হাউস হাজব্যান্ড, সোনার পাথরবাটি?

ছেলেরা বিয়ে করে, মেয়েদের বিয়ে হয়। এমনটাই ধারা। এমনটাই ধরন। অন্তত এদেশে। ব্যতিক্রম থাকলেও তা নিয়মকেই প্রমাণ করে। ‘অর্ধেক আকাশ’-এর মর্যাদা পেতেই মেয়েরা পার করেছে কয়েক প্রজন্ম! কিন্তু কন্যা-জায়া-জননী’র ছায়ায় সেই অর্ধেকে মেঘাচ্ছন্ন নিজের ‘নারী’ পরিচয়। দিন বদলাচ্ছে, কাল পাল্টাচ্ছে। মেঘ সরছে। আর তারই ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে এক নতুন শব্দবন্ধ, ‘হাউস হাজব্যান্ড’! ব্যাপারটা কী? বোঝার চেষ্টা করলেন প্রীতিকণা পালরায়

Must read

জানলার কাঁচে বাতাস ধাক্কা দিচ্ছে
হন্যে বাতাস পাল্টে দেবার ইচ্ছে…
হ্যাঁ, কিছু জানলা খুব কষে বন্ধ থাকে! আমাদের মনের মধ্যেকার অনেক জানলা তেমনই। বিশেষত ‘গ্রহণ’ এবং ‘বর্জন’-এর। আমরা, সার্বিকভাবেই, চট করে কিছু গ্রহণ কিংবা বর্জন করতে পারি না। কারণ আমরা প্রাণী জগতের সবচেয়ে মজবুত মস্তিষ্কওয়ালা প্রাণী! আমরা বিচার করি, বিবেচনা করি, আলোচনা করি। সবচেয়ে বেশি করি, সমালোচনা! যেহেতু ব্যক্তিই সমাজ গঠন করে, তাই এতগুলো ‘সামাজিক’ হার্ডল টপকে নতুন কোনও ভাবনা, ব্যতিক্রমী কিছু পদক্ষেপ সব সময়ই সময়সাপেক্ষ হয়ে যায়। পাল্টে দেবার হন্যে ইচ্ছেটা যারা এই ধৈর্যের পরীক্ষায় হারিয়ে ফেলেন তাঁরা থমকেই থাকেন কিন্তু কিছুজন আছেন যাঁরা ইচ্ছেটা জিইয়ে রাখেন, চেষ্টাটা জারি রাখেন। নিজে ভাবেন। অন্যকেও ভাবানোর চেষ্টা করেন। এঁদেরই একজন হলেন জয়রূপ মল্লিক। ‘হাউস হাজব্যান্ড’ সম্পর্কিত ভাবনাটা সম্প্রতি তিনিই উসকে দিয়েছেন। তাই আজ, ‘আন্তর্জাতিক পুরুষদিবস’ উপলক্ষে লেখার কথা ভাবতে গিয়ে মনে পড়ল, সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা তাঁরই একটি আবেদন। তিনি বিবাহযোগ্য একজন পুরুষ। ‘হাউস হাজব্যান্ড’ হতে চান। তাই চাকরিরতা কোনও মহিলা যদি ইচ্ছুক হন, তাঁকে বিয়ে করতে চান। এই আবেদন জানিয়েই পোস্টটি করেছিলেন জয়রূপ। অর্থাৎ সাবেক যে সমাজব্যবস্থা শুধুই ‘হাউস ওয়াইফ’ চেনে, তিনি উল্টো ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে চান। দায়িত্ব নিতে চান গৃহকর্মের। যত্নে করতে চান সংসার। কী ভাবছেন, জয়রূপ একজন বেকার যুবক? না, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী। বর্তমানে পোস্টেড মুম্বই শহরে। তাই ঠিক যে ভাবনাটা মনের কোণে প্রথমেই উঁকি মারে যে, আর্থিক নিরাপত্তার কারণেই তিনি এমনটা ভেবেছেন, তা নয়। তাঁর প্রাথমিক ভাবনা, ‘জেন্ডার বায়াসনেস’-এর বিষয়টা নিয়ে সবাই যখন সবদিকেই এত সোচ্চার হচ্ছেন, তবে এক্ষেত্রে নয় কেন? মেয়েরাও বিয়ে করুক। ছেলেদেরও বিয়ে হোক! সামাজিক ডিকশনারিতে চালু শব্দ হয়ে উঠুক ‘হাউস হাজব্যান্ড’!

