আগরতলা : ত্রিপুরায় তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক দাপট যত বাড়ছে, ততই ভয় বাড়ছে বিজেপির। তাই ক্রমাগত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও এই হামলা জারি রইল। এদিন আগরতলার দশরথ অডিটোরিয়ামে দলের কর্মিসভা এবং যোগদান কর্মসূচি ছিল। সেখানে উপস্থিত হন মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল, সুস্মিতা দেব, ত্রিপুরার তৃণমূল নেতা সুবল ভৌমিক–সহ একাধিক নেতা-কর্মী এবং প্রচুর সমর্থক।
আরও পড়ুন : খুঁজে পাওয়া যায়না অধীরকে, ক্ষোভ মানুষের
আচমকাই হলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। প্রায় অন্ধকারের মধ্যেই হলে সভা এবং যোগদান কর্মসূচি শেষ করতে হয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। বিদ্যুৎ ফিরে আসেনি। এখানেই শেষ নয়। আগরতলায় শুক্রবার একটি পদযাত্রা করার ঘোষণা আগেই করেছিল দল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বিজেপি প্রশাসন সেটি বাতিল করে দেয়।
এদিন সুস্মিতা বলেন, মমতাদির নেতৃত্বে আগামী দু’বছরের মধ্যে আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার গঠন করব ত্রিপুরায়। আমরা নিশ্চিত। আমি ত্রিপুরার মাটিতে এসেছি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। ত্রিপুরার প্রত্যেকটা জেলা, ব্লকে আমরা তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠন তৈরি করব। এরপরই সুস্মিতা দেব বিজেপিকে তোপ দেগে বলেন, আমি বিজেপির সরকারকে বলতে চাই, সাড়ে তিন বছরের যে বিশ্বাসঘাতকতা ত্রিপুরার জনসাধারণের সঙ্গে করেছেন, সেটা বিচার করার সময় এখন চলে এসেছে। অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়েও সরব হন সুস্মিতা। বলেন, এখন যিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, তিনি ত্রিপুরার মাটিতে কাজ করতে এসেছিলেন। ত্রিপুরার মানুষকে হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন মিসড কল করলেই উনি প্রত্যেকটা ঘরে একজনকে চাকরি দেবেন। আজ ক’টা চাকরি হয়েছে তার বিচার আপনারা করুন। বলা হয়েছিল ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সুবিধা সমস্ত কিছু বিজেপি সরকার করে দেবে, কিন্তু বিজেপি সরকার ত্রিপুরাতে কোনও কাজ করেনি। সুস্মিতা আরও বলেন, বিজেপি বলেছিল, সরকার গঠন হওয়ার এক মাসের মধ্যে সপ্তম পে কমিশন লাগু হবে, এখনও পর্যন্ত তা লাগু হয়েছে কি না, তার বিচার ত্রিপুরার জনতা করবে। সুস্মিতার কথায়, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাজের ইতিহাস আপনারা নিশ্চয়ই জানেন। উনি যা বলেন তা করে দেখান। এখানে যে ইস্তাহার হবে তা ত্রিপুরার জনসাধারণ লিখে দেবে।
আরও পড়ুন কোচের বিরুদ্ধেই ম্যাচ ফিক্সিংয়ের বিস্ফোরক অভিযোগ মনিকার
এদিন আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে দেখা করতে যান সুস্মিতা। ত্রিপুরার বিজেপি সরকার ২০১৮ সালে ১০,৩২৩ চাকরি আটকে থাকা শিক্ষকদের জন্য একটি ‘স্থায়ী সমাধান’ আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল। কিন্তু মাত্র দু’বছর পরে, করোনা অতিমারি শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই, ২০২০ সালের মার্চ মাসে – সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সেগুলি বাতিল করা হয়েছিল।
মোট ১০,৩২৩ জন স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং অস্নাতক শিক্ষককে ২০১০ সাল থেকে বিভিন্ন পর্যায়ে ত্রিপুরার সরকারি স্কুলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু পরে এই বিষয়ে মামলা দায়ের হলে আদালত এই নিয়োগকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করে। ২০১৭ সালে রাজ্য সরকার একটি বিশেষ আবেদন করেছিল, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছিল। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের পরে শিক্ষকদের অবসর নেওয়ার কথা ছিল এবং তাৎক্ষণিক ভিত্তিতে শেষ হওয়ার কথা ছিল।
২০১৮ সালের নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট তাদের ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত এককালীন চূড়ান্ত মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়, যার পরে শিক্ষকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। বিপ্লব দেবের সরকার তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু তিন বছর পরেও সেটিও পূরণ করেনি। এই শিক্ষকদের পাশে পেতে তাঁদের সঙ্গে দেখা করলেন তৃণমূল নেত্রী সুস্মিতা দেব। সূত্রের খবর, শিক্ষক সংগঠনের সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন।