শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অসম্পূর্ণ গল্প ‘বিশুপাল বধ’। লেখক গল্পটি শেষ করে যেতে পারেননি। কিন্তু পরিচালক অরিন্দম শীলের মনে গেঁথে গিয়েছিল গল্পের থ্রিলার এলিমেন্টটিটি। সাহস করে তাই একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে ফেলেছিলেন। চিত্রনাট্যকার পদ্মনাভ দাশগুপ্তর সঙ্গে বসে কাহিনিটি সম্পূর্ণ করার কাজে হাত দিয়েছিলেন। আর তাতেই ‘বিশুপাল বধ’ হয়ে উঠল ‘ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ’ (Byomkesh Hotyamancha)। স্বয়ং পরিচালক জানালেন শ্যুটিংয়ের কাজ শুরু হওয়ার আগে এই জার্নিটিও কম থ্রিলিং ছিল না! তেমনটাই হওয়ার কথা। কারণ কাহিনির প্রেক্ষিত এমন এক তারে বেঁধে দিয়ে গিয়েছিলেন শরদিন্দু নিজে যে তার শেষটুকু গাঁথা এক্সাইটিং না হয়ে যায় না। সেই কাহিনিই এখন পর্দায় দেখার অপেক্ষায় মানুষ।
কাহিনির প্রেক্ষাপটে আছে ১৯৭১-এর নকশাল আন্দোলন। আর কাহিনি শুরু এক থিয়েটারের মঞ্চ থেকে। ভরা প্রেক্ষাগৃহে নাটক চলাকালীন একটি খুন হয়ে যায়। সেই খুনের নেপথ্যে কী বা কারা এবং কেন আছে তা জানতেই তদন্তে নামে ব্যোমকেশ। পরতে পরতে আবিষ্কার করতে থাকেন এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে প্রেম, বিশ্বাসঘাতকতার নানা রং। ব্যোমকেশ তাঁর ক্ষুরধার মেধাশক্তির মাধ্যমে সব জট ছাড়িয়ে কীভাবে শনাক্ত করেন খুনিকে তা নিয়েই এগিয়েছে গল্প। ব্যোমকেশ-অনুরাগী পাঠক যাঁরা শরদিন্দুর সব কাহিনি পড়ে ফেলেছেন এ-ছবি তাদের জন্যও বাড়তি কৌতূহলের কারণ, এই গল্পের শেষটা তাঁরাও জানেন না! গল্পের পুনর্নিমাণ কেমন হল তা জানার উৎসাহ সবার। অরিন্দম যদিও আত্মবিশ্বাসী। জানালেন, “আমার চারটে ব্যোমকেশের মধ্যে এটিই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল শুরু থেকেই। শ্যুটিং লেভেলে সেটা আরও বেড়েছে। এই প্রথম, পুরো ব্যোমকেশের শ্যুটিং কলকাতায় হয়েছে। প্রচণ্ড ব্যস্ততা ও দ্রুততার সঙ্গে পুরো ছবির শ্যুটিং করেছি আমরা। কিন্তু প্রত্যেকেই খুব স্যাটিসফায়েড। আর শেষের চমকটা আমি নিশ্চিত দর্শকের ভাল লাগবেই।’’
চার বছর পর ব্যোমকেশ হিসেবে দর্শকের সামনে আসতে চলেছেন আবির চট্টোপাধ্যায়। বেশ ক’জন ব্যোমকেশকে দর্শক দেখে ফেললেও এখনও অবধি অলিখিতভাবে ধারে ও ভারে এগিয়ে আবিরই। ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত বাঙালি গোয়েন্দা বেশে আবিরের আবির্ভাব আমজনতার স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল। তাই প্রত্যাশা বেশি। ব্যোমকেশের আবির জানালেন, “বইয়ে ব্যোমকেশকে পড়া ও তাকে পর্দায় ফুটিয়ে তোলা সম্পূর্ণ আলাদা। পাঠক ও দর্শক-মনে ব্যোমকেশের জায়গা বরাবরই স্পেশ্যাল। আমার কাছেও তাই। কারণ এটা অস্বীকারের কোনও জায়গাই নেই যে এই ব্যোমকেশই আমায় প্রথম বড়পর্দার দর্শক-মনে জায়গা করে দিয়েছিল। এটা আমার তেরোতম বছর হল ব্যোমকেশ-এ (Byomkesh Hotyamancha) অভিনয়। কিন্তু প্রতিটা ব্যোমকেশই আমার কাছে সমান চ্যালেঞ্জিং। একই সঙ্গে খুব দায়িত্বশীল ও সতর্ক থাকি। তবে আমরা খুব মজা করেই কিন্তু এই ছবির শ্যুটিং করেছি।’’ আবির এও জানিয়েছেন, “যেহেতু মূল ঘটনাটা ঘটছে এক থিয়েটার মঞ্চে তাই ছবির অনেকটা অংশেই থিয়েটার জড়িয়ে। দুটো আর্ট ফর্মকে একসঙ্গে দেখতে পাবেন দর্শক।’’ ছবির আর এক প্রাপ্তি ফের আবির-সোহিনীর জুটিকে পর্দায় দেখতে পাবেন দর্শক। ব্যোমকেশ সহধর্মিণীর ভূমিকায় অভিনয় করছেন সোহিনী সরকার।
আরও পড়ুন: ভেস্তে গেল বিজেপির নোংরা রাজনীতি, ১০০ দিনের কাজ দেখে প্রশংসা কেন্দ্রীয় দলের
অরিন্দমের আগের ছবিগুলিতে ব্যোমকেশের বন্ধু, সহচর অজিতের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন ঋত্বিক চক্রবর্তী ও রাহুল বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার আছেন সুহত্র মুখোপাধ্যায়। জানালেন, “একেন বাবুর সহকারী থেকে ব্যোমকেশের সহকারী। ভূমিকাটা এক হলেও চরিত্রগত ভাবে আলাদা। মিল একটাই, দুজনেই অবিবাহিত! সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি যোগ্য অজিত হয়ে ওঠার জন্য।’’ ব্যোমকেশ সিরিজে এবারই প্রথম অভিনয় করেছেন পাওলি দাম। সুলোচনার চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা দারুণ। জানালেন, আগেও কয়েকবার কথা হলেও নানা কারণে অভিনয় হয়ে ওঠেনি। এবার ব্যোমকেশ ফ্র্যঞ্চাইজির অংশ হতে পেরে খুব ভাল লাগছে। ছবির অন্য কলাকুশলীদের মধ্যে আছেন অর্ণ মুখোপাধ্যায়, কিঞ্জল নন্দ, অনুষা বিশ্বনাথন, জ্যাক, পদ্মনাভ দাশগুপ্ত। ‘ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ’র জন্য হাত মিলিয়েছেন দুই প্রযোজনা সংস্থা, এসভিএফ ও ক্যামেলিয়া প্রোডাকশনস। ছবির সংগীত পরিচালনা করেছেন বিক্রম ঘোষ।
‘হর হর ব্যোমকেশ’, ‘ব্যোমকেশ পাওয়ার’, ‘ব্যোমকেশ গোত্র’-সহ অরিন্দমের আগের তিনটি ব্যোমকেশ যথেষ্ট জনপ্রিয় হয়েছিল। এবার ১১ অগাস্ট ‘ব্যোমকেশ হত্যামঞ্চ’র পাশাপাশি মুক্তি পাচ্ছে দুটি বলিউড বিগ-বাজেট ছবি, ‘রক্ষাবন্ধন’ ও আমির খানের ‘লাল সিং চাড্ডা’। সুতরাং চ্যালেঞ্জ জোরদার। নির্মাতারা আশাবাদী দর্শক তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী ঠিক হলমুখী হবেন।