এই গ্রামে শেষ মানব শিশুটির জন্ম হয়েছিল ১৯৫২ সালে। এখন এই গ্রামে মাত্র ২৭ জন মানুষের বাস। ২০১২ সালে পড়ুয়াদের অভাবে বন্ধ হয়ে যায় গ্রামের একমাত্র স্কুলটিও।
দুর্গম পাহাড়ি এই গ্রামের বসতি ছেড়ে প্রায় সকলেই চলে গেছেন। তাই বেশির ভাগ বাড়িই অনেক দিন ধরে পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে আছে। আর এই পরিত্যক্ত বাড়িগুলো দখল করে নিয়েছে অবিকল মানুষের মতো দেখতে একগাদা পুতুল। যেগুলোকে মাত্র কয়েক হাত দূরে থেকে দেখলেও মনে হবে জলজ্যান্ত মানুষ।
আরও পড়ুন-শাশুড়ি জামাই সংবাদ
জাপানের সব চেয়ে ছোট্ট এবং কম বসতিপূর্ণ একটি দ্বীপ হল— শিকোকু। দ্বীপটির আয়তন প্রায় ১৮,৮০০ বর্গ কিলোমিটার। এই দ্বীপেই রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম— নাগোরো।
এক সময়ে এই নাগোরো গ্রামেই বসবাস করতেন প্রায় ৩০০ জন মানুষ। যা কমতে কমতে এখন মাত্র ২৭ জনে এসে ঠেকেছে।
নাগোরো গ্রামে জন্মানো শেষ শিশুটির নাম সুকিমি আয়ানো। সন্তানের জন্মের পরে সুকিমির বাবা-মাও গ্রামের অন্যান্য অনেকের মতোই রুটিরুজির সন্ধানে নাগোরো ছেড়ে অন্যত্র চলে যান।
বাবার মৃত্যুর পর ২০০১ সালে ফের এই গ্রামে ফিরে আসেন সুকিমি। তখন তাঁর বয়স ৪৯ বছর।
খুব ছোট্টবেলায় ছেড়ে যাওয়া এই গ্রামের প্রায় জনমানব শূন্য পরিত্যক্ত ঘরবাড়ি, মাঠ-ঘাট, দোকানগুলো সুকিমির মনে ভীষণ ভাবে নাড়া দিয়ে যায়।
আরও পড়ুন-আলবিদা…
কিন্তু কেউ তো এই গ্রামে নতুন করে আর আসতে চান না। যাঁরা আছেন, তাঁরাও যাওয়ার মতলবে আছেন। আর লোকজন নেই দেখেই এই গ্রামটিকে একেবারে শ্মশানপুরি বলে মনে হয়। তাই তাঁর ছোটবেলার এই সুন্দর গ্রামটিকে নিঃসঙ্গতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি এক অভিনব উপায় বের করলেন।
সত্যিকারের লোকজন না থাক, মিথ্যেকারের লোকজনকে দিয়ে এই গ্রামটাকে তো আবার আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা যায়, নাকি? তাই অবিকল মানুষের মতো দেখতে, মানুষের মাপেই পুতুল তৈরি করে সাজাতে লাগলেন গ্রামের পরিত্যক্ত বাড়ির দাওয়া, চায়ের দোকানের সামনে টুলে বসে আড্ডা মারা লোকজনের দৃশ্য। তাঁর হাতের কারিকুরিতে বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কুলের ক্লাসরুমগুলো ভরে উঠতে লাগল পুতুল-শিক্ষক আর ছাত্রছাত্রীদের ভিড়ে। গ্রামের মাঠে চাষ করার ভঙ্গিতে সারা দিন দেখা যেতে লাগল পর পর পুতুলের সারি।
শুধু সুকিমিই নন, তাঁর দেখাদেখি অনুপ্রাণিত হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন গ্রামে যে গুটিকতক বাসিন্দা রয়েছেন, তাঁরাও। ফলে হাতে গোনা মাত্র কয়েক জন সত্যিকারের মানুষ থাকলেও, বাইরে থেকে কেউ এলে এই সব দেখে তাঁর মনে হবে লোকজনে ভরা এটা একটি জমজমাট গ্রাম।
আরও পড়ুন-পাশের হারে এগিয়ে রয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর
২০১৪ সালে ‘ভ্যালি অফ ডলস’ নামের একটি তথ্যচিত্র আলোর মুখ দেখা মাত্রই সুকিমির এই অভিনব উদ্যোগ পৃথিবীর সকলের নজর কাড়ে। মুহূর্তের মধ্যে পর্যটকদের কাছে একটা দর্শনীয় স্থান হয়ে ওঠে জাপানের এই নাগোরো গ্রাম।
বর্তমানে এই গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দার সংখ্যা কম হলেও পর্যটকদের যাতায়াত লেগেই থাকে সারা বছর। ফলে গ্রামের সেই নিঃসঙ্গতা এখন অনেকখানিই কেটে গেছে এবং উপার্জনও বেড়েছে এই পুতুলদের দৌলতেই।
সুতরাং ১৯৭২ সালে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের ঘোষিত আন্তর্জাতিক বিশ্ব পরিবেশ দিবস, যেটা ১৯৭৪ সাল থেকে প্রতি বছর এক-একটা নতুন লক্ষ্য নিয়ে মহাধুমধাম করে ৫ জুন পালিত হয়, তার অনেক আগে থেকেই এই গ্রামটি যে পরিবেশ-সচেতন, সেটা বলাই বাহুল্য।