দেবর্ষি মজুমদার, বীরভূম: মহারাজ নন্দকুমারের আবাসভূমি বীরভূমের নলহাটি থানার আকালীপুর গ্রামে কালীপুজো হয় দিনে। এটি জরাসন্ধর কালীপুজো নামে খ্যাত। ভয়ঙ্কর দর্শনা মা এখানে সাপের কুণ্ডলীর উপর পদ্মাসনে অধিষ্ঠিতা। দেহের অলঙ্কারও সাপের। মহারাজ নন্দকুমারের শেষ বংশধর অপুত্রক হওয়ায় তাঁর মধ্যম ভ্রাতা রাজকৃষ্ণ রায় দত্তক নেন জ্যেষ্ঠ বোনের ছেলেকে। তাঁরাই উত্তরসূরি বলে জানান পরিবারের সদস্য ভবানীশঙ্কর রায়।
আরও পড়ুন-১৩৪ কোটির লেনদেন
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত দেবাশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, পুরাকালে মগধের রাজা জরাসন্ধ পাতালে মা কালীর সাধনা করতেন। তখন বিহারের গয়াকে বলা হত মগধ। কথিত, জরাসন্ধের মৃত্যুর পর বহুদিন মাটির নিচে থেকে যায় এই কালী। রাজস্থানের যোধপুরের রানী অহল্যাবাই কিছুদিন মগধে থাকার সময় শিবের স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এক জায়গায় খননকাজ করান। সেখানেই শিবলিঙ্গের পাশাপাশি একটিমাত্র কষ্টিপাথরে তৈরি বেদি-সহ মূর্তি পান। যেহেতু জায়গাটি কাশীরাজ চৈত সিংহের, তিনি সেটি কাশীরাজকে দিয়ে দেন। মগধে রাজত্ব করতেন চৈত সিং। মূর্তিটি তদানীন্তন ইংরেজ শাসক ওয়ারেন হেস্টিংসের নজরে পড়ায় তিনি মূর্তিটি ইংল্যান্ডে নিয়ে যেতে চান। তাঁর হাত থেকে মূর্তিটি বাঁচাতে রাজা মূর্তিটি কাশীর দশাশ্বমেধ ঘাটের কাছে গঙ্গার জলে লুকিয়ে রাখেন।
আরও পড়ুন-বিজেপিতে ফের বিদ্রোহ শুরু
কালক্রমে মহারাজ নন্দকুমার কাশী পৌঁছন। তখন তিনি বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব সিরাজউদ্দৌলার অধীন বাংলার দেওয়ান। একদিন রাতে মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে মূর্তিটিকে গঙ্গাবক্ষ থেকে উদ্ধারের কথা কাশীরাজকে জানান। চৈত সিং মায়ের ইচ্ছে বুঝে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন। সেই মূর্তি মহারাজ নন্দকুমার নিয়ে আসেন গঙ্গাপথে মুর্শিদাবাদে। সেখান থেকে দ্বারকা নদ হয়ে তিনি ব্রহ্মাণী নদীতীরে আকালীপুর গ্রামের ধারে মূর্তিটিকে বটগাছের নীচে বসান। নন্দকুমারকে এর পর মিথ্যে মামলায় ফাঁসায় ইংরেজরা। তিনি বন্দি হলে অসম্পূর্ণ মন্দিরে মূর্তি প্রতিষ্ঠা করেন তাঁর ছেলে গুরুদাস রায়।
আরও পড়ুন-শাড়িতে নেই কালি
১৭৭৫ সালের ৫ অগাস্ট নন্দকুমারের ফাঁসির পর গুরুদাস অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে তাঁর বড় মেয়ের ছেলেরা পুজোর দায়িত্ব নেন। ১৭৭৫ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মোট ২৩৫ বছর মন্দিরে কোনও সংস্কার হয়নি। রাজপরিবারের নির্দেশ অনুযায়ী ভোগের মধ্যে থাকে ভাত, একটি ভাজা, মুগের ডাল, তরকারি ও তেঁতুল দিয়ে মাছের টক। পুরানো নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিন দশ পোয়া অর্থাৎ প্রায় দু’কেজি আতপ চালের ভোগ হয়।