আরও পড়ুন-মাইথনে নৌকার জোগান দিচ্ছেন তৃণমূল বিধায়ক

পাল্টায় মন, পাল্টায় চারপাশ
রাস্তায় আসে নতুন রুটের বাস…
আধুনিকতাও এখন আর ‘লোকাল’ নয়, আর সবকিছুর মতোই ‘গ্লোবাল’। পৃথিবীটা ছোট হতে হতে যখন মুঠোফোনে বন্দি, তখন তার প্রভাব আমাদের পোশাক-আশাক, আচার-আচরণ, কথাবার্তা, জীবন-যাপন সব ক্ষেত্রে পড়বে তা স্বাভাবিক। আর এই পশ্চিমি ঝঞ্ঝার প্রভাব প্রতি প্রজন্মে উত্তরোত্তর বাড়ছে! তার ইতিবাচক-নেতিবাচক দিক নিয়ে বিতর্ক সরিয়ে যেটা বলা যায়, মন পাল্টাচ্ছে, চারপাশ পাল্টাচ্ছে। ‘বিবাহ’ সম্পর্কিত জাত-পাত-ধর্মের গোঁড়ামি অনেকটাই জয় করেছে সমাজ। লিভ-ইন এখন ইন থিং। লুকিয়ে নয়, বাড়িতে জানিয়েই ছেলে-বন্ধু বা বন্ধুনীর সঙ্গে বাইরে বেড়াতে যাচ্ছেন এই প্রজন্ম। সমকামিতা গোপনীয়তা বা নাক সিটকোনোর সাবজেক্ট নয় আর। আর এগুলোই আশা জুগিয়েছে জয়রূপকে। জয়রূপ বললেন, “আমি খুব বৈপ্লবিক কিছু কিন্তু বলিনি। একটা সময় যখন মেয়েরা পড়াশোনায় পিছিয়ে ছিল, কিংবা পর্দানসীন ছিল, অন্দরমহলই ছিল তাদের একমাত্র বিচরণের জায়গা। তাদের দায়িত্ব পুরুষদেরই নিতে হত। কিন্তু মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়ার ভাবনাটা আজ সর্বস্তরে স্বীকৃত। সামাজিক পরিকাঠামো বদলানোয় এখন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির যুগ। একমাত্র সন্তান কন্যা হলে তারাই দায়িত্ব নেয় বাবা-মায়ের। একইভাবে কর্মজগতেও তারা উচ্চপদাধিকারীর দায়িত্ব পালন করে অনায়াসে। শিক্ষা চেতনা আনে আর চেতনা দায়িত্ব নিতে শেখায়। তাই মেয়েরা যখন সবদিক থেকেই এগিয়ে চলেছে তখন বিয়ে মানে তা শুধুই ছেলেদের দায়িত্ব, আজকের দিনে এমন ভাবাটা মোটেই ঠিক নয়।”

আরও পড়ুন-সাংসদ তহবিলের টাকা দিয়েছিলেন কুণাল, তবুও অসম্পূর্ণ অডিটোরিয়াম

অর্থাৎ সামাজিক বিয়ের অন্যতম আচার, ‘ভাত-কাপড়’-এর দায়িত্ব সাবেকভাবে যে পুরুষরাই নিয়ে এসেছে, এখনও, এই আধুনিকতার বাড়-বাড়ন্তের মধ্যেও তেমনটাই প্রচলিত প্রথা, সেটাই জয়রূপ ভাঙতে চাইছেন। অর্থাৎ চাইছেন, ‘রোল-রিভার্সাল’ হোক? বিয়ে সেরে শ্বশুরবাড়ি গেলেও ভাত এবং কাপড়ের থালাটা পরদিন স্ত্রীই তুলে দিক স্বামীর হাতে এবং অঙ্গীকার করুক দায়িত্বের? জয়রূপ বললেন, “ব্যাপারটা যতটা না অঙ্গীকারের তার চেয়েও অনেক বেশি বিশ্বাসের। প্রথা-ভাঙার বিশ্বাস। নিজে কুণ্ঠিত বা অহংকারী কোনওটাই না হওয়ার বিশ্বাস। সর্বোপরি চারপাশের টীকাটিপ্পনিগুলো ডজ করার বিশ্বাস। বাইরের দেশে সাবালক হওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তো ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে নিজের দায়িত্ব নিজে নিতে শুরু করে। পরিবারের দায়িত্বও নেয় ধীরে ধীরে। সম্পর্ক বা বিয়ের ক্ষেত্রেও মেয়েরা বাইরে রোজগারে গেলে অনায়াসে ছেলেরা ‘হাউসহোল্ড’ সামলায়। ওই সংসার সুখের হয় রমণীর গুণে, টাইপ থিওরি বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার মতোই ছুঁড়ে ফেলার সময় হয়ে গেছে তাই। সংসার পুরুষের গুণেও সুখের হয়ে উঠতেই পারে।” অর্থাৎ, গন্তব্য এক, রুট নতুন!

আরও পড়ুন-আজ ব্যাঙ্ক ধর্মঘট

অন্য বাতাস নিয়ত পাল্টে দিচ্ছে
এমন কি সব পাল্টে যাবার ইচ্ছে
‘পুরুষ’ শব্দটার সঙ্গে কর্ণের কবচ-কুণ্ডলের মতোই যা একাত্ম তা হল, অহং, ইগো। ছোট্ট থেকে ভারতীয় সমাজ তাকে শেখায়, তুমি সুপিরিয়র।
তুমি সোনার আংটি। বাঁকা-ট্যারা-তেরচা যাই হও না সর্বংসহা ধরিত্রীর মতো তোমায় ধারণ করতে বাধ্য নারী। আর শুধুমাত্র ‘পুরুষ’ হওয়ার কারণেই তুমি লক্ষ্মীমন্ত স্ত্রী পাওয়ার দাবিদার। তাকে দাবিয়ে রাখার দাবিদার। কারণ তোমার অর্জিত অর্থে সে প্রতিপালিত। অতএব সে তোমার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যেই পড়ে! সে তোমার সেবা করবে। তোমার যত্ন করবে। তোমাকে খুশি করবে। তোমাকে মেনে নেবে। এবং, তোমাকে মানিয়ে নেবে! এই এতগুলো সুবিধে তুমি ঈশ্বরপ্রদত্ত ভাবে পেতে পারো! কারণ ওই একটাই, তুমি পুরুষ! এবার এই বিশ্বাসের ঝুরি তো মাটিতে পৌঁছে ফের মহীরুহ হয়েছে। বিশ্বাসের কচি চারা বপন কি অতই সোজা? জয়রূপ আরও একটা দিক দেখালেন। “শুধুমাত্র ছেলেদের অহং বা ইগোই নয়, বাধা মেয়েদের মনেও সমানভাবে। ছেলেরা অনেকেই যেমন গৃহকর্ম করাটাকে পৌরুষের পরিপন্থী মনে করে, তেমন মেয়েরাও এটা মানতে কুণ্ঠিত হয় যে, তার স্বামী একজন হোম-মেকার! এমন নয় যে স্বামী রোজগার করে না বা বেকার। কিন্তু তার কাজের ধরন আলাদা। কোভিড-কাল আমাদের ওয়ার্ক-ফ্রম-হোম খুব কাছ থেকে চেনালেও, স্বামী পদস্থ চাকুরে বা ব্যস্ত ব্যবসাদার, এটা ভাবতেই শ্লাঘা বোধ করে বেশিরভাগ মেয়ে। উল্টোটা হাতেগোনা। এছাড়া, এতকাল যে ছেলেরা অনায়াসে একজন ‘বেকার’ মেয়েকে বিয়ে করে এসেছে, এখন কিন্তু একজন ওয়ার্কিং মেয়ে সেই অনায়াসে একজন ‘বেকার’ ছেলেকে বিয়ে করার কথা ভাবতেই পারে না! আরও ভালভাবে বললে ভাববেই না। তাহলে তো আজকের বেকারত্বের যুগে অনেক ছেলেও নতুনভাবে বাঁচতে পারত, সুযোগ পেত নিজের মতো করে কিছু করার। তা কিন্তু হয় না। আমার স্বামী ‘হাউস-হাজব্যান্ড’ একথাটা আত্মবিশ্বাসীভাবে বলার মতো মেয়েই বা কোথায়? নেই-ই প্রায়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই বলি, তখন আমি চাকরি পাইনি। চেষ্টা চালাচ্ছি। কিন্তু যে মেয়েটির সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সে আগেই চাকরি পেয়ে গিয়েছিল। বলেছিলাম, চলো, বিয়ে করে নিই। সে কিন্তু পারেনি একজন ‘বেকার’ প্রেমিককে ‘স্বামী’র মর্যাদা দিতে! তার দায়িত্ব নিতে। এরকম শুধু আমার ক্ষেত্রেই নয়। আরও অনেকের অভিজ্ঞতা। তাই যে পোস্টটা আমি করেছিলাম, তার মাধ্যমে বর্তমান সমাজের ভাবনার স্তরটা মাপতে চেয়েছিলাম। সত্যি বলতে কী, ছবিটা খুব আশাব্যঞ্জক নয়। তবে একেবারে ফেলে দেওয়ার মতোও নয়। কম হলেও পক্ষেও মতামত পেয়েছি আবার ব্যঙ্গ, হাসি-ঠাট্টাও শুনতে হয়েছ।”

