষার সঙ্গে রপ্ত হয়ে উঠবে। শুধু তাই নয়, তারা এই ধারার সঙ্গে পরিচিত হয়ে সরগরম হবে।
আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম। আমাদের ঘুম ভাঙল। একটা ভাইরাস আমাদের ছারখার করেছে বলেই আমরা এই অনলাইন শিক্ষায় জোর দিলাম। অনলাইন শিক্ষার কথা শুরু আজ নয়, ’৮৪ সাল থেকে। আজকের পরিস্থিতি আমাদের শিক্ষার একটা নতুন দিক খুলে দিল। অনলাইন কম্পিউটার শিক্ষার অনেক ফলপ্রসূ দিক রয়েছে, যা ক্লাসরুম শিক্ষায় নেই। ডিজিটাল ক্লাসের পুরো ব্যাপারটাই রেকর্ড হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন-পাহাড়ে গণতন্ত্র ধ্বংস চায় পদ্ম

কোনও স্টুডেন্ট অনুপস্থিত থাকলে সে ওই ক্লাসটা পরে নিজে শুনে নেবার সুযোগ থাকবে। ক্লাসরুম শিক্ষার ক্ষেত্রে তা হবার জো নেই। এ তো একটা উদাহরণ মাত্র। ছাত্রছাত্রীরা অনেক স্টাডি মেটিরিয়াল নিয়ে ক্লাস করার সুযোগ পায়। চক ডাস্টারের ক্ষেত্রে সে সুযোগ থেকে ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত।
অনলাইন শিক্ষার প্রোডাক্টিভিটি অনেক। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যদি তাদের ওয়েবসাইটের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের স্মার্টফোনের নেটওয়ার্ক সংযোগ ঘটায় তাহলে তারা সব সময়ই আপডেটেড থাকতে পারবে। নেট ব্যবহার করে অনেক বেশি শিক্ষা নিজেরাই আয়ত্ত করতে পারবে। শিক্ষার মূল শর্ত আত্মবিশ্বাস তৈরি করা, যা ছাত্রীরা হাতে-কলমে নিজেরা শিখে চিন্তাভাবনার ব্যাপ্তি ঘটাতে পারবে। ইনফরমেশনকে নলেজে কনভার্ট করতে পারবে। থাকবে তাদের ফ্লেক্সিবিলিটি বা নমনীয়তা। মূল কথা, ক্লাসরুম শিক্ষা ক্লাসের সময়সীমায় শেষ হয়ে যায়, কিন্তু অনলাইন রেকর্ডেড হয়ে থাকে। জুম ক্লাস, জুম ক্লাউড, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ একজন ছাত্রের মেন্টাল কনভার্শন করতে সাহায্য করবে।

আরও পড়ুন-বিজেপিতে আফটার শক

এখনই নয়
তবে এ কথা কখনওই বলা যাবে না, যে এই ব্যবস্থা রাতারাতি হয়ে যাবে। তার বড় কারণ অর্থ এবং ছাত্রছাত্রীদের পর্যাপ্ত নেট ব্যবহারের সুযোগ এখনও তেমন নেই। নেট ব্যবহার ব্যয়সাপেক্ষও সেখানে সবাইকে এর আওতায় আনা সরকার এবং একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল। যতদিন না শিশুদের এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে যেখানে শিক্ষার উপযোগী অর্থ এবং নেট ব্যবস্থার সুরাহা করা যাবে, ততদিন একদিকে অনলাইন এডুকেশন থাকবে, অন্যদিকে ক্লাসরুমের পুঁথিগত চক-ডাস্টার শিক্ষা ব্যবস্থাও বর্তমান থাকবে।

আরও পড়ুন-শিয়ালদহ-ফুলবাগান মেট্রো মঙ্গলবার

শেষ কথা
শিক্ষার কোনও বাঁধাধরা সীমানা বা গণ্ডি নেই। মানুষ যত সভ্যতার দিকে এগিয়েছে, শিক্ষা সেই পথেই সঙ্গী হয়েছে। সময়ের উপযোগী হয়ে শিক্ষা এগিয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষের চিন্তা-ভাবনাও। তারই এক অভিনব বিশেষ এই পদ্ধতি অনলাইন এডুকেশন। ক্লাসরুম শিক্ষারই আরেকটা ধাপ অনলাইন। কেউই কারও প্রতিযোগী নয়, পরস্পরের পরিপূরক। সময়োপযোগী। শ্রুতির যুগ থেকে তড়িৎ প্রবাহেরই শিক্ষার প্রবাহ।

Latest article