বৃষ্টিতে ভাসছে গোটা অসম। সেদিকে বিন্দুমাত্র নজর নেই মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার (Assam CM Himanta Biswa Sarma)। অথচ নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে এবার ত্রিপুরা উপনির্বাচনের প্রচারে আসছেন তিনি। শুধু হিমন্ত বিশ্বশর্মা নন, তাঁর প্রায় অর্ধেক ক্যাবিনেট রাজ্যের মানুষকে জলের তলায় ডুবিয়ে ত্রিপুরা উপনির্বাচনের প্রচারে হাজির। যা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। আর ভাগ্যের পরিহাস, যেদিনই অসমের বিজেপি মন্ত্রীরা ত্রিপুরায় পা রেখেছেন, ঠিক সেই সময় জলের তলায় ডাবল ইঞ্জিন সরকারের স্মার্ট সিটি তথা আগরতলা। একপশলা বৃষ্টিতেই জলছবি রাজধানী।
এদিকে, শুক্রবার দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে ত্রিপুরায় প্রচারে এসেছেন অসম প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি রিপুন বোরা। সাংবাদিক বৈঠকে এদিন তাঁর রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দেগে রিপুন বোরা বলেন, “গোটা অসম যখন জলে ভাসছে, তখন অসহায় মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্যের অভিভাবক হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও তাঁর পার্ষদরা। এর থেকে বড় প্রহসন আর হতে পারে না।”
একই সুর শোনা গেল তৃণমূল সাংসদ সুস্মিতা দেবের গলায়। তিনি বলেন, “২০১৮ সালে ত্রিপুরায় ভোটের প্রচারে এসে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা (Assam CM Himanta Biswa Sarma)। কিন্তু সাড়ে চারবছর কেটে গেলেও ত্রিপুরায় মানুষের দুর্দশা কমেনি বরং বেড়েছে। আসলে হিমন্ত বিশ্বশর্মা নিজের স্বার্থসিদ্ধি করতে ত্রিপুরায় বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছিলেন। তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার জন্যই ত্রিপুরাকে পাখির চোখ করেছিলেন। কিন্তু এখন সকলে বুঝতে পারছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা একজন জুমলাবাজ, দুর্নীতিবাজ নেতা।”
আরও পড়ুন: ২১ জুলাইয়ের নামে চাঁদা তুললেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে, কড়া বার্তা অভিষেকের
ত্রিপুরা প্রদেশ তৃণমূল সভাপতি সুবল ভৌমিকও কটাক্ষ করেছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে। তাঁর কথায়, “নিজের রাজ্যকে তো জলে ডুবিয়েছেনই, ত্রিপুরাকেও জলে ডুবিয়েছেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী। ঘন্টাখানেকের বৃষ্টিতে স্মার্ট সিটি আগরতলা জলের তলায়। এখানে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীও বাড়ি থেকে বেরোতে পারছেন না। এর আগে প্রচারে এসে হিমন্ত বিশ্বশর্মা জোরগলায় প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেছিলেন, বাম আমলে ত্রিপুরার যে ১০ হাজারের বেশি শিক্ষকের চাকরি গিয়েছিল, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সকলকে চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। আর সেটা না হলে তাঁকে যেন ত্রিপুরা থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হয়। কিন্তু বিজেপি সাড়ে চারবছর ক্ষমতায় থেকেও চাকরি ফেরাতে পারেনি। এবার ফের ত্রিপুরায় ভোট প্রচারে আসছেন ভাঁওতাবাজ হিমন্ত বিশ্বশর্মা। তাহলে তাঁকে এখন কী করা উচিত ত্রিপুরাবাসীর?”
এদিন সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের অভিনেতা-বিধায়ক সোহম চক্রবর্তীও ত্রিপুরার প্রাক্তন ও বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীকে তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “বাংলা আর ত্রিপুরার মানুষের ভাষা, খাওয়া, সংস্কৃতি এক। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে বাংলা যখন এগিয়ে চলেছে, তখন বিপ্লব দেব-মানিক সাহাদের হাতে সুরক্ষিত নয় ত্রিপুরা। বাংলার প্রকল্প যখন বিশ্বের দরবারে পুরস্কৃত, তখন বাম জমানার থেকেও বেশি অন্ধকারে ডুবেছে ত্রিপুরাবাসী। তাই এই উপনির্বাচনে সরকার পরিবর্তন না হলেও তৃণমূল প্রার্থীদের জয়ী করতে হবে। বার্তা দিতে হবে। আর নেই দরকার, বিজেপি সরকার।”
ত্রিপুরা তৃণমূলের ইনচার্জ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও এদিন সাংবাদিক বৈঠক থেকে ত্রিপুরার সামগ্রিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর মুখ পরিবর্তন করলেও ত্রিপুরার কোনও পরিবর্তন হয়নি। সেই সন্ত্রাস, সেই অপশাসন, সেই অনুন্নয়ন অব্যাহত। পুলিশ প্রশাসনও নির্বিকার। নির্বাচন কমিশন ঠুঁটো জগন্নাথ। বারবার অভিযোগ করার পরেও কোনও সুরাহা নেই। তাহলে কি ত্রিপুরায় উপনির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে?”