ছোটপর্দায় বৈচিত্রের খোঁজে মরীয়া প্রতিটি চ্যানেল। আর এক্ষেত্রে তাদের মূল হাতিয়ার নায়িকার চরিত্রায়ণ। তা দিয়ে শুরুতেই চমক দিতে চান তাঁরা। তাই নায়িকারা কখনও অটো চালায়, কখনও মুদির দোকান, কখনও বাজায় ঢাক, কখনও বানায় মিষ্টি। আবার কখনও হয় শখের গোয়েন্দাও। মেগা দুনিয়ায় এরকমই আর এক ইউনিক চরিত্রের প্রবেশ ঘটেছে এই সপ্তাহে। স্টার জলসায় শুরু হয়েছে নতুন ধারাবাহিক ‘মাধবীলতা’। জানাচ্ছেন প্রীতিকণা পালরায়
গাছেদের বন্ধু মাধবীলতা। জঙ্গল তার প্রাণ আর গাছ তার মা! গাছেরাই তার সুখ-দুঃখের সঙ্গী। তাদের মধ্যেই সে খুঁজে পায় মনের শান্তি, প্রাণের আরাম। জঙ্গলে ঘেরা জংলাহাটা গ্রামের মেয়ে সে। বেড়ে ওঠা তাই গাছেদের সঙ্গেই। অবাধ বিচরণ জঙ্গলের আনাচ-কানাচে। ঠিক যেভাবে প্রিয়জনদের খুঁটিনাটি বিষয়ে সকলে খেয়াল রাখে, মাধবীলতা খবর রাখে জঙ্গলের গাছেদের। আর সেকারণেই তার অসম্ভব অধিকারবোধ এই জঙ্গলের ওপর। তীক্ষ্ণ নজর তাদের যত্ন-আত্তির দিকে। কোনও সন্দেহ নেই এরকম এক প্রেক্ষিত বাংলা ধারাবাহিকে ব্যতিক্রমী। দর্শক দেখতে পাচ্ছেন একেবারে টাটকা তাজা দৃশ্যপট। সঙ্গে আর এক পাওনা মাধবীলতা স্বয়ং। কারণ এই চরিত্রে অভিনয় করছেন ‘জীবন সাথী’র ঝিলম অর্থাৎ শ্রাবণী ভুঁইয়া।
আরও পড়ুন-নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার
ট্রেলার দেখেই বোঝা যাচ্ছিল ‘মাধবীলতা’ নিয়ে অন্যরকম ভেবেছেন প্রযোজক-পরিচালক স্নেহাশিস চক্রবর্তী। টেলিভিশনে বহুদিন যাবৎ প্রচুর হিট শো দর্শকদের উপহার দিয়েছেন স্নেহাশিস। টানটান গল্প আর চড়া ড্রামায় ভরপুর থাকে তাঁর শো। এক্ষেত্রেও তাই হবে বেশ বোঝা যায় প্রথম থেকেই। যদিও খুব সম্প্রতি এই চ্যানেলেই তাঁর পরিচালিত ধারাবাহিক ‘খুকুমণি হোম ডেলিভারি’ অল্পদিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল একসময় চ্যানেল টপার হওয়া সত্ত্বেও। গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল, চ্যানেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্নেহাশিসের হাউসের মনোমালিন্যের। কিন্তু তারপরেই এত দ্রুত অন্য শো নিয়ে ফিরে আসায় আপাতত সেই গুঞ্জন বন্ধ। আর স্নেহাশিস গল্প পরিবেশনও করছেন নিজের স্টাইলেই। যদিও তিনি নিজেও ধারাবাহিকে একঘেয়েমি ও প্রেক্ষাপটের অভাব নিয়ে যথেষ্ট বিরক্ত। সাংবাদিক বৈঠকে তেমনটাই জানালেন, “কোনও ধারাবাহিকের গল্পই ইদানীং মন কাড়তে পারছে না সেভাবে। একই ধরনের গল্প এদিক- ওদিক করে দেখানো হয় আজকাল। এ কারণেই মানুষ দ্রুত আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে আর চ্যানেলগুলিও বাধ্য হয়ে শো তুলে নিচ্ছে। সব মিলিয়ে ভেবেছিলাম আর ধারাবাহিক বানাবই না।”
আরও পড়ুন-কমিশনের সুপারিশে অযোগ্য হেমন্ত, স্বামীর চেয়ারে কল্পনা
