প্রতিবেদন : নবান্ন অভিযান-পরবর্তী অধ্যায়ে পুলিশি তদন্তেই আস্থা রাখলেন রাজ্যপাল লা গণেশন। নবান্ন অভিযানের নামে কলকাতার রাজপথে যে তাণ্ডব-ধ্বংসলীলা-গাড়ি ভাঙচুর, আগুন জ্বালানো, উপ-নগরপালকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। তদন্ত চলছে। ইতিমধ্যেই ধরা পড়েছে বেশ কিছু দুষ্কৃতী। এই পরিস্থিতিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় দলকে কলকাতায় পাঠিয়ে পুলিশি তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বিজেপি। কিন্তু শনিবার রাজভবনে একটি বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানের ফাঁকে সংবাদমাধ্যমের সামনে পুলিশি তদন্তে আস্থা জানিয়ে বিজেপির এই অসৎ উদ্দেশ্যে কার্যত জল ঢেলে দিলেন বাংলার রাজ্যপাল।
আরও পড়ুন-ডেঙ্গি : নোটিফায়েড ডিজিজ, সরকারি-বেসরকারি স্বাস্থ্য সমন্বয়ের উপর জোর রাজ্য সরকারের
এদিন সাংবাদিকরা তাঁকে কলকাতায় বিজেপির পর্যবেক্ষক টিম পাঠানো নিয়ে প্রশ্ন করলে রাজ্যপাল জানিয়ে দেন, পুলিশ তো তদন্ত করছে। তদন্তেই সবটা প্রমাণিত হবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক মাইলেজ পেতে বিজেপির পর্যবেক্ষক টিম কিংবা বঙ্গবিজেপি নেতাদের তুষ্ট করার জন্য একটি শব্দও খরচ করেননি রাজ্যপাল লা গণেশন। ফলে এক্ষেত্রেও মুখ পুড়ল বিজেপির। শনিবার এই কেন্দ্রীয় টিমকে রাজনৈতিক পর্যটক বলে কটাক্ষ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, বিজেপি গুন্ডামি করে এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে এই ধরনের টিম পাঠাচ্ছে, এরা রাজনৈতিক পর্যটক, এদের কোনও গুরুত্বই নেই।
আরও পড়ুন-সে প্রথম প্রেম আমার…
বঙ্গবিজেপির নেতাদের একের পর এক নির্লজ্জ বেহায়ার মতো আচরণ কার্যত হাসির খোরাকে পরিণত হয়েছে। নবান্ন অভিযানের নামে কলকাতার রাজপথে দিনভর তাণ্ডব চালিয়ে যে গুন্ডামির নিদর্শন বিজেপি রেখেছে, পুলিশ সেই গুন্ডাদের ধরপাকড় শুরু করায় এখন তাদেরই ছাড়াতে বিজেপি কেন্দ্রীয় দল পাঠিয়েছে। রাজনৈতিক উজবুক ছাড়া এ-কাজ কেউ করে? বাংলার মানুষ এই নাটক দেখছেন। বিজেপির এই কেন্দ্রীয় দলকে রাজনৈতিক পর্যটক আখ্যা দিয়ে কুণাল ঘোষের বক্তব্য, এটা বাংলা বলেই ইচ্ছেমতো ঘুরে-বেড়িয়ে সমালোচনা করতে পারছেন ওঁরা। উত্তরপ্রদেশ-ত্রিপুরা-অসম হলে তো বিমানবন্দরের বাইরেই বেরতে দিত না বিজেপি। তখন বোধহয় এ-সব মনে থাকে না। গুন্ডামি করে এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছে। এ-সবের কোনও গুরুত্ব নেই। কুণালের সংযোজন, এই রাজনৈতিক পর্যটকদের পাঠানো বিজেপির একটা বাধ্যবাধকতা। নবান্ন অভিযানের নামে গুন্ডারা লাঠি, গুলি, রড, বারুদ, বোমা— সব জড়ো করেছিল। তার অনেকটা ব্যবহারও হয়েছে। উপ-নগরপালকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। ২৭ জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন। পুজোর মুখে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি হয়েছে। এখন রাজনৈতিক পর্যটকদের পাঠিয়ে দেশের সবথেকে নিরাপদ শহর কলকাতায় সন্ত্রাসের নামে মিথ্যে কথা বলছে বিজেপি।
আরও পড়ুন-জলরং
এটা সবদিক থেকে প্রমাণিত যে বিজেপির সঙ্গে বাংলার মানুষের কোনও সংযোগ নেই। ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচন ও তার পরবর্তী সব ক’টি নির্বাচনে তা বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে। ফলে যেকোনওভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে বদনাম করতে চাইছে। ইডি-সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে পিছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। এই আবহে নবান্ন অভিযানের নামে রাস্তায় গুন্ডা নামিয়ে একদল লোককে খেপিয়ে নিজেরা নিরাপদ জায়গায় চলে গিয়েছে লোডশেডিং অধিকারী-সহ বাকি বিজেপি নেতৃত্ব। এখন নিজেদের লজ্জা ঢাকতেই কেন্দ্রীয় টিম দিয়ে মুখরক্ষার নাটক চলছে। কুণাল ঘোষের কথায়, আসলে ওরা দেখতে এসেছে যেভাবে ওদের বিরোধী দলনেতা ডোন্ট টাচ মাই বডি বলে, একা হেঁটে গাড়িতে উঠে গেল কীভাবে! বিনা বাধায় আত্মসমর্পণ করল কীভাবে! শুক্রবার বিধানসভায় এটা নিয়ে কোনও আলোচনাও করল না। লোকজন নেই তো! কুণালের সংযোজন, ওদের টিম এসেছে যখন মিথ্যে কথা না বলে উপ-নগরপালের স্টেটমেন্ট নিন, ভুক্তভোগী মানুষদের সঙ্গে কথা বলুন, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলুন। কই এরকম পর্যবেক্ষক টিম তো কিন্তু উত্তরপ্রদেশ যায় না যেখানে ধর্ষণ- হত্যা-নির্যাতন চলে প্রতিনিয়ত। মানুষ সবটাই বুঝতে পারছেন ফলে এসবের কোনও তাৎপর্য নেই। সাফ কথা তৃণমূল মুখপাত্রের।