ঘুরে আসুন হায়দরাবাদ

ঐতিহাসিক শহর হায়দরাবাদ। আছে বেশ কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। এখানকার বিরিয়ানি স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। কয়েকদিনের জন্য হাই-টেক শহরটি ঘুরে দেখতে পারেন। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

না গরম, না ঠাণ্ডা। উপভোগ্য এই সময়ে বেরিয়ে পড়তে ইচ্ছে করছে? কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন হায়দরাবাদ (Hyderabad)। তেলেঙ্গানার রাজধানী। একসময় ছিল অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যে।
দক্ষিণ ভারতের ঐতিহাসিক এই শহরে আছে বেশ কয়েকটি বেড়ানোর জায়গা। প্রাসাদ, দুর্গ, হ্রদ। মেলবন্ধন ঘটেছে পুরানো এবং নতুনের। সুপ্রাচীন শহরটি প্রসিদ্ধ উন্নত সংস্কৃতি এবং জিভে জল আনা খাবারের জন্যও। বরাবরই শিল্প, সাহিত্য ও সংগীতের পৃষ্টপোষকতা করে এসেছে এই হাই-টেক শহর। দর্শনীয় স্থান কী কী আছে?

চারমিনার
চারমিনার হায়দরাবাদের (Hyderabad) আইকনিক সিম্বল। শহরের অন্যতম বিখ্যাত পর্যটক কেন্দ্র। দেশবিদেশের বহু মানুষ দেখার জন্য আসেন। স্মৃতিস্তম্ভটি ১৫৯১ সালে কুলি কুতুব শাহ তৈরি করেন। চারমিনার স্তম্ভকে ‘প্রাচ্যের আর্ক ডি ট্রায়ম্ফ’ও বলা হয়। ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য শৈলীতে তৈরি। উপরের তলায় আছে মসজিদ। সন্ধ্যার পর আলো ঝলমল করে।

হুসেন সাগর হ্রদ
হুসেন সাগর দরদ হ্রদ বা ট্যাঙ্ক বন্ধ হায়দরাবাদের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ। এটা হায়দরাবাদকে সেকেন্দ্রাবাদের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। প্রধান আকর্ষণ হ্রদের মাঝখানে ৩৫০ টন ওজনের ১৮ মিটার-উচ্চ সাদা গ্রানাইট বুদ্ধমূর্তি। সন্ধে নামলেই শুরু হয় আলোর খেলা।

চৌমহাল্লা প্রাসাদ
হায়দরাবাদের (Hyderabad) অন্যতম প্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক পর্যটন স্থান। এই প্রাসাদ ছিল নিজাম শাসনের পীঠস্থান। জানা যায়, চৌমহল্লা প্রাসাদের স্থাপত্যটি ইরানের শাহের প্রাসাদ থেকে অনুপ্রাণিত। এ ছাড়াও পারস্য, ইউরোপীয়, রাজস্থানী-সহ অনেক স্থাপত্য শৈলীর প্রভাবও রয়েছে। আছে দুটি বিশাল উঠোন, বাগান। শোভা বাড়িয়েছে ফোয়ারা। আছে চারটি প্রাসাদ। সেগুলো পরিচিত আফজাল মহল, আফতাব মহল, মাহতাব মহল এবং তাহনিয়াত মহল নামে। খিলওয়াত বা দরবারের স্থাপত্য শৈলী এককথায় অসাধারণ। এখানে একটি নকশা করা স্তম্ভবিশিষ্ট হল রয়েছে। একসময় সেখানে বসত নিজামদের রাজদরবার। রাজকীয় আসন বা তখত-ই-নিশান আজও এই হলটিতে বর্তমান।

গোলকুণ্ডা ফোর্ট
এটা গোলাকার আকৃতির একটি দুর্গ। অন্যতম দর্শনীয় স্থান। দুর্গটির অবস্থান ৩০০ ফুট গ্রানাইট পাহাড়ের উপর। প্রায় ১১ কিমি জুড়ে বিস্তৃত। উচ্চতা প্রায় ১৮ ফুট। তৈরি করেছিলেন কুতুবশাহি রাজারা। আটটি দরজা এবং ৮৭টি বুরুজ। অসাধারণ কারুকাজ। এককথায় চিত্তাকর্ষক। গোলকুণ্ডা ফোর্ট-এর চূড়া থেকে সূর্যাস্ত দেখতে দারুণ লাগে।

সালার জং জাদুঘর
হায়দরাবাদের (Hyderabad) সালার জং জাদুঘরটি দেখার মতো। এখানে রয়েছে বিশ্বের প্রাচীন সামগ্রী এবং শিল্পের বৃহত্তম সংগ্রহ। সংগ্রহটি সালার জং পরিবারের তিন প্রজন্মের তৈরি। এঁরা নিজামের প্রধানমন্ত্রীর গুরু দায়িত্ব পালন করেছিলেন। মোট ৪০টি গ্যালারি। প্রায় ১০ একর জুড়ে বিস্তৃত। জাদুঘরে সুরক্ষিত আছে ৯০০০ পাণ্ডুলিপি, ৪৩০০০ শিল্পসামগ্রী এবং ৪৭০০০ মুদ্রিত বই। আছে বেশকিছু পেইন্টিং, ভাস্কর্য, খোদাই। সোনা এবং রূপা দিয়ে লেখা কুরআন নামে একটি বিখ্যাত কুরআন সংগ্রহও রয়েছে। আছে উনিশ শতকের ব্রিটিশ ব্র্যাকেট ঘড়ি। ঘড়িতে ছোট ছোট যান্ত্রিক ছবি রয়েছে। আর একটি আকর্ষণীয় জিনিস রেবেকার ঘোমটাযুক্ত মার্বেল মূর্তি। তৈরি করেছিলেন ইতালীয় ভাস্কর জিওভানি মারিয়া বেনজোনি। এ ছাড়াও জাদুঘরে আছে ফ্রান্সের ষোড়শ লুই মহীশূরের টিপু সুলতানকে উপহার দেওয়া হাতির দাঁতের চেয়ারের একটি সেট, সালার জংদের ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র, ভিন্ন ভিন্ন সভ্যতার নিদর্শনের এক বিপুল সংগ্রহশালা। ১৯৫১ সালে দেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত করেন।

আরও পড়ুন-দিঘায় এবার বিদেশের আদলে হবে সমুদ্রের নিচে পার্ক

কুতুব শাহি সমাধি
অন্যতম ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান। এটা সাত কুতুবশাহি রাজার কবরস্থান, যাঁরা প্রায় ১৭০ বছর গোলকুণ্ডা শাসন করেছিলেন। দেখা যায় ফার্সি এবং ভারতীয় স্থাপত্যের সংমিশ্রণ। উঁচু মঞ্চের উপর তৈরি সমাধিগুলি ধূসর গ্রানাইট দিয়ে তৈরি। দেওয়ালে রয়েছে সুন্দর নকশা। সমাধি ঘিরে রয়েছে চমৎকার বাগান। নাম ইব্রাহিম বাগ। এখানে অনেকেই পিকনিক করতে আসেন। আয়োজিত হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, উৎসব।

বিড়লা বিজ্ঞান জাদুঘর
হায়দরাবাদে আছে বিড়লা বিজ্ঞান জাদুঘর। ছাত্রছাত্রীদের অবশ্যই দেখা উচিত। এখানে আছে গ্রহমণ্ডল, বিজ্ঞানকেন্দ্র, আর্ট গ্যালারি এবং ডাইনোসরিয়াম। এ ছাড়াও আছে একটি প্রত্নতত্ত্ব এবং পুতুল জাদুঘর। কর্তৃপক্ষ সমস্ত বয়সের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম এবং প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। প্ল্যানেটোরিয়ামের মহাজাগতিক উপস্থাপনা বিশ্বের অন্যতম সেরা। ব্যবহৃত হয় হাই-টেক টেলিস্কোপ।

ওয়ান্ডারলা অ্যামিউজমেন্ট পার্ক
শহরের একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এখানে সময় কাটিয়ে আনন্দ পেতে পারেন সব বয়সি। আছে বিভিন্ন ধরনের রাইড। প্রায় ৪০টি। অন্যতম আকর্ষণ ওয়াটার পার্ক। হায়দরাবাদের অন্যতম ওয়াটার পার্কগুলির মধ্যে একটি। এখানকার স্কাই হুইল দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ফেরিস হুইল। এর সাহায্যে টাওয়ারের উঁচুতে উঠে শহরের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

মক্কা মসজিদ
হায়দ্রাবাদ শহরের ঐতিহ্যবাহী একটি জামে মসজিদ। দেশের সবচেয়ে বড় মসজিদগুলোর মধ্যে একটি। মসজিদটির ইট-পাথর মক্কা থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাই এই নামকরণ। ১৬৯৪ খ্রিস্টাব্দে কুতুবশাহি বংশের পঞ্চম শাসক সুলতান মাহমুদ কুলি কুতুবশাহের রাজত্বকালে তৈরি।

রামোজি ফিল্মসিটি
হায়দরাবাদের অন্যতম দর্শনীয় স্থান। বিখ্যাত ইউনিভার্সাল স্টুডিওর আদলে তৈরি এই ফিল্মসিটি। এখানে বিভিন্ন ধরনের শ্যুটিং স্পট রয়েছে। বহু সিনেমা এবং সিরিয়ালের শুটিং হয়। সময় নিয়ে ঘুরে দেখা যায়।

যতই বেড়ান, বিরিয়ানির স্বর্গীয় স্বাদ ছাড়া হায়দরাবাদ ভ্রমণ অসম্পূর্ণ। এখানকার দম-বিরিয়ানি স্বাদে-গন্ধে অতুলনীয়। ঘি-মিশ্রিত মাটন হালিম এবং কিমা সামোসাও ভোজনরসিকদের প্রিয়। পাশাপাশি ওসমানিয়া বিস্কুট এবং মিষ্টি কুকি-সহ ইরানি-চা এককথায় লা-জবাব। পাওয়া যায় নানা রকমের মিষ্টি। তার মধ্যে সেরা ফিরনি। চেখে না দেখলে ট্যুর আলোনা।
কেনাকাটার ইচ্ছে থাকলে ঘুরে আসতে পারেন আবিদস স্ট্রিট, বেগম বাজার, লাড বাজার, নামপল্লি মার্কেট, এমজি রোড। হায়দরাবাদের প্রতিটি বাজারের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং বিশেষত্ব রয়েছে। কোথাও পাওয়া যায় খাবার জিনিস। কোথাও পোশাক, গহনা, সাজগোজের জিনিস, কোথাও সুগন্ধী।
দিন সাতেক সময় নিয়ে দলবেঁধে ঘুরে আসুন এই ঐতিহাসিক শহর। ঘুরতে ঘুরতে মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভাললাগা জন্ম নেবে।

Latest article