অ্যাডিলেড, ১০ নভেম্বর : বাটলার আর হেলস যখন ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ ফাইনালের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন, তখন অ্যাডিলেডের আকাশে সূর্যাস্তের লাল আভা। একটু একটু করে দিন ফুরিয়ে আসছে। একটা নতুন দিনের অপেক্ষা। সেখানে কোথাও রোহিত-বিরাটদের দেখা যাচ্ছে না!
বিশ্বকাপে আর কোথাও মেন ইন ব্লু নেই। একটা স্বপ্নের অপমৃত্যু ঘটে গেল অ্যাডিলেড ওভালে। সেই স্বপ্ন, যা বুকের মধ্যে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলেন রোহিত শর্মারা। পারথে বহু আগে এসে প্রস্তুতি। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে হারানো। সবই এখন অতীত। শুধু দিনের শেষে নাসের হুসেনই ঠিক। তিনি এই ম্যাচের আগে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, আইসিসি টুর্নামেন্টে ভারতের পারফরম্যান্স খুব সাধারণ। যাদের ২০১৩-র পর আইসিসি টুর্নামেন্টে কোনও সাফল্য নেই। নয় গড়িয়ে অপেক্ষা দশে পা দেওয়ার।
আরও পড়ুন-ভোটার তালিকায় নাম তোলা, সংশোধন শুরু
টুর্নামেন্টে এক নম্বর ফেভারিট বলা হচ্ছিল ভারতকে। কিন্তু ট্র্যাডিশন বজায় রেখে খালি হাতে দেশে ফিরছেন রোহিতরা। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডও এই বিশ্বকাপে ব্যর্থ, কিন্তু ইংল্যান্ডের কাছে এমন শোচনীয় হারের কোনও ব্যখ্যা হয় না। দাঁড়িয়ে হারলেন রোহিতরা। ১০ উইকেটে। ৪ ওভার বাকি থাকতেই। রেকর্ড পার্টনারশিপ খেলে দলকে ফাইনালে তুলে নিয়ে গেলেন দুই ওপেনার জস বাটলার (৮০ নট আউট) আর অ্যালেক্স হেলস ৮৬ নট আউট)। শেষদিকে ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে হার্দিক তাও ভারতকে ১৬৮-৬-এ পৌঁছে দেন। কিন্তু বোলাররা তাঁর এই লড়াইয়ে যে বিন্দুমাত্র অনুপ্রাণিত হননি, তার প্রমাণ মিলল ইংল্যান্ড ইনিংসে। ভুবনেশ্বর কুমার দুই ওভারে ২৫ রান দিয়ে শুরু করেছিলেন। বাকিরা তাতে তাল মিলিয়ে গেলেন! ফল হল ১৬ ওভারেই গো-হারান হার! অ্যাডিলেডে দিনের শেষে জস-ই বস থেকে গেলেন।
আরও পড়ুন-বাড়ছে আরও ১০ শয্যা, চলতি মাসেই চালু হচ্ছে হাইব্রিড সিসিইউ, অত্যাধুনিক পরিষেবা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে
অনেক প্রশ্ন উঠছে। যার জবাব রাহুল দ্রাবিড় দেবেন কি না জানা নেই। যেমন যুজবেন্দ্র চাহালকে ক্রিকেট পর্যটক হিসাবে অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার মানে কী ছিল, যদি কোনও ম্যাচ না-ই খেলাবেন! অ্যাডিলেডের মতো মাঠে চাহালের মতো রিস্ট স্পিনারকে দরকার ছিল। যাঁকে ব্যাটাররা ঝুঁকি নিয়ে মারতে যাবেন। উইকেটও আসতে পারে তাতে। ক্রিকেটে যাকে উইকেট পারচেজ করা বলা হয়। যখন উইকেট পড়ছে না, তখন এটা চলে। ইংল্যান্ড ঠিক এই কারণেই আদিল রশিদকে খেলিয়েছে। আরও আছে। যদি টিম ম্যানেজমেন্টের ঋষভের উপর এতই আস্থা, তাহলে সেমিফাইনাল থেকে তাঁকে খেলানো শুরু কেন? ঋষভকে শুরু থেকে খেলিয়ে উইকেট-পরিবেশের সঙ্গে সড়গড় করে নেওয়া যেত। তাছাড়া ফিনিশার বলে ৩৭-এও যাঁকে বিশ্বকাপ খেলতে নিয়ে যাওয়া হল, সেই কার্তিকের উপর হঠাৎ আস্থা ছুটে গেল কেন, সেটাও একটা প্রশ্ন। এরপর কে এল রাহুল। যিনি আবার ব্যর্থ হলেন বৃহস্পতিবারের ম্যাচে। টিম ম্যানেজমেন্ট নামের পিছনে ছুটতে গিয়ে চূড়ান্ত অফ ফর্মে থাকা রাহুলকে বাদ দিতে পারেনি। অথচ, রোহিতের সঙ্গে শুরুতে বিরাটকে এনে মিডল অর্ডারে দীপক হুদাকে আরও সুযোগ দেওয়া যেত। কেন ছোট ফরম্যাটে ব্রাত্য হয়ে যাওয়া রবিচন্দ্রন অশ্বিন চাহালেরও আগে থাকছেন, কে তার জবাব দেবে?