যদিও থেমে যাব বললেই থেমে থাকা যায় না সব সময়ে। আর তাই তিনি চেষ্টা করেছেন গল্পে নতুনত্বের স্বাদ আনতে। এও জানিয়েছেন, এ কাহিনির সূত্র তিনি বাস্তব থেকেই পেয়েছেন। “চারপাশে সবুজ ধ্বংস আজকের দিনে এক জ্বলন্ত সমস্যা। নগরায়ণের কারণে যেমন নির্দ্বিধায় গাছ কাটা পড়ছে, পাশাপাশি এক শ্রেণির মানুষ অসাধু উদ্দেশ্যে সবুজ শেষ করছে। মূলত সবুজ বাঁচানোর বার্তা দিতেই আমার এই ধারাবাহিক,” জানালেন স্নেহাশিস। এও বললেন, ওড়িশার এক জঙ্গলে এমনই এক মেয়ের দেখা পেয়েছিলেন তিনি! পরিবেশের জন্য লড়াই করাই ছিল যার জেদ। তার মতই মাধবীলতা। গাছেদের মতোই সহজ সরল আর সবুজ। কিন্তু সেই হাতেই অস্ত্র উঠে আসে যখন সে দেখতে পায় জঙ্গলে চোরাকারবারিরা অবৈধভাবে গাছ কাটছে, কাঠ চালান দিচ্ছে। ওঁত পেতে থাকে ও। হাতেনাতে ধরেও ফেলে আর হুমকি দেয়, গাছেদের প্রাণ কাড়লে তাদের প্রাণ কাড়তেও দ্বিধা বোধ করবে না সে। মাধবীলতাকে রীতিমতো ভয় পায় অঞ্চলের দুষ্কৃতীরা। কিন্তু কিছু মানুষ থাকে যারা গিরগিটির মতো রং বদলায়। পুষ্পরঞ্জন চৌধুরী তেমনই এক চরিত্র। প্রকাশ্যে তিনি জঙ্গলমহলের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলছেন, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নিজের হাতে গাছও পুঁতছেন কিন্তু আড়ালে তাঁর রূপ ও কার্যকলাপ একেবারেই অন্য। চোরাকারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশ শুধু নয়, জঙ্গলে গাছ কাটার প্রত্যক্ষ মদতদাতা তিনি। মাধবীলতার অসম লড়াই শুরু হয়। পুষ্পরঞ্জনের চরিত্রে অভিনয় করছেন কুশল চক্রবর্তী।
এই লড়াইয়ে ভীষণ অদ্ভুতভাবেই যদিও মাধবীলতা পাশে পায় আরেকজনকে। নাম সবুজ। প্যাশন ফোটোগ্রাফি। জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে বেরিয়ে ছবি তোলা সবুজের নেশা। সবুজের আরেকটা পরিচয় সে পুষ্পরঞ্জনের ছেলে! কিন্তু জানে না তার আড়ালে থাকা রূপ। সবুজ মাধবীলতাকে দ্যাখে জঙ্গলের মধ্যেই। নিজের খেয়ালে ছবি তুলতে তুলতে হঠাৎই তার ফ্রেমে ধরা পড়ে মাধবীলতা। সবুজ দেখতে পায় মাধবীলতা চোরাশিকারিদের সঙ্গে টক্কর দিচ্ছে। তার এই লড়াকু চরিত্র সবুজের মনে গেঁথে যায়। ঠিক করে যে মেয়ে গাছ বাঁচানোর জন্য প্রাণ বাজি রাখতে পারে তার পাশে দাঁড়াবে সে। সবুজের চরিত্রে অভিনয় করছেন ‘বরণ’ ধারাবাহিকখ্যাত সুস্মিত মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন-সুকান্তকে পাল্টা তির ফিরহাদের, বিজেপি চালাচ্ছে সিবিআই-ইডি?
‘মাধবীলতা’র প্রেক্ষাপট দেখে দর্শক আশাবাদী হলেও আশঙ্কা একটাই, এই গল্পেও পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের মেয়ের সঙ্গে ক্ষমতাশালী অভিজাত পরিবারের ছেলের প্রেম যে হবে তা পরিষ্কার। কিন্তু শেষ অবধি তা যদি গিয়ে ঠেকে বিয়ের পর ওই শাশুড়ি-বউমার লড়াইয়ে তবেই মুশকিল। যে মেয়ে এখন দা হাতে দুষ্কৃতী তাড়া করছে সেই মেয়েই ঘরের কোণে তখন চোখের জল ফেলবে আর করুণার পাত্রী হবে! যদিও ধরে নেওয়া যায় এই চেনা ক্লিশে ছকে পড়বে না ‘মাধবীলতা’ কারণ এ বছরেই শুরু হওয়া বেশ ক’টি নতুন ধারাবাহিক সাপ্তাহিক পরীক্ষায় নাম্বার ভাল না করায় হয় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে নয়তো রাতের স্লটে কোনও মতে টিকে আছে। মাধবীলতা দেখানো হচ্ছে সোম থেকে রবি প্রতিদিন রাত সাড়ে আটটায়।