দোহা, ২২ নভেম্বর : এ যেন আরব্য রজনীকেও হার মানায়! কাতার বিশ্বকাপের সবথেকে বড় অঘটনটা সম্ভবত ঘটে গেল মঙ্গলবার। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে দিল সৌদি আরব। প্রথমার্ধেই নাটকীয়ভাবে আর্জেন্টিনার তিন-তিনটে গোল বাতিল হল অফসাইডের কারণে! একটি লিওনেল মেসির ও বাকি দু’টি লাওতারো মার্টিনেজের।
আরও পড়ুন-আমতায় ভাঙন রুখতে ১৫ কোটি
কথায় বলে ‘মর্নিং শোজ দ্য ডে’। কিন্তু তা এই ম্যাচে ভুল বলে প্রমাণিত হল। ম্যাচের ১০ মিনিটেই পেনাল্টি থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন মেসি। এগিয়ে যাওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের দেশকে রীতিমতো চেপে ধরেছিলেন মেসিরা। ২২ মিনিটে মেসির গোল অফসাইডের জন্য বাতিল। পাঁচ মিনিট পরেই ফের মার্টিনেজের গোল একই কারণে বাতিল হয়। তখনও নাটক বাকি ছিল। ৩৪ মিনিটে মেসির পাস থেকে ফের সৌদির জালে বল জড়িয়েছিলেন মার্টিনেজ। কিন্তু এবারও সেই গোল বাতিল হয়ে যায় অফসাইডের কারণে। বিরতির সময় এক গোলে এগিয়ে থেকেই মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।
আরও পড়ুন-বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাতির মৃত্যু রুখতে প্রচার
দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য ছবিটা ম্যাজিকের মতোই বদলে গেল। ৪৮ মিনিটে আর্জেন্টিনার দুই ডিফেন্ডারের ভুল বোঝাবুঝির সুযোগে বল পেয়ে যান আল শেহরি। চমৎকার প্লেসিংয়ে গোল করতে ভুল করেননি তিনি। সেই ধাক্কা মেসিরা সামলে ওঠার আগেই ফের চমক। ৫৩ মিনিটে আর্জেন্টিনার রক্ষণকে বোকা বানিয়ে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের সোয়ার্ভিং শটে বল জালে জড়িয়ে দেন সালেম আল দাওসারি। এক কথায় অসাধারণ গোল।
পিছিয়ে পড়ে টনক নড়ে আর্জেন্টিনার। ম্যাচের সময় গোল শোধের মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে গেলেন মেসিরা। কিন্তু সৌদির গোলে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে গেলেন গোলরক্ষক আল ওয়াইসি। বারবার তিনি রুখে দিলেন মেসিদের যাবতীয় প্রচেষ্টা। শেষ পর্যন্ত হেরেই মাঠ ছাড়তে হল আর্জেন্টিনাকে।
আরও পড়ুন-বিরোধী দলনেতার মিথ্যাচারের জবাব, আইনি নোটিশ সুপ্রকাশের
কাপ জয়ের অন্যতম দাবিদার। কিন্তু এই হার লিওনেল স্কালোনির দলকে বেশ কিছু প্রশ্নের মুখে ফেলে দিল। কাগজে-কলমে দুর্বল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে কেমন যেন গা ছাড়া ফুটবল খেললেন মেসিরা। আত্মতুষ্টি? এখানেই শেষ নয়, সৌদির ফুটবলাররা যখনই আক্রমণ শানিয়েছে, ভীষণভাবে নড়বড়ে দেখিয়েছে আর্জেন্টিনা রক্ষণকে। এই রক্ষণ নিয়ে কিন্তু বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে সাফল্য পাওয়া কঠিন। মেসি ছন্দে ছিলেন না। চূড়ান্ত হতাশ করলেন অ্যাঞ্জেল ডি’মারিয়াও। গোটা ম্যাচে প্রায় খুঁজেই পাওয়া গেল না তাঁকে। বল পজেশনে বিপক্ষকে টেক্কা দিলেও, আর্জেন্টিনার মাঝমাঠে ক্রিয়েটিভ ফুটবলের অভাব বারবার চোখে পড়েছে।
এই ম্যাচটা দ্রুত ভুলে যেতে চাইবেন মেসি নিজেও। ‘অধরা মাধুরী’ বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন নিয়ে কাতারে পা রেখেছেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা। সৌদি ম্যাচের আগে মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে নিজেই স্বীকার করেছেন, এটাই তাঁর শেষ সুযোগ। কিন্তু প্রথম ম্যাচ হেরে স্বপ্নপূরণের পথটা কঠিন করে ফেললেন। পরের দুটো ম্যাচ কিন্তু মেসির অগ্নিপরীক্ষা।
তবে এমন দিনেও একটি ব্যক্তিগত নজির গড়েছেন মেসি। এদিনের গোলের পর প্রথম আর্জেন্টাইন ফুটবলার হিসেবে চারটি বিশ্বকাপের আসরে গোল করার রেকর্ড গড়লেন মেসি। টপকে গেলেন দিয়েগো মারাদোনা ও গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে। এঁরা দু’জনেই তিনটি করে বিশ্বকাপের আসরে গোল করেছিলেন।
আরও পড়ুন-অস্ত্র হাতে আস্ফালন পদ্মনেতা ও ভাইয়ের
১৯৯০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে ক্যামেরুনের কাছে অপ্রত্যাশিতভাবে হেরে গিয়েছিল মারাদোনার নেতৃত্বাধীন আর্জেন্টিনা। তবে সেই হারের ধাক্কা সামলে সেবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছিলেন মারাদোনারা। জার্মানির (তৎকালীন পশ্চিম জার্মানি) কাছে হেরে গেলেও, ওই বিশ্বকাপের মারাদোনার আর্জেন্টিনা অসাধারণ ফুটবল উপহার দিয়েছিল। মেসিরা কি পারবেন সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে!