বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার: বিজেপির বাংলাভাগের চক্রান্তের খবর ফাঁস হতেই ফুঁসছে আলিপুরদুয়ার। বিজেপির বিভেদের রাজনীতির বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে প্রান্তিক জেলা আলিপুরদুয়ারের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব থেকে শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক সকলেই। ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন বর্ণ ও ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সহাবস্থান বাংলার এই উত্তর অংশে। যারা সবসময় রাজ্য ও দেশের উন্নতিতে নিজেদের সেরাটা দিয়েছে। তাই সকলেই মুখ খুলেছেন।
আরও পড়ুন-আন্দোলনের নামে উসকানির রাজনীতি
প্রবীণ শিক্ষাবিদ তথা বঙ্গরত্ন পরিমল দে বললেন, বছরদেড়েক আগে থেকে কেন্দ্রীয় সরকার চক্রান্ত করছে বাংলাভাগের। ডুয়ার্স-সহ বেশ কিছু অংশকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আলিপুরদুয়ারের মানুষ হিসেবে সর্বতোভাবে এর প্রতিবাদ করছি। একবার বঙ্গভঙ্গের চেষ্টায় বাংলার মানুষ প্রতিবাদ করেছিল ১৯০৫ সালে। আবার চেষ্টা হচ্ছে। বাংলাকে অখণ্ড রাখব আমরা, বাংলার মানুষেরা। অনেক কিছু হারিয়ে তবে এই বাংলাকে পেয়েছি। এই বাংলা বাঙালির পরিচয়, এই পরিচয় হারাতে চাই না। বঙ্গভঙ্গ করা হয়েছিল বাঙালি জাতির সামগ্রিক শক্তিকে খর্ব করতে। ফের সেই চেষ্টাই হচ্ছে। এটা স্বেচ্ছাচারী ও বিচ্ছিন্নতার ভাবনা ছাড়া কিছুই নয়।
আরও পড়ুন-দীপাবলি ও ধনতেরাস
রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদের সদস্য ধীরেশচন্দ্র রায় বললেন, বিজেপির বাংলাভাগের ব্লু প্রিন্ট কিছুই নয়, এটি রাজনৈতিক চমক। কারণ, বিজেপি নিজেও জানে, এটা তারা কোনও দিন করতে পারবে না। আর এটা তাদের গোপন অ্যাজেন্ডা হলে কোনও দিনই ফাঁস হত না। বিজেপি ইচ্ছে করে কেনা সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে এটা ছড়াচ্ছে। কারণ তারা জানে, উত্তরবঙ্গের সহজ সরল রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষ এই খবরে উৎসাহিত হতে পারে। আগামী লোকসভা ভোটে এই সম্প্রদায়ের ভোট বিজেপি নিজেদের বাক্সে সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যেই এটা করেছে। উত্তরবঙ্গে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ একসঙ্গে একে-অপরের সুখদুঃখে সঙ্গী হয়ে বসবাস করে। বিজেপি একুশের ভোটে এই রাজ্যে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, তাই এটা তাদের নতুন ভোটকৌশল।
আরও পড়ুন-গয়নাকথা
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান পরিতোষ বর্মন বলেন, বিজেপি দলের প্রধান মুখ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রায় দশ বছর প্রধানমন্ত্রীর আসনে, কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়ার সাহস দেখাননি। কারণ সংবাদমাধ্যম জনগণের প্রতিনিধি হয়ে প্রশ্ন করে। উনি যে জনগণকে ভয় পান, এর থেকেই প্রমাণ হয়। আর এই ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী কার্যকলাপের মধ্যে দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিকতা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা বিজেপি সর্বদা করে থাকে। এই মানসিকতা থেকেই এই বাংলাভাগের কুবুদ্ধি ওদের মাথায় এসেছে। বাংলা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, এটা বিজেপির সহ্য হচ্ছে না। তাই মাঝে মাঝে বাংলাভাগের জিগির তুলে ভোট বাক্স ভরাতে চায়। কিন্তু বাংলার মানুষ যথেষ্ট রাজনৈতিক বুদ্ধিসম্পন্ন, তারা বিজেপির এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে।
আরও পড়ুন-কে যায় রে…
বাংলাভাগের তীব্র বিরোধিতা করে জেলা তৃণমূল সভাপতি প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, ২০১১-র আগে বাংলার অবস্থা কী ছিল! পাহাড় অশান্ত, উত্তরের জেলাগুলোতে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন চলছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শাসনভার হাতে নেওয়ার পর প্রথমেই রাজ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। পাহাড় এখন শান্ত, যদিও বিজেপি মাঝে মাঝে সেখানে অশান্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের জোয়ার বইছে রাজ্য জুড়ে। উত্তরের জেলাগুলোতে যে পরিমাণ উন্নয়ন এই ১১ বছরে হয়েছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে বাংলাভাগের চক্রান্ত করে ঘুরপথে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখছে বিজেপি। বাংলার শান্তিকামী মানুষ তা কখনই হতে দেবে না। বিজেপি যখন দেখছে বন্ধ চা-বাগান খুলে গিয়েছে, বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে গিয়েছে, রাস্তাঘাট ঝাঁ-চকচকে, সেখানে মানুষের ভোট তারা পাবে না। তাই বাংলাভাগের চক্রান্ত।