আরও পড়ুন-দিনের কবিতা

প্রেম পাল্টায়, শরীরও পাল্টে যায়
ডাকছে জীবন, আয়, পাল্টাবি আয়
জয়রূপ একটা ‘এক্সপেরিমেন্ট’ করতে চেয়েছিলেন ওঁর ‘পোস্ট’টির মাধ্যমে। তিনি জানেন ‘পাল্টানো’ অত সোজা ব্যাপার নয়! জীবন যদি ডাকেও, লোকলজ্জা পায়ে বেড়ি পরায়। সে বেড়ি অদৃশ্য হলেও বড় মজবুত। তাই প্রেমগুলো পাল্টে যায়। প্রতিষ্ঠা পায় না। যেমনটা তাঁরও পায়নি। কিন্তু তাঁর স্বপ্ন হারায়নি। না, সামাজিক বিপ্লব করার স্বপ্নই নয়, আসল যে স্বপ্ন তাঁকে এভাবে ভাবতে এগিয়ে দিয়েছে, সেই স্বপ্নকে এগিয়ে নিয়ে যাবার স্বপ্ন। জয়রূপ ন্যাশনাল লেভেলের ‘ব্রিজ’ খেলোয়াড়। এই খেলার জন্য স্যাক্রিফাইস যেমন করেছেন প্রচুর, তেমন এই খেলার জন্যই ‘স্পোর্টস কোটা’য় চাকরিও পেয়েছেন। সকলের খুব স্বচ্ছ ধারণা নেই এই খেলাটি নিয়ে। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের পারফরম্যান্স বেশ ভাল। এমনকী এই খেলায় নিশ্চিন্তের একটা কেরিয়ারও বানানো যায়। জয়রূপ সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করতে চান তাই প্র্যাকটিসে। জীবন হাতছানি দেয় পাল্টে যেতে, জয়রূপ পুরনো ভুলে নতুন ভালবাসার সংসার গড়তে চান। স্বপ্ন পূরণে চাকরিও বাজি রাখতে চান। কিন্তু আদতে হাওড়ার শিবপুরের বাসিন্দা ছেলেটি নিজের বাবা-মায়ের ভবিষ্যৎ তো বাজি রাখতে পারেন না। তাই খুঁজছেন সমমনস্ক জীবনসঙ্গী। সে চাকরি করুক। আর জয়রূপ হবেন, ‘হাউস হাজব্যান্ড’।

আরও পড়ুন-গারো, খাসি ভাষাকে কেন সাংবিধানিক মর্যাদা নয়? মেঘালয়ে প্রশ্ন অভিষেকের

‘হাউস হাজব্যান্ড’ কনসেপ্টটা নিয়ে ব্যক্তিগতভাবে কোনও ট্যাবু নেই। তবে আমাদের সোসাইটিতে এটা চালু হওয়ার খুব আশা আছে বলে মনে করি না। মেল-ডমিনেটেড সোসাইটি আমাদের। হাজব্যান্ড-ওয়াইফ দু’জনেই ওয়ার্কিং হলেও হাউসহোল্ড জবের দায়িত্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মেয়েটিকেই নিতে হয়। এমনটাই যেন হওয়ার কথা! তাই ‘ইগো’ ঝেড়ে ফেলে ‘হাউস হাজব্যান্ড’ হওয়ার মতো মানসিকতা কতজন ছেলের হবে খুব ডাউটফুল আমি। হয়তো হবে। কিন্তু অনেক সময়সাপেক্ষ সেটা। হোপফুল হওয়া ভাল যেকোনও ক্ষেত্রেই। সেম-সেক্স রিলেশনশিপ যেমন এতদিন বাদে অ্যাক্সেপ্টেড হচ্ছে, তেমন এক সময় ‘হাউস-হাজব্যান্ড’ কনসেপ্টকেও স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে সবাই, সেটাও হতেই পারে।
অলক্তিকা রায়
১ম বর্ষ, শ্রী শিক্ষায়তন কলেজ

আমি এটাকে কোনও ওপিনিয়ন বা অপশন হিসেবে দেখছিই না। এটা একেবারেই পার্সোনাল চয়েসের ব্যাপার। দু’জন মানুষ যারা একসঙ্গে থাকবে ঠিক করছে, তাদের নিজস্ব আন্ডারস্ট্যান্ডিং-এর ব্যাপার। আমি ব্যক্তিগতভাবে কাউকে জোর দিয়ে যেমন বলতে পারি না সে চাকরি করবে না, বাড়ির দায়িত্ব পালন করবে। তেমন আমাকেও কেউ ফোর্স করতে পারে না আমি কোনটা করব। যেটা আমি চাইব সেই জীবনটাই বেছে নেব। তবে হ্যাঁ, সমাজের তৈরি করা কিছু সেট-রুল আছে যে, এগুলো ছেলেরা করে, ওগুলো মেয়েরা। এই ডিভিশনটা ভেঙে দেওয়াটা খুব জরুরি। কিন্তু আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে সেটা অত সহজ হবে না। সময় লাগবে।

আরও পড়ুন-বারুইপুরে মিলল প্রাক্তন নৌসেনার অর্ধেক দেহ

অস্মি মৌলিক
১ম বর্ষ, এমইউসি উইমেনস কলেজ

‘হাউস হাজব্যান্ড’ ভাবনাটা আমার অ্যাকসেপ্ট করতে কোথাও অসুবিধে নেই। কেনই বা থাকবে। একজন মেয়ে যদি ঘর ও বাইরে, দু’দিকটাই সামলাতে পারে, একজন ছেলেও পারবে। প্রথাগত হয়তো নয় আমাদের সোসাইটিতে কিন্তু প্রথা তো অনেক কিছুতেই ভাঙছে। তবে ইগো ক্ল্যাশ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। কারণ কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক প্রভাব আমরা অস্বীকার করতে পারি না। সেক্ষেত্রে নিজেদের বোঝাপড়াটা খুব ভাইটাল রোল প্লে করে। নিজেদের আত্মবিশ্বাসী থাকাটা জরুরি। আমরা যাই করি বিশ্বাসের সঙ্গে, গর্বের সঙ্গে করাটা খুব জরুরি। কে কী বলল নয়, নিজেরা কী ভাবছি এটা ক্লিয়ার থাকলেই কাজটা সহজ হয়ে যায় অনেক। নয়তো এই কনসেপ্টও আরও অনেক কিছুর মতোই সোশ্যাল মিডিয়া ট্রেন্ডিং হয়েই থেকে যাবে।

আরও পড়ুন-এসএসকেএম-এর অগ্নিকাণ্ডের তদন্তে ৫ সদস্যের দল গঠন স্বাস্থ্যদফতরের

দীপস্মিতা চক্রবর্তী
২য় বর্ষ, ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট

‘হাউস হাজব্যান্ড’ কনসেপ্টটা আজকের দিনে খুব আনকমন কিছু নয়। বিদেশে বহুদিন ধরেই এটা অ্যাক্সেপ্টেড। তাই সিনেমা বা বইয়ের মাধ্যমে বেশ পরিচিত এদেশেও। দু’জন ছেলেমেয়ে যদি একইভাবে ভাবে, তবে আপত্তি থাকার তো কথা নয়। সমস্যাটা তৈরি হয় আশপাশ থেকে। কে কী বলবে, কী ভাববে এটা অনেক সময় বড় হয়ে ওঠে আমাদের কাছে। তার প্রভাব পড়ে। তাই ব্যাপারটা নিজেরা মেনে নিতে পারলেও অনেকে পিছিয়ে যায়। তবে হ্যাঁ, একজন ছেলে তার চিরাচরিত ‘মেল ইগো’ ঝেড়ে ফেলে, রান্নাবান্না করছে, বাসন ধুচ্ছে, গান গেয়ে ছেলেমেয়েকে ঘুম পাড়াচ্ছে ডেইলি বেসিসে, এটা ভাবতে একটু কঠিনই লাগে, আজকের দিনেও! তবে জেন্ডার-বায়াসনেস-এর ঊর্ধ্বে উঠে এভাবে ভাবতে পারলে নিশ্চিতভাবে সেটা খুবই ভাল ব্যাপার।

কস্তুরি চক্রবর্তী
গবেষক

Latest article