আরও পড়ুন-খাড়গের উল্টো সুর গেহলটের
অ্যাডিলেডের সাইড বাউন্ডারি নিয়ে প্রচুর চর্চা হয়। দু’পাশের বাউন্ডারি বেশ ছোট। এটা ব্যাটারদের জন্য সুবিধা, আবার অসুবিধাও। সূর্যকুমার যাদব (১৪) যেমন। কভার আর পয়েন্টের মধ্যে দিয়ে থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি শট নিয়েছিলেন। বাউন্ডারি ছোট ভেবে আদিল রশিদের বলে এই শটটা নিতে গিয়েছিলেন। উঁচু ক্যাচ সোজা চলে গেল সোজা ফিলিপ সল্টের হাতে। সল্ট এই ম্যাচে দাভিড মালানের জায়গায় খেললেন। আর মার্ক উডের জায়গা নেন ক্রিস জর্ডন।
আরও পড়ুন-খেরসন থেকে সরছে রুশ সেনা
বাটলার টসে জিতে ভারতকে আগে ব্যাট করতে দিয়েছিলেন এটা ভেবে যে, আগে বল করে এই উইকেট থেকে যদি সুবিধা আদায় করা যায়। কিন্তু অ্যাডিলেড ওভালের উইকেটে এত বেশি ম্যাচ হয়েছে যে এই উইকেটে আর বোলারদের জন্য কিছু নেই। তবু ৯ রানে প্রথম উইকেট তুলে নিয়েছিল ইংল্যান্ড। রাহুল (৫) ক্রিস ওকসের শর্ট বলে উইকেট দিয়ে গেলেন। গোটা দুয়েক পঞ্চাশ ছাড়া খুব সাদামাটা টুর্নামেন্ট রোহিত শর্মার ডেপুটির। এরপর রোহিতও ফিরে গেলেন ২৮ বলে ২৭ করে। ভারতের রান তখন ৫৬। রোহিত তাঁর এই ইনিংসে গোটা চারেক বাউন্ডারি মেরেছেন। কিন্তু তাঁকে দেখে কখনও মনে হয়নি ছন্দে আছেন। অল্পের জন্য কয়েকবার রক্ষা পেয়েছেন তিনি। কিন্তু এরপরও ভারত ১৬৮-৫ করতে পেরেছে বিরাট ও হার্দিকের সৌজন্যে। দু’জনের জুটিতে উঠে এসেছে ৬১ রান।
আরও পড়ুন-কর্মীদের নিয়ে বুথভিত্তিক আলোচনা শুরু তৃণমূলের পঞ্চায়েত ভোট
আসলে ভারতের ইনিংসে আসল খেলাটা অপেক্ষা করে ছিল এরপর। যেটা খেললেন হার্দিক পাণ্ডিয়া। তার আগে বিরাট কোহলির কথাও বলতে হয়। ৪০ বলে ৫০ রান করে গেলেন। এবারের বিশ্বকাপে এটা বিরাটের চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি। কিন্তু বলের কথা এখানে আসছে না। তিনি খেললেন দলের কথা ভেবে। যখন উল্টোদিকে রোহিত ছিলেন, তাঁর চাপ কমিয়ে দিতে নিজে কয়েকটা বড় শট খেললেন। কিন্তু রোহিত ফিরে যাওয়ার পর বিরাট বুঝলেন, বোর্ডে রান নেই। তাঁকে একটা দিক আগলে খেলতে হবে। তিনি সেটাই করলেন হার্দিককে স্ট্রাইক ছেড়ে দিয়ে। বাকিটা ছিল হার্দিকের পালা। শেষ বলে হিট উইকেট হওয়ার আগে ৩৩ বলে ৬৩। চারটি বাউন্ডারি, পাঁচটি ছক্কা। ভারতের রানটা শেষ চার ওভারেই উঠল। না হলে পাওয়ার প্লে-তে ৩৬ রানের বেশি তুলতে পারেনি ভারত। ইংল্যান্ড যেখানে তুলে ফেলেছিল ৬৩ রান। চাপটা তৈরি হয়েছিল তখনই। ম্যাচের ভাগ্য তখনই